প্রতীকী ছবি।
কিছু দিন আগের কথা। অস্ত্রোপচারে মৃত সন্তান প্রসবের কয়েক ঘণ্টা পরে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। সেই মৃত্যুকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল সিউড়ি জেলা হাসপাতালে। লিখিত অভিযোগ না হলেও, মৌখিক ভাবে ওই প্রসূতির পরিবারের তরফে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তোলা হয়েছিল। প্রশ্ন উঠছে, মা ও শিশু মৃত্যু রুখতে যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে গুরুত্ব দিতে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর সেখানে হাসপাতালে এসেও শেষ রক্ষা হল না কেন?
স্বাস্থ্য দফতর ও হাসপাতাল বলছে, ওই প্রসূতির মৃত্যুতে আদৌ কোনও গাফিলতি ছিল কিনা দেখা হচ্ছে। তবে তাঁদের দাবি, মাতৃ-মৃত্যু ঠেকাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ ও ক্রমাগত নজরদারির জন্য প্রসূতি মৃত্যু উল্লখেযোগ্য ভাবে কমছে। সিউড়ি জেলা হাসপাতালে ২০১৬ সালের শেষের দিকে একগুচ্ছ প্রসূতি মৃত্যু থেকে শিক্ষা নিয়েই নানা পদক্ষেপ নেওয়ার সুফল মিলেছে বলেও তাঁদের মত।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘পদক্ষেপ নেওয়ায় ফলে প্রসূতি মৃত্যু উল্লখেযোগ্য ভাবে শুধু কমেনি। রাজ্যে তা প্রশংসিত হয়েছে।’’ বীরভূম
স্বাস্থ্য জেলার পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে সিউড়ি ও বোলপুর মহকুমায় প্রসূতি মৃত্যু হয়েছিল ২৯টি। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে প্রসূতি মারা গিয়েছেন ২৪ জন। পর পর দুটি বছরে ২৭ হাজারের বেশি শিশুর জন্ম হয়েছে।
অন্য দিকে, সিউড়ি জেলা হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ২০ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৭ সালে ১৭ জন প্রসূতি মারা গিয়েছেন। আর চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত চারটি প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, ‘‘বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে রেফার না করেই এ বছর এই ছবি করে দেখানো গিয়েছে।’’
জেলা স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম দিকে মাতৃ মৃত্যুর পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক না হলেও ২০১৭ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে মোট ১১ জন প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। যাঁদের অনেকই পড়শি ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা ছিলেন। তার পরেই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায় স্বাস্থ্য দফতরে। সিউড়ি হাসপাতালের স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞরা ঘটনার জন্য ঝাড়খণ্ডের স্বাস্থ ব্যবস্থার অবস্থার দিকে আঙুল তুললেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলই। তখনই একাধিক স্বাস্থকর্তা হাসপাতাল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলেন।
ঠিক হয়, সর্বক্ষণ হাসপাতালে একজন স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ থাকবেন। সঙ্কটে থাকা প্রসূতিদের নজরদারি বাড়ানো হবে। হাসপাতালের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘সিউড়ি জেলা হাসপাতালে এই মুহূর্তে ছ’জন স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ এবং তিন ডিএনবি পড়ুয়া রয়েছেন। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ৯ জন। ৪০ শয্যার প্রসূতি ওয়ার্ড থাকলেও অস্ত্রোপ্রচারের পরে দেখভালের জন্য আরও ২০ শয্যার পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। এতে প্রসূতিদের দেখভালের সমস্যা না থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গর্ভকালীন নজরদারি। তারই সুফল মিলছে।’’
স্বাস্থ্যকর্তারা এ কথা বললেও এখনও নানা অভিযোগ ওঠে সিউড়ি জেলা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ ঘিরে। শুধু প্রসূতি-মৃত্যু নয়, কয়েক মাস আগে এক প্রসূতিকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল এক স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞের বিরুদ্ধে। তারও আগে সময়ে অস্ত্রোপ্রচার না করায় মৃত শিশু প্রসবের অভিযোগ তুলেছিলেন এক প্রসূতির পরিবার। কখনও কখনও ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে রেফার হয়ে আসা অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে ফিরিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। প্রায়ই একই শয্যায় দু’জন করে ঠাসাঠাসি করে রাখা ও সন্তানসম্ভবা মহিলা, প্রসূতি ও তাঁদের পরিজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগের আঙুল ওঠে নার্সদের বিরুদ্ধেও। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ‘‘যখনই অভিযোগ উঠেছে তদন্ত হয়েছে। অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করা হয় না।’’
সিএমওইচ হিমাদ্রি আড়ি জানান, মা ও শিশুর মৃত্যু ঠেকাতে বহু প্রচার হয়েছে। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে। তাঁর কথায়, ‘‘এর পরে হাসপাতালে এসে ভিন্ন অভিজ্ঞতা হলে সব পরিশ্রম পণ্ড। তাই নিয়মিত ভিজিট চলে। কোনও বিচ্যুতির খবর এলে গুরুত্ব দিয়ে অভিযোগের তদন্ত হয়।’’