বাঁকুড়ার বিধায়ক শম্পা দরিপার কাউন্সিলর পদ খারিজের নির্দেশে সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে বহিষ্কৃত হওয়ার পরে অন্য দলে যোগ দেওয়ার পর দলত্যাগ বিরোধী আইন কী ভাবে শম্পাদেবীর বিরুদ্ধে খাটে, তাও বাঁকুড়ার মহকুমা শাসকের কাছে জানতে চেয়েছে আদালত।
ঘটনা হল, গত বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক মুখে গত ১২ মার্চ তৎকালীল জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী তথা বাঁকুড়া পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শম্পাদেবীকে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বহিষ্কার করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ। এরপরই শম্পাদেবী কংগ্রেসে যোগ দিয়ে বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী মিনতি মিশ্রের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ান। কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে জিতে শম্পাদেবী বিধায়ক হন। তবে তৃণমূলের তরফে তাঁকে কাউন্সিলর পদ ছাড়তে হবে বলে দাবি তোলা হয়। বাঁকুড়া পুরসভার মোট ২৪টি আসনের মধ্যে এখন তৃণমূলের ১৫টি (শম্পাদেবী-সহ), বিজেপি-র দু’টি, কংগ্রেসের ১টি, নির্দল ১টি এবং ৫টি বামেদের।
বাঁকুড়া পুরসভার তৃণমূল পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত শম্পাদেবীর কাউন্সিলর পদ বাতিলের দাবি নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অসীমকুমার বালা মহাপ্রসাদবাবুর সেই আবেদনের ভিত্তিতে চারবার শুনানি ডাকেন তাঁর দফতরে। কিন্তু কোনও বারই শম্পাদেবী বা তাঁর পক্ষের কেউ শুনানিতে হাজির হননি। গত শনিবার মহকুমাশাসক পুরসভায় চিঠি দিয়ে শম্পাদেবীর কাউন্সিলর পদ খারিজের নির্দেশ দেন।
প্রথম থেকেই এই নির্দেশকে অনৈতিক বলে আসছিলেন শম্পাদেবী। তাঁর কাউন্সিলর পদ খারিজের দাবিতে পুরপ্রধান প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার পরপরই শম্পাদেবী কাউন্সিলর পদ বাঁচাতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। মঙ্গলবার হাইকোর্টে সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর বেঞ্চে বিষয়টি নিয়ে শুনানি হয়। সেখানে শম্পাদেবীর কাউন্সিলর পদ খারিজের যে নির্দেশ জারি করেছেন মহকুমাশাসক তাতে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। এবং মহকুমা শাসকের কাছে দু’টি প্রশ্ন তুলে আদালত রিপোর্ট তলব করেছে।
প্রশ্নগুলি হল: দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরেও পুর-আইন ১৯৯৩ এর ২১বি ধারা (কেউ স্বেচ্ছায় দলত্যাগ করলে দলত্যাগ বিরোধী ওই ধারা প্রয়োগ করা হয়। এই ধারার বলে দলত্যাগীর বিরুদ্ধে কাউন্সিলর পদ খারিজ করা যায়। সে ক্ষেত্রে ওই ওয়ার্ডে উপনির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কাউন্সিলর বাছাই করার কথা) শম্পাদেবীর বিরুদ্ধে প্রযোজ্য হয় কী করে? পুরপ্রধান মহাপ্রসাদবাবুকে তৃণমূলের জেলা সম্পাদক বলে উল্লেখ করেছেন মহকুমাশাসক। মহাপ্রসাদবাবু যে দলের ওই পদে রয়েছেন তা মহকুমাশাসক নিশ্চিত হলেন কী করে, সেই বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে। বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অসীম কুমার বালা জানান, বুধবার আইনজীবী মারফত তিনি হাইকোর্টের নির্দেশ হাতে পেয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমার কাছে আদালত যে রিপোর্ট চেয়েছে তা আমি সঠিক সময়ে পেশ করব। আদালত আপাতত শম্পাদেবীর কাউন্সিলর পদ খারিজের নির্দেশের উপর ১৯ অগস্ট পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দিয়েছে।” শম্পাদেবী এ দিন অভিযোগ করেন, “শাসকদলের নির্দেশে প্রশাসন ওঠবোস করছে। আমি প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম দলবিরোধী কাজ আমি করিনি। আমাকে নিজের স্বপক্ষে বলার সুযোগ না দিয়েই মহকুমাশাসক একতরফা ভাবে আমার কাউন্সিলর পদ খারিজের নির্দেশ জারি করে অনৈতিক কাজ করেছেন।” বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদবাবু দাবি করেছেন, “হাইকোর্ট কী নির্দেশ দিয়েছে আমার জানা নেই।”
সোমবারই পাশের জেলা পুরুলিয়ায় কংগ্রেস পরিচালিত ঝালদা পুরসভার চার কংগ্রেস কাউন্সিলর, এক ফরওয়ার্ড ব্লক কাউন্সিলর ও দুই নির্দল কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় পুরসভার ক্ষমতা বদল এখন সময়ের অপেক্ষা। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, ২১ বি ধারা তাহলে তৃণমূলে যোগ দেওয়া ওই কাউন্সিলরদের ক্ষেত্রে কেন প্রয়োগ করা হবে না?