প্রায়ই নেশা করে বাড়ি ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করত স্বামী। প্রতিবাদ করলে স্ত্রীর কপালে জুটত মার। এটা রোজকার ঘটনা হলেও চূড়ান্ত পরিণতি ঘটল শনিবার ভোর রাতে। হাঁসুয়ার কোপে খুন হলেন স্ত্রী। স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হল স্বামী।
ঘটনাটি পুরুলিয়ার সাঁতুড়ি থানার খাড়বাড় গ্রামের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম রুবি বাউরি (৩৫)। শনিবার দুপুরে অভিযুক্ত স্বামী আনন্দ বাউরিকে পাকড়াও করে পুলিশ। ওই ঘরেই ঘুমিয়ে ছিল মৃতার সাত বছরের ছেলে ও বছর নয়ের মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে। পুলিশ জানিয়েছে, ভোরে ছেলে দুর্গা ঘুম থেকে উঠে মাকে ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পড়শিদের খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে। গ্রামে তদন্তে গিয়েছিলেন এসডিপিও (রঘুনাথপুর) গোপাল গোস্বামী। তিনি বলেন, ‘‘পারিবারিক বিবাদের জেরে মদ্যপ অবস্থায় স্ত্রীকে খুন করেছে আনন্দ বাউরি। খুন করে গা ঢাকা দিয়েছিল। পরে গ্রামের পাশ থেকেই তাকে ধরা হয়।’’ আজ রবিবার ধৃতকে রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় দিনমজুর আনন্দ এলাকায় ‘রগচটা’ হিসাবে পরিচিত। সম্প্রতি বাড়ির উঠোনে সে ত্রিশূল বসিয়ে মাঝেমধ্যেই কালীপুজো করত। স্থানীয়েরা খুনের সঙ্গে পুজোর কোনও সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা থাকার কথা বললেও পুলিশ তা উড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশের দাবি, ধৃতের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মনে হয়েছে, পারিবারিক বিবাদেই খুন। ধৃত নিজেই স্ত্রীকে খুন করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।’’ তবে এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ খুনে ব্যবহৃত হাঁসুয়াটি উদ্ধার করেতে পারেনি।
বাঁকুড়ার শালতোড়া থানার কাশিহিড়ি গ্রামের বাসিন্দা রুবির সঙ্গে বছর দশেক আগে বিয়ে হয় সাঁতুড়ির গড়শিকা পঞ্চায়েতের খাড়বাড় গ্রামের বাসিন্দা আনন্দের। ছোট মাটির বাড়িতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকত আনন্দ। পড়শিদের অনেকেই জানাচ্ছেন, রগচটা আনন্দ হাঁসুয়াটা নিয়েই ঘোরাঘুরি করত। তাই তার সঙ্গে এলাকার কেউ মেলামেশা করত না। প্রায়শই নেশা করে স্ত্রীর উপরে অত্যাচার চালাত। পড়শিরা আগে প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু আনন্দ হাঁসুয়া দিয়ে তাঁদের মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ায় তাঁরা আর বারণ করতে যেতেন না।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের দাবি, খুনের ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার ভোর রাতে। হাঁসুয়া দিয়ে স্ত্রী রুবির ঘাড়ে ও গলায় জোরাল কোপ মেরেছিল আনন্দ। ফলে ছোটখাটো চেহারার রুবি কার্যত আর্তনাদ করার সময়টুকুও পাননি। পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে পাঠায়। খবর পেয়ে সকালে খাড়বাড় গ্রামে চলে আসেন রুবির ভাই জনতা বাউরি। দুপুরে তিনিই থানায় আনন্দের বিরুদ্ধে বোনকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। মৃতার দুই ছেলেমেয়েকে শালতোড়ায় নিজের বাড়িতে নিয়ে গেছেন জনতাবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ভাইফোঁটায় রুবি বাড়ি এসেছিল। ফোঁটা দিয়ে বুধবারেই সাঁতুড়িতে ফিরেছে। আনন্দ মাঝে মধ্যে বোনকে মারধর করত জানতাম। কিন্তু নেশার চোটে একেবারে খুন করে ফেলবে কখনোই ভাবতে পারিনি।”