অভিভাবকদের ক্ষোভে তালা রাত পর্যন্ত স্কুলে আটক ছাত্রছাত্রীরা

বেনিয়মের অভিযোগ তুলে সকাল থেকেই স্কুলে অশান্তি চলছিল। হঠাৎ করে দুপুর আড়াইটে নাগাদ স্কুলের মূল দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন অভিভাবক ও পড়ুয়াদের একাংশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মানবাজার শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৭ ০০:০০
Share:

দাবি: দরজায় তালা। ভিতরে আটকে পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।

অভিভাবক ও পড়ুয়াদের একাংশের আন্দোলনের জেরে স্কুলের ভিতরে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় ছ’ঘণ্টা আটকে থাকল পড়ুয়ারা। তালা-বন্ধ স্কুলে আটকে পড়লেন শিক্ষকেরাও। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার কেন্দা থানার বিজয়ডি উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ঘটনাকে ঘিরে অভিভাবকদের একাংশের মধ্য তীব্র ক্ষোভ ছড়াল। পুলিশ ও প্রশাসনের চেষ্টায় রাত ৮টা নাগাদ প্রায় শ’তিনেক পড়ুয়া ও জনা কুড়ি শিক্ষককে স্কুলের ভিতর থেকে বের করে আনা হয়। বিডিও (মানবাজার ১) নিলাদ্রি সরকার বলেন, ‘‘পড়ুয়া ও শিক্ষকদের আটকে রাখার খবর পেয়েই দুপুর থেকে আমরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছিলাম। কিন্তু তাঁরা অনড় ছিলেন। অনেক চেষ্টায় তাঁদের বুঝিয়ে তালা খোলা গিয়েছে।’’

Advertisement

বেনিয়মের অভিযোগ তুলে সকাল থেকেই স্কুলে অশান্তি চলছিল। হঠাৎ করে দুপুর আড়াইটে নাগাদ স্কুলের মূল দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন অভিভাবক ও পড়ুয়াদের একাংশ। অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, স্কুলে রেজিস্ট্রেশন ফি এবং ভর্তির সময় অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়। এ ছাড়া মিড-ডে মিল নিয়মিত হয় না। রান্নার মানও খারাপ। স্কুলে প্রতিবাদ জানালে বলা হয়, এর থেকে ভাল রান্না হবে না। স্কুলের বন্ধ দরজায় তাঁরা তাঁদের অভিযোগ প্ল্যাকার্ডে লিখে টাঙিয়ে দেন।

এর ফলে স্কুলের ভিতরে আটকে পড়ে পঞ্চম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জন ছাত্রছাত্রী। আটকে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। বাইরে থেকে বিক্ষোভ-চেঁচামেচি চলতে থাকে। ভয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী কান্নাকাটিও শুরু করে। খবর পেয়ে আটকে পড়া পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা সেখানে জড়ো হন। তাঁরা ছেলেমেয়েদের স্কুলের বাইরে বের করে আনার জন্য দাবি তোলেন। এ নিয়ে তুমুল বচসা বাধে।

Advertisement

ততক্ষণে পুলিশও চলে এসেছিল। কিন্তু পুলিশের কথায় বিক্ষোভকারীরা কান দেননি। ছোট পড়ুয়াদের কান্নাকাটিতেও তাঁদের মন গলেনি। বিডিও-র নির্দেশে গোপালনগর চক্রের বিদ্যালয় পরিদর্শককে ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু তাঁরা দাবি করতে থাকেন, বিডিও বা এসডিও এসে কথা বললে তবেই তাঁরা দরজার তালা খুলবেন।

ইতিমধ্যে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। খিদে-তৃষ্ণায় আটকে পড়া ছাত্রছাত্রীরা অধৈর্য্য হয়ে পড়ে। স্থানীয় কামতা-জাঙ্গিদিরি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সত্যানারায়ণ মাহাতো বলেন, ‘‘ওঁরা কিছুতেই দরজা খুলছিল না। আমরাই মুড়ি-চিঁড়ে দরজার বাইরে থেকে আটকে পড়া ছাত্রছাত্রীদের জোগান দিই।’’ আটকে পড়া পড়ুয়াদের অভিভাবকদের অনেকের ক্ষোভ, ‘‘কোনও অভিযোগ থাকলে স্কুলের পড়ুয়াদের বের করে দিয়ে তালা ঝোলাতে শোনা যায়। কিন্তু ছোট ছেলেমেয়েগুলোকে রাত পর্যন্ত আটকে রেখে এ কেমন আন্দোলন? ন্যূনতম মানবিকতা থাকলে জেদ করে এ ভাবে ওদের কেউ আটকে রাখত না।’’ পুলিশই বা কেন চুপ করে দর্শকের ভূমিকায় থাকল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

সন্ধ্যার দিকে বিডিও এবং এসডিপিও (মানবাজার) আফজল আবরার গিয়ে বলেন, ওঁদের ছাড়ার পরেই দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা হবে। তারপরেই তালা খোলা হয়।

বিজয়ডি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কল্যাণপ্রসাদ মাহাতো তৃণমূলের শিক্ষক সেলের জেলা নেতা বলে পরিচিত। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের উপদেষ্টা কমিটির জেলা সদস্যও তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে কল্যাণবাবু দাবি করেন, ‘‘আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য অভিভাবকদের একাংশ স্কুলের দরজায় তালা ঝুলিয়ে মিথ্যা কথার প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়েছেন। ছাত্র এবং অভিভাবকদের অনুরোধে রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি আরও দাবি করেছেন, স্কুলে অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে পরিচালন সমিতির সভাপতির সঙ্গে তিনি আলোচনা ছাড়া একক ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। মিড-ডে মিল নিয়ে বেনিয়মের অভিযোগও ঠিক নয়। স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি নীলকমল মাহাতোর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন