হুল দিবসে উৎসব, শহিদ স্মরণ জেলায়

ইতিহাস বলে, সালটা ছিল ১৮৫৫। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, জমিদার এবং নীলকরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন আদিবাসী কৃষকেরা। বিদ্রোহ করেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৮ ০৩:০২
Share:

আলাপচারিতা: সিধো-কানহোর সাজে। রাজনগরে। নিজস্ব চিত্র

হুল দিবস উপলক্ষ্যে রাজনগরে দু’দিনের উৎসবের সূচনা হল। শনিবার তার উদ্বোধন করেন মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ।

Advertisement

এ বার তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে রাজনগরে জেলার হুল দিবস উদ্‌যাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রী ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, একাধিক অতিরিক্ত জেলাশাসক, জেলা ও পূর্ব বর্ধমানের একাধিক বিধায়ক। প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, পতাকা উত্তোলন, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, স্বাগত ভাষণে ঝাড়খণ্ডঘেঁষা ওই ব্লকে ডাকবাংলো মাঠে অনুষ্ঠান হয়।

ইতিহাস বলে, সালটা ছিল ১৮৫৫। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, জমিদার এবং নীলকরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন আদিবাসী কৃষকেরা। বিদ্রোহ করেছিলেন। আদিবাসী বিদ্রোহকে স্মরণ করেই প্রতি বছর ৩০ জুন হুল দিবস পালন করেন আদিবাসী জনজাতিরা। ভগনাডিহিতে সে দিন সিধো কানহোর নেতৃত্বে জমায়েত হয়েছিলেন সাঁওতালরা। যে জেলা সাঁওতাল বিদ্রোহ প্রত্যক্ষ করেছিল, সেই বীরভূমে এ দিন পালনের শুরুতেই শহিদদের স্মরণ করা হয়। জেলার বিভিন্ন অংশ থেকে আদিবাসী জনজাতির মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতীদের সংবর্ধিত করা হয়। সংবর্ধনা দেওয়া হয় মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতীদেরও। ছিল আদিবাসী নাচ ও তিরন্দাজি প্রতিযোগিতা। পরে হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বন, মৎস্য, কৃষি, অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ, প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতর এবং সুসংহত শিশু বিকাশ, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের তরফে কয়েকটি স্টল ছিল।

Advertisement

জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু আদিবাসীদের জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা করা উল্লেখ করেন। জেলাশাসকের পরামর্শ— স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের জন্য কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, প্রকল্প রয়েছে। সেগুলির সুবিধা পেতে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর জানায়, রবিবারও দিনভর নানা অনুষ্ঠান হবে।

আদিবাসী নাচ, গান, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নানুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের আদিবাসী সেলের পরিচালনায় হুল দিবস পালিত হল। শনিবার নানুরের নানুরের বলাইপুর ফুটবল ময়দানে। উদ্যোক্তারা জানান, হুল দিবসের কথা তুলে ধরতেই এই উদ্যোগ। বোলপুরে নীলডাঙা সিধু-কানহো স্মৃতি সঙ্ঘের উদ্যোগে নীলডাঙা ফুটবল ময়দানে উদযাপিত হয় হুল দিবস। উদযাপন কমিটির সভাপতি লক্ষীরাম মুর্মূ ও সম্পাদক বুদি টুডু জানান, শনিবার সকাল ১০টা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হয়। চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। ছোটদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পাশাপাশি হুল দিবস নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া ছিল সাঁওতালি গান, বিচিত্রানুষ্ঠান, নাটুয়া, দং ও লাগড়ে নাচ সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

দিন দশেক আগে রামপুরহাট থানার ফরিদপুর গ্রামে জমির দখল নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে মালিকপক্ষের সংঘাত বেঁধেছিল। সিপিএমের অভিযোগ ছিল, পুলিশের সাহায্যে জমির মালিক কৃষকদের জমি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কৃষকদের আন্দোলনে তাঁরা পিছু হঠতে বাধ্য হন। ফরিদপুরে কৃষকদের আন্দোলনে পাশে থাকতে হুল দিবসে সমাবেশ করল সিপিএম। শনিবার বিকেলে ওই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মণ, সারা ভারত কৃষকসভার নেতারা। সমাবেশে আদিবাসী নৃত্য সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে আদিবাসী অধিকার মঞ্চ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন