প্রতীকী ছবি।
দিনমজুর স্বামী। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ সংসারে। নিজেদের চেষ্টায় সেই ছবি বদলালেন অর্চনা মেটে, সুনীতা বাগদীদের মতো লাভপুরের জামনার কয়েক জন মহিলা।অন্যের রসনা তৃপ্তি করে স্বামী, সন্তানদের পাতে নিত্যনতুন খাবার তুলে দিচ্ছেন তাঁরা।
ওই মহিলাদের কারও স্বামী দিনমজুর, কেউ ভ্যানচালক বা প্রান্তিক চাষী। সামান্য রোজগারে সংসারের সব চাহিদা পূরণ হয় না। পরিস্থিতি বদলাতে এগোন সেই মহিলারাই। প্রশিক্ষণ নেন জ্যাম-জেলি তৈরির। তা দিয়েই বাড়তি আয় করছেন তাঁরা। ২২ জন মহিলা মিলে ‘আহরণ উৎপাদক গোষ্ঠী’ নামে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা জানান, ২০১১ সালে জামনা নিত্য সঙ্ঘের কাছে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পথ চলা শুরু। লাভের টাকায় ২০১৫ সালে ৮২ হাজার টাকা দিয়ে জ্যাম তৈরির যন্ত্র কেনেন গোষ্ঠীর সদস্যেরা। তার পরে থেকেই লাভের অঙ্ক বাড়তে থাকে। ২০১৭ সালে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে জ্যাম জেলি তৈরি করেন। ঋণ মিটিয়ে লাভ থাকে ৩ লক্ষ ৭ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে ১ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা ঋণ মিটিয়ে লাভ হয় ৪ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা।
লভ্যাংশের ওই টাকাই অর্চনা মেটে, সোমা পালদের সংসারের হাল ফিরিয়েছে। তাঁরা জানান, এক সময় তাঁদের সংসারে অভাব লেগেই ছিল। এখন সোমাদেবীর এক ছেলে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। অর্চনাদেবীর ছেলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। মেয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। অর্চনাদেবী বলেন, ‘‘আমাদের অনেকের স্বামী দিনমজুর। এক সময় স্বামীর একার আয়ে সংসারের সব দিক সামলানো মুশকিল হত। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এখন সেই সব দিন অতীত হয়েছে।’’
তাঁরা জানান— পেয়ারা, আনারস এবং আমের ২৫০ গ্রাম জেলি তৈরি করতে খরচ পড়ে যথাক্রমে ১৪, ২৮ এবং ২১ টাকা। তা বিক্রি হয় ৩১, ৫৬, এবং ৪৩ টাকায়। ওই একই পরিমাণ টম্যাটো ও চিলি সস তৈরি করতে খরচ পড়ে যথাক্রমে ২৫ ও ২২ টাকা। বাজারে দাম মেলে ৫৫ এবং ৪০ টাকা। প্রকল্পের প্রোমোটার বিশ্বজিৎ পাল বলেন, ‘‘ওই গোষ্ঠীর তৈরি জ্যাম জেলি মানুষের রসনা তৃপ্তি করছে। আর সেই আয়ে গোষ্ঠীর সদস্যদের হেঁসেলেও স্বাদ ফিরেছে।’’