ঘরে-বাইরে চাপ, অবৈধ গুমটি সরালেন তৃণমূলের কাউন্সিলর

বাদানুবাদে জড়িয়েছেন খোদ মহকুমাশাসকের সঙ্গে। প্রতিবাদে শহরে মিছিলও নামিয়েছেন। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে সেই তৃণমূল নেতাই শেষমেশ অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলতে বাধ্য হলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৫ ০১:২১
Share:

নিজের দোকান সরিয়ে নিচ্ছেন আব্বাস হোসেন। —নিজস্ব চিত্র।

বাদানুবাদে জড়িয়েছেন খোদ মহকুমাশাসকের সঙ্গে। প্রতিবাদে শহরে মিছিলও নামিয়েছেন। ঘরে-বাইরে চাপের মুখে সেই তৃণমূল নেতাই শেষমেশ অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলতে বাধ্য হলেন।

Advertisement

শনিবার রামপুরহাট শহরের ওই ঘটনা অবশ্য শাসকদল তৃণমূলকে জোর অস্বস্তি থেকে বাঁচাল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ঘটনা হল, বর্তমান এসডিও উমাশঙ্কর এস-এর চেষ্টায় শহরের একের পর এক দখল হয়ে যাওয়া নির্মাণ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর আব্বাস হোসেন প্রথম থেকেই ওই উচ্ছেদ অভিযানের বিরোধিতা করে আসেছিলেন। রামপুরহাট–দুমকা রোডে, ডাকবাংলা মোড় এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে থাকা ওই নেতার অবৈধ একটি গুমটি বাঁচাতেই তাঁর ওই বিরোধিতা বলে বিরোধীদের দাবি।

বস্তুত, প্রশাসন থেকে একাধিক বার সতর্ক করা হলেও আব্বাস গুমটি না সরিয়ে নিজের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। শাসকদলের নেতা হওয়ার কারণেই তিনি পার পেয়ে যাচ্ছেন, এমন বার্তা শহরজুড়ে ছড়াচ্ছিল। তা নিয়ে প্রশাসনের অন্দরে তো বটেই ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল তৃণমূলেও। তৃণমূল সূত্রের খবর, মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি—সকলেই রাস্তা ছেড়ে গুমটি সরিয়ে নিতে বললেও ওই তৃণমূল নেতা এতদিন কর্ণপাত করছিলেন না। অবশেষে দিন তিনেক আগে মহকুমাশাসক এ ব্যাপারে আশিসবাবুকে বলার পরেই শুক্রবার সন্ধ্যায় রামপুরহাট হাইস্কুল মাঠে তৃণমূল নেতৃত্ব দীর্ঘ আলোচনায় বসে। সেখানে আশিসবাবু, অশ্বিনীবাবু ছাড়াও উপ-পুরপ্রধান সুকান্ত সরকার, তৃণমূলের শহর সভাপতি সুশান্ত মুখোপাধ্যায় আব্বাসকে ফের গুমটি সরিয়ে নিতে বলেন। তাঁকে এমনও বার্তা দেওয়া হয়, গুমটি না সরালে প্রশাসন তা নিজে থেকে ভেঙে দিলে এলাকায় দলেরই সম্মানহানি হবে। শেষমেশ ওই তৃণমূল নেতা গুমটি ভেঙে ফেলতে রাজি হন।

Advertisement

তারই প্রেক্ষিতে এ দিন সকালে আব্বাসকে দেখা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে রাস্তা জবরদখল করে থাকা গুমটিটি ভাঙার ব্যাপারে তদারকি করছেন। চোখেমুখে বিমর্ষ ভাব স্পষ্ট। কেন ভেঙে ফেললেন? তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার কোনও বক্তব্য নেই। যা লেখার লিখবেন।’’ অন্য দিকে, এ দিনই মহকুমাশাসকের নির্দেশে পুরসভা থেকে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ নির্মাণ সরিয়ে নেওয়ার জন্য মাইকে প্রচার চালানো হয়। হাটতলা, দেশবন্ধু রোড, ডাকবাংলা পাড়া, পাঁচমাথা মোড় এলাকায় থাকা ওই সব অবৈধ নির্মাণ সরিয়ে ফেলার জন্য দু’দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। সরানো না হলে প্রশাসনই তা ভেঙে ফেলবে।

এ দিকে, বাজার এলাকাগুলি দখলমুক্ত রাখার ব্যাপারেও ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা শুরু করেছে প্রশাসন। হাটতলার ভিতরে যাতে সহজে ময়লা ফেলার গাড়ি ঢুকতে পারে তার জন্য এ দিন ব্যবসায়ীদের দোকানের সামনে টাঙ্গিয়ে রাখা প্লাস্টিক, তারপোলিন ও অন্যান্য মালপত্র সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন এসডিও এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত রায়। এ দিনই হাটতলা এলাকার একটি দোকান থেকে বেআইনি ভাবে রাখা প্লাস্টিক কাপ, গ্লাস বাজেয়াপ্ত করেন উমাশঙ্করবাবু। পরে তিনি পুরপ্রধান এবং এলাকার বিজেপি কাউন্সিলর শুভাশিস চৌধুরীকে হাটতলা এলাকার জঞ্জাল নিয়মিত দু’বেলা ট্রাক্টরে ঢুকিয়ে পরিস্কার রাখার ব্যবস্থা করার নির্দেশও দেন। আশিসবাবুর সঙ্গেও দেখা করে তিনি একই অনুরোধ রাখেন। শুভাশিসবাবু, অশ্বিনীবাবু এবং আশিসবাবু— প্রত্যেকেই মেনে নেন, ‘‘এ ব্যাপারে দীর্ঘ দিন থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ীদের একাংশ দীর্ঘ দিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু, কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।’’

এসডিও অবশ্য এ দিনও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এখানকার সমস্যা দূর করতেই হবে। আজ, রবিবার থেকে এ নিয়ে মাইকে প্রচার করা হবে। তাতে কাজ না দিলে প্রশাসন নিজে ব্যবস্থা নেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন