গঙ্গাজলঘাটিতে তৃণমূলে দ্বন্দ্ব

দুই পোস্টারে নাম দুই অঞ্চল সভাপতির

দলে নেত্রী এক জনই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকি সবার একটাই পদ, ‘কর্মী’— শনিবার বিকেলেই দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে এই বার্তা দিয়ে জেলা ছেড়েছেন বাঁকুড়ায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর রবিবারই ‘পদ’ নিয়ে চাপানউতোর শুরু দলের দুই গোষ্ঠীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৫
Share:

দলে নেত্রী এক জনই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকি সবার একটাই পদ, ‘কর্মী’— শনিবার বিকেলেই দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে এই বার্তা দিয়ে জেলা ছেড়েছেন বাঁকুড়ায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর রবিবারই ‘পদ’ নিয়ে চাপানউতোর শুরু দলের দুই গোষ্ঠীর। বিতর্ক ‘অঞ্চল সভাপতি’ পদ নিয়ে। যার জল গড়াল দলের জেলা সভাপতির দফতর পর্যন্ত।

Advertisement

বাঁকুড়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন নয়। গঙ্গাজলঘাটি ব্লকেও শাসকদলের দ্বন্দ্ব চরমে। লটিয়াবনি অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি পদে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন নিমাই মাজি। আগামী ২১ জুলাইয়ের সভার সমর্থনে এলাকার নানা জায়গায় তিনি পোস্টার সাঁটিয়েছেন। পোস্টারের নীচে লটিয়াবনি অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি হিসেবে নাম রয়েছে নিমাইবাবুর। আবার রবিবার সকালে ওই এলাকাতেই ২১শে জুলাইয়ের সমর্থনে তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠীর বেশ কিছু পোস্টার দেখা গিয়েছে। ওই সব পোস্টারে লটিয়াবনি অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি হিসেবে নাম রয়েছে গঙ্গাজলঘাটি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জিতেন গরাইয়ের।

নিমাইবাবুর সঙ্গে এই ব্লকের তৃণমূল সভাপতি প্রদীপ চক্রবর্তীর বিরোধ দীর্ঘদিনের। জিতেনবাবু প্রদীপবাবুর অনুগামী হিসেবেই পরিচিত। পোস্টারে লটিয়াবনির দলীয় সভাপতি হিসেবে জিতেনবাবুর নাম দেখেই ক্ষোভে ফুঁসতে থাকে নিমাই-শিবির। তাদের দাবি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই নিমাইবাবুকে হেয় করতে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে দলের অন্য গোষ্ঠী।

Advertisement

নিমাইবাবু-সহ তাঁর বেশ কিছু অনুগামী রবিবার সকালেই জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁর বাড়িতে গিয়ে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানান। নিমাইবাবু নিজে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তাঁর এক অনুগামীর কথায়, “২০০৬ সাল থেকে লটিয়াবনিতে দলের সভাপতি হিসেবে রয়েছেন নিমাইবাবুর। তাঁর জায়গায় অন্য কেউ নিজেকে সভাপতি হিসেবে প্রচার করছে। বিষয়টি আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’’ যদিও জিতেনবাবুর দাবি, ব্লক সভাপতি প্রদীপবাবুই আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁকে লটিয়াবনি অঞ্চলের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, “এক বছর আগেই আমাকে ওই অঞ্চলের সভাপতি ঘোষণা করেছেন ব্লক সভাপতি। তার পরেও নিমাই নিজেকে সেখানকার সভাপতি বলে প্রচার করছে। আমি এ নিয়ে ব্লক সভাপতির কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।’’ প্রদীপবাবুও এ প্রসঙ্গে মন্তব্য এড়িয়ে গিয়ে বলেছেন, “এ নিয়ে যা বলার জেলা সভাপতি বলবেন।’’

প্রকৃত অঞ্চল সভাপতি কে, সে রহস্য অবশ্য কাটেনি জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁর কথাতেও। তিনি বলেছেন, “যিনি সভাপতি ছিলেন, তিনিই আছেন!’’ তবে, এক বছর আগে ব্লক সভাপতি তাঁকে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন বলে জিতেনবাবু যে দাবি করছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে অরূপবাবু বলেন, “নতুন করে কোনও কমিটি হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ব্লক নেতৃত্বের সঙ্গে আমি আলোচনায় বসব।’’

ঘটনা হল, আসন্ন বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করে জেলায় জেলায় ঘুরে কর্মীদের এক হয়ে কাজ করার বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন রাজ্য নেতারা। কিন্তু, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ছেদ টানতে রাজ্য নেতৃত্বের বার্তার পরেও যে বাঁকুড়া জেলায় তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না, তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের বড় অংশই সেটা স্বীকার করছেন। লাগাতার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্য জেলা নেতৃত্বের অক্ষমতাকেই দায়ী করছেন ওই কর্মীরা। তাঁদের ক্ষোভ, পাত্রসায়র থেকে গঙ্গাজলঘাটি, কোতুলপুর থেকে সোনামুখী, ইঁদপুর থেকে ছাতনা—কোনও ক্ষেত্রেই জেলার শীর্ষ নেতৃত্বকে সে-ভাবে কড়া পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। তৃণমূলেরই এক ব্লক সভাপতির কথায়, “রাজ্য থেকে যতই নেতারা এসে মাইকে গলা ফাটিয়ে কর্মীদের এক হওয়ার নির্দেশ দিক, এ দ্বন্দ্ব মেটার নয়। দলে অনুশাসন আনতে প্রথমে কড়া হতে হবে জেলা নেতাদেরই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন