বধূর মৃত্যুতে নতুন তদন্ত চাইল কোর্ট

২০১৬-র ৩ ফ্রেবুয়ারি বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় কাশীপুর থানার মসিলা গ্রামের বধূ বৈশাখীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২৪
Share:

বধূর অপমৃত্যুর ঘটনায় নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁর মেয়ে বৈশাখী চট্টোপাধ্যায়কে শ্বশুরবাড়ির লোকজন খুন করেছে বলে অভিযোগ করেছিলেন কাশীপুরের বড়ডিহা গ্রামের ভূতনাথ মিশ্র। ভূতনাথবাবুর আইনজীবী সৌগত মিত্র জানান, তাঁর মক্কেলের আবেদনের ভিত্তিতে সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় পুলিশকে নতুন করে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

Advertisement

২০১৬-র ৩ ফ্রেবুয়ারি বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় কাশীপুর থানার মসিলা গ্রামের বধূ বৈশাখীর। মৃত্যুর মাস তিনেক আগে কাশীপুরেরই বড়ডিহা গ্রামের বাসিন্দা ভূতনাথবাবুর মেয়ে বৈশাখীর বিয়ে হয়েছিল মসিলা গ্রামের জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী প্রশান্ত চট্টেপাধ্যায়ের ছেলে জগ্গনাথ পেশায় ব্যবসায়ী।

ভূতনাথবাবুর অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই পণের দাবিতে বছর উনিশের বৈশাখীর উপরে শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচার চলত। তারই জেরে বিষ খাইয়ে তাঁর মেয়েকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। বৈশাখীর কাকা তারকনাথ মিশ্র বলেন, ‘‘গত বছর ৩ ফ্রেবুয়ারি বৈশাখীর শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানিয়েছিল, ও অসুস্থ হয়ে বাঁকুড়াতে ভর্তি। হাসপাতালে গিয়ে দেখি মৃত্যু হয়েছে। বিষ খাইয়ে খুন করে হাসপাতালে ভর্তি করেছিল ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজন।”

Advertisement

২০১৬-র ৪ ফেব্রুয়ারি, ভূতনাথবাবুর করা অভিযোগের ভিত্তিতে কাশীপুর থানার পুলিশ পর্যায়ক্রমে গ্রেফতার করে মূল দুই অভিযুক্তকে— বৈশাখীর স্বামী জগ্গনাথ ও শ্বশুর প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন ও খুনের মামলা দায়ের করা হয়। দু’মাস পরে আদালতে চার্জশিট জমা পড়ে। সেখানে বধূ নির্যাতনের ধরা ঠিক থাকে। কিন্তু খুনের বদলে আত্মহত্যায় প্ররোচণার ধারা দেওয়া হয় ধৃতদের বিরুদ্ধে। জামিনে পান দুই অভিযুক্ত।

ভূতনাথবাবু প্রথমে রঘুনাথপুর আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে ধারা বদলের বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে ঘটনার নতুন করে তদন্ত চেয়ে আবেদন করেন। রঘুনাথপুর আদালতের বিচারক সেই আবেদন খারিজ করে দেন। তার পরেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন মৃতার বাবা। আইনজীবী সৌগতবাবু জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির এজলাসে পুলিশের জমা করা চার্জশিটকে চ্যালেঞ্জ করে, নতুন তদন্ত চেয়ে আবেদন করা হয়। সেই আবেদন গৃহীত হয়। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ধারা বদলে স্থগিতাদেশ দেন।

সম্প্রতি বিচারপতি সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে ওই মামলার শুনানি হয়েছে। সৌগতবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ খুনের মামলার ধারা দিয়ে তদন্ত শুরু করেছিল। সেই ধারাতেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছিল। পরে অভিযোগকারীকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে ধারা বদলে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে। বিচারপতি তাই পুলিশকে নতুন করে ঘটনার তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।”

এ দিন কাশীপুর থানা এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, হাইকোর্টের নির্দেশ তাঁদের কাছে এখনও এসে পৌঁছয়নি। তা না দেখে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তবে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, তদন্ত করে দেখা গিয়েছিল শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওই বধূ আত্মহত্যা করেছিলেন। তাই খুনের বদলে চার্জশিটে আত্মহত্যায় প্ররোচনার ধারা দেওয়া হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন