তাঁর বিরুদ্ধে স্কুলের হস্টেলের টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছিল আগেই। শুরু হয়েছে তদন্ত। এ বার সেই তদন্ত থেকে বাঁচতে লেনদেনের নথিপত্র গুম করার চেষ্টার অভিযোগ উঠল শালতোড়ার চাঁদরা কল্যাণ হরিজন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায়কে সোমবার স্কুলের মধ্যে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। খবর পেয়ে পুলিশ স্কুলে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
সম্প্রতি হস্টেলের উন্নয়ন এবং আবাসিক ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠে শালতোড়া চাঁদরা কল্যাণ হরিজন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। কয়েক মাস আগে ওই স্কুলের অন্য শিক্ষকদের থেকে অভিযোগ পেয়ে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পঙ্কজ সরকার সরেজমিন তদন্তে যান। ওই দিন স্কুলে যাননি শ্যামাপদবাবু।
বুধবার বাঁকুড়ায় নিজের দফতরে অভিযোগকারী শিক্ষকদের এবং অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে ডেকে পাঠান পঙ্কজবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অন্য শিক্ষকেরা দুর্নীতির একের পর এক প্রমাণ দেখাতে পারলেও তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে বিশেষ যুক্তি দেখাতে পারেননি।’’ পঙ্কজবাবু জানান, শীঘ্রই সেই কথাবার্তার ভিত্তিতে একটি রিপোর্ট তৈরি করে জেলাশাসক ও রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতরে পাঠাবেন তিনি। রিপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। সেই বুঝে শ্যামাপদবাবু স্কুলের আলমারি থেকে হস্টেলের টাকা পয়সা খরচের বিভিন্ন নথিপত্র চুরি করার চেষ্টা চালান বলে অভিযোগ অন্য শিক্ষকদের।
অভিযোগকারী শিক্ষকেরা জানান, নেতাজি-জয়ন্তী উপলক্ষে এ দিন সকালে অনুষ্ঠানের পরে স্কুল ছুটি হয়ে যায়। প্রধান শিক্ষক ব্যক্তিগত কারণে এ দিন স্কুলে আসবেন না বলে তাঁদের আগাম জানিয়ে রেখেছিলেন। অভিযোগ, সকালে অনুষ্ঠান করে স্কুল ছুটি দিয়ে শিক্ষকেরা চলে যাবার পরে বেলা প্রায় ১০টা নাগাদ শ্যামাপদবাবু স্কুলে এসে অফিস ঘরের তালা খুলে ভিতরে ঢোকেন। আলমারি থেকে বেশ কিছু কাগজপত্র বের করে তা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেন। অভিযোগকারী শিক্ষকদের দাবি, ঘটনাটি প্রথমে এলাকার কিছু বাসিন্দার চোখে পড়ে। তাঁরা সন্দেহ হওয়ায় শ্যামাপদবাবুকে স্কুলে আটকে রেখে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে অন্য শিক্ষকেরা এবং স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি ঘটনাস্থলে যান।
ওই স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি শৈলেন সোরেন বলেন, “স্থানীয় কিছু বাসিন্দা প্রধান শিক্ষককে ঘেরাও করে রেখেছেন শুনে স্কুলে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি, হস্টেলের বিভিন্ন জরুরি কাগজপত্র ফাইলবন্দি করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন প্রধান শিক্ষক।” তাঁর দাবি, উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই অর্থ তছরূপের তথ্য স্কুল থেকে লোপাট করতে চাইছিলেন প্রধান শিক্ষক।
পুলিশের কাছে অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শ্যামাপদবাবু। এ দিন বিকেল পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে শালতোড়া থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি বলেই পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগ পেলে তদন্ত শুরু হবে। সূত্রের খবর, বাম আমলে শ্যামাপদবাবু শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র ছত্রছায়ায় থাকলেও রাজ্যে পালা বদলের পরেই তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনে যোগ দেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি গৌতম দাস বলেন, “শ্যামাপদবাবুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ওঁর সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করানো হয়নি। দুর্নীতি করলে সংগঠন কারও পাশে দাঁড়াবে না।’’ উপযুক্ত তদন্তের দাবি তুলেছেন গৌতমবাবুও।