উঠে গেল ধান বিক্রির ঊর্ধ্বসীমা

ধানের ফলন মন্দ হয়নি। তবুও সরকারের গোলায় তেমন ধান জমা পড়ছিল না। এ বার তাই ধান সংগ্রহে গতি আনতে ধান কেনার ঊর্ধ্বসীমাই তুলে দিল রাজ্য সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৫৫
Share:

পুরুলিয়ায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ।—নিজস্ব চিত্র।

ধানের ফলন মন্দ হয়নি। তবুও সরকারের গোলায় তেমন ধান জমা পড়ছিল না। এ বার তাই ধান সংগ্রহে গতি আনতে ধান কেনার ঊর্ধ্বসীমাই তুলে দিল রাজ্য সরকার। শনিবার রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় ধান কেনার কাজের পর্যালোচনা করতে এসে জানিয়ে গেলেন, চাষিরা এ বার যতখুশি ধান বিক্রি করতে পারবেন। তাঁদের কাছে জমির পরচা, দলিলও দেখতে চাওয়া হবে না।

Advertisement

খাদ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, চাষিদের কাছ থেকে যতটা বেশি সম্ভব ধান কিনতে হবে। সে জন্য সরকার নির্ধারিত সহায়ক মূল্যে চাষিরা যত খুশি ধান বিক্রি করতে পারবেন। দলিল, পড়চাও দেখাতে হবে না। শুধু চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকলেই হবে। চাষিরা ধান বিক্রির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ে যাবে।’’ চাষিরা যাতে ধান বিক্রি করতে এসে হয়রানির শিকার না হন, তাও দেখতে নির্দেশ দেন মন্ত্রী। তবে এই ধান কেনার গোড়াতেই নিয়ম শিথিল না করে, এখন করায় চাষিরা আদৌ উপকৃত হবেন কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিরোধীরা।

খাদ্যমন্ত্রী এ দিন জানান, এ বার ধান সংগ্রহে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৫২ লক্ষ টন হলেও এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭ লক্ষ ১০ হাজার টনের বেশি কেনা যায়নি। কেন এমন হাল তা জানতে রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের সচিবদের জেলায়-জেলায় পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ধানকেনার পরিস্থিতি নিয়ে নবান্নে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকও সারেন। তারপরেই এই সিদ্ধান্ত।

Advertisement

এতদিন পর্যন্ত চাষিদের কাছ থেকে তিন দফায় মোট ৯০ কুইন্ট্যাল পর্যন্ত ধান কেনা হতো। সে ক্ষেত্রে ধান বিক্রেতা প্রকৃত চাষি কি না, তা পরখ করতে জমির পড়চা, দলিলও নিয়ে আসতে বলা হতো। তা ছাড়া ধান বিক্রির আগে সরকারি ধান কেনার কেন্দ্রে গিয়ে নাম লেখানো, তাদের দেওয়া নির্দিষ্ট দিনে ধান গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে যাওয়ার সমস্যাও রয়েছে। সে কারণে ধানের সরকারি মূল্য খোলা বাজারের থেকে বেশি হলেও অত ঝামেলা পোহাতে আগ্রহী হতেন না বহু চাষিই। খাদ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘তাই নিয়মের বেড়ি খুলে দিয়ে সরকারি গোলা ভরাতে চাওয়া হচ্ছে।’’

যদিও বিরোধীদের দাবি, চাষিদের অধিকাংশই এতদিনে ধান যা বিক্রি করার করে ফেলেছেন। ফলে এই নয়া সিদ্ধান্তে তাঁরা বিশেষ উপকৃত হবেন না। কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদারের মতে, ‘‘চাষিদের ঘরে যখন অভাবী ধান জমে ছিল, তখন সরকারের কাছে ধান বিক্রির হাজারো নিয়ম ছিল। সেই ধান এখন ফড়েদের ঘরে। সমস্ত নিয়মও এখন উঠে গেল। তাহলেই বোঝা যাচ্ছে সরকার আসলে কাদের উপকার করতে চাইছে।’’ বেঙ্গল রাইসমিস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেবনাথ মণ্ডলও মনে করছেন, ‘‘খোলা বাজার আর সরকারের ধানের দামের পার্থক্য এখন বেশি নয়। কিন্তু সরকারি কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে যাওয়ার খরচ-সহ নানা হ্যাপা এখনও রয়ে গিয়েছে। ফলে সরকারের এই নতুন সিদ্ধান্তে আখেরে ফড়েরাই লাভবান হবে।’’ যদিও রাজ্য ধান্য ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সম্পাদক মিঠুন মণ্ডলের দাবি, ‘‘সরকার তো মোটে ২৫ শতাংশ ধান কেনে। বাকি ধান তো আমরাই কিনি। তাহলে আমাদের আর সুবিধা-অসুবিধার কী হল!’’

ধান কেনায় গতি নেই দু’জেলায়: মন্ত্রী

ধান সংগ্রহ সন্তোষজনক নয় বলে দুই জেলা সফরে এসে স্বীকার করলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। শনিবার ধান কেনার কাজের গতি দেখতে এসে মন্ত্রী প্রশাসনিক আধিকারিকদের এই কাজে আরও তৎপর হতে নির্দেশ দেন।

পুরুলিয়ায় গত বছরে ধানের ফলন স্বাভাবিক হয়েছে। তাই সরকার চলতি বছরে পুরুলিয়া থেকে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ১ লক্ষ ৬৬ হাজার টন। জেলা প্রশাসন এ দিন মন্ত্রীকে জানায়, ববৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধান কেনা গিয়েছে ১৫ হাজার ৩৬৮ টন। অর্থাৎ দে়ড় মাসে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১০ শতাংশ ধান সরকারের ঘরে উঠেছে। জেলা জুড়ে দু’টাকা কেজি চালের বিশেষ জঙ্গলমহল প্রকল্প চালু রয়েছে। ফলে ধান কেনার এই গতি মোটেই আশানুরূপ নয়। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার জন্যই প্রতিমাসে ১৩ হাজার টন চালের প্রয়োজন। তাই আরও ধান কিনতে হবে।’’

উল্লেখ্য, টানা কয়েক মাস ধরেই পুরুলিয়ার জন্য বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং বর্তমানে মালদহ থেকেও চাল নিয়ে আসতে হচ্ছে। এ দিন জেলা পরিষদ প্রেক্ষাগৃহে জেলার দুই মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, সন্ধ্যারানি টুডু এবং জেলাশাসক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ, সমবায়ের প্রতিনিধি ও চালকল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে মন্ত্রী ধান কেনা বাড়াতে কী কী করা যায়, তা বলেন। পরে বাঁকুড়ার গিয়ে বৈঠকের পরে ধান কেনায় এই জেলাও যে পিছিয়ে, একপ্রকার তা মেনে নেন মন্ত্রী। বাঁকুড়ায় ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ২ লক্ষ এক হাজার টন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ধান কেনা সম্ভব হয়েছে মাত্র ১৩ হাজার ৬০০ টন। মন্ত্রী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় শুক্রবার একটি জরুরি বৈঠক করে কৃষকদের ধান কেনার পদ্ধতি অনেক সরল করে দিয়েছেন। এতে ধান কেনা বাড়বে।’’ মন্ত্রীর আশ্বাস, ‘‘খুব তাড়াতাড়ি আমরা আমাদের কোটা পূরণ করতে পারব।’’ জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘প্রতিদিন ১০ হাজার-১২ হাজার টন করে কিনে আমরা কোটা পূরণ করতে পারব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন