কিশোরীকে ফেরাল হোম

চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি এক অত্যাচারিত কিশোরীকে হোমে রাখতে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু হোম কর্তৃপক্ষ সেই মেয়েকে রাখতে না চাওয়ায় রাতের অন্ধকারে ঘণ্টাখানেক ধরে হোমের বাইরে সেই কিশোরীকে নিয়ে অপেক্ষা করতে হল চাইল্ডলাইনের কর্মীদের।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭ ০১:০২
Share:

অপেক্ষা: পুরুলিয়া আনন্দমঠ হোমের বাইরে। ছবি: সুজিত মাহাতো

চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি এক অত্যাচারিত কিশোরীকে হোমে রাখতে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু হোম কর্তৃপক্ষ সেই মেয়েকে রাখতে না চাওয়ায় রাতের অন্ধকারে ঘণ্টাখানেক ধরে হোমের বাইরে সেই কিশোরীকে নিয়ে অপেক্ষা করতে হল চাইল্ডলাইনের কর্মীদের। শুক্রবার সন্ধ্যায় পুরুলিয়ার আনন্দমঠ হোমের সামনে এই তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের দুই কর্মীর। শেষমেশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে রাত প্রায় সওয়া দশটা নাগাদ ওই কিশোরী হোমে ঠাঁই পেল।

Advertisement

বাঁকুড়া চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি (সিডব্লউসি) সূত্রে জানা গিয়েছে, বড়জোড়া থানার হাটআশুড়িয়া গ্রামের এই কিশোরীর উপর বাড়ির লোকেরাই অত্যাচার চালাত বলে অভিযোগ। পড়শিরাই পুলিশকে জানিয়ে ২৭ মার্চ তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করে। সে দিনই ওই কিশোরীকে বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই কিশোরী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছিল। তাই পরীক্ষা পর্ব মিটতেই শুক্রবার বাঁকুড়ার সিডব্লউসি ওই কিশোরীকে পুরুলিয়ার হোমে রাখার নির্দেশ দেয়।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ওই কিশোরীকে নিয়ে বিষ্ণুপুর থেকে পুরুলিয়া শহরের উপকন্ঠে আনন্দমঠ হোমে পৌঁছন বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের দুই কর্মী। তাঁদের মধ্যে শ্রীমন্ত বাউরি নামে এক কর্মীর দাবি, ‘‘আমরা সিডব্লউসি-র নির্দেশ হোমের সুপারের কাছে দিলে তিনি আমাদের জানিয়ে দেন, যেহেতু তাঁর সঙ্গে কথা না বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাই তিনি এই কিশোরীকে হোমে রাখতে রাজি হননি। তিনি ওই কিশোরীকে নিতে পারবেন না বলে নির্দেশের চিঠির উপরে লিখেও দেন। এরপরে তিনি আমাদের হোমের বাইরে যেতে বলেন।’’ তিনি জানান, সন্ধ্যায় কার্যত অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়তে হয় তাঁদের। হোমের বাইরে গাছের তলায় বসে সব ঘটনা তাঁরা ফোনে বাঁকুড়ায় জানান। দীর্ঘক্ষণ এ ভাবে বসে থেকে শেষমেশ প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে রাত সওয়া ১০টা নাগাদ ওই কিশোরীকে আশ্রয় দিতে রাজি হন হোম কর্তৃপক্ষ। ফেরার পথে শ্রীমন্তবাবু বলেন, ‘‘খুবই তিক্ত অভিজ্ঞতা হল।’’

Advertisement

বাঁকুড়া চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন মইনুর আলম বলেন, ‘‘বাঁকুড়ার হোমগুলিতে এখন কিশোরীদের রাখার জন্য জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের অনুমোদন নেই। তাই ওই কিশোরীকে পুরুলিয়ার হোমে পাঠানো হয়েছিল। কিছুদিন আগে কলকাতার একটি বৈঠকে এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে পাশের জেলা পুরুলিয়ার হোমে মেয়েদের পাঠানো যাবে বলে আলোচনাও হয়েছে। সেই বৈঠকে পুরুলিয়ার হোমের সুপারও উপস্থিত ছিলেন। তারপর যা ঘটল, তা উচিত ছিল না।’’

নিজের বাড়িতে অত্যাচারিত ওই মেয়ের মানসিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘ওই মেয়ে বাবাকে প্রচণ্ড ভয় পায়। নিজের বাড়িকেও আর নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে করে না। সেই মেয়ের পাশে প্রশাসনকেই তো দাঁড়াতে হবে। উল্টে তাকে এতদূর থেকে পুরুলিয়ায় পৌঁছে উদ্বিগ্ন অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতে হয়েছে।’’

পুরুলিয়া আনন্দমঠ হোমের সুপার হৈমন্তী হেমব্রম অবশ্য ওই ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘‘এ নিয়ে যা বলার প্রশাসনকে জানাব।’’ জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) উত্তমকুমার অধিকারী বলেন, ‘‘আগে কথা বলে পাঠালে এই সমস্যা হতো না। পদ্ধতিগত একটু ত্রুটি ছিল। যাই হোক ওই কিশোরীকে হোমেই রাখা হয়েছে।’’ বাঁকুড়া সিডব্লুসি সূত্রে জানানো হয়েছে, কলকাতায় আগেই তো এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তা ছাড়া ওই কিশোরীর ক্ষেত্রে আগে আশ্রয়টুকু জরুরি ছিল। নিয়মের গেরে কেন পিছিয়ে যাবে নিরাপদ একটা ঠাঁই?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন