অবৈধ হোমের হদিস এ বার সুপুরে

ফের অবৈধ ভাবে চলা একটি বেসরকারি হোমের হদিস মিলল দক্ষিণ বাঁকুড়ায়। এ বার খাতড়ার সুপুরে। খবর পেয়েই ওই হোম পরিদর্শন করেন জেলা চাইল্ড লাইনের আধিকারিকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৮
Share:

এই হোম ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র।

ফের অবৈধ ভাবে চলা একটি বেসরকারি হোমের হদিস মিলল দক্ষিণ বাঁকুড়ায়। এ বার খাতড়ার সুপুরে। খবর পেয়েই ওই হোম পরিদর্শন করেন জেলা চাইল্ড লাইনের আধিকারিকেরা। চাইল্ড লাইন জানিয়েছে, শিশুদের রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র ওই হোম কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেনি। অথচ, বেনিয়ম ভাবে প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলছে ওই হোম। গোটা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে জেলা শিশু কল্যাণ সমিতি এবং জেলা সমাজ কল্যাণ দফতরকে জমা দিয়েছে চাইল্ড লাইন।
বেসরকারি হোমের নামে নানা ধরনের অভিযোগ আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল। তবে সবাই চমকে যান, ২০১৪ সালে বাঁকুড়ার হরিয়ালগাড়া এলাকার একটি হোমের আবাসিক কিশোরীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা করানোর অভিযোগ সামনে আসার পরে। সেখানেই ছেদ পড়েনি। গত বছর সিমলাপালের একটি হোমের কিশোর আবাসিকদের উপর যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে হোম কর্তৃপক্ষেরই লোকজনের বিরুদ্ধে। ওই বছরই বারিকুলের ঝিলিমিলিতেও আরও দু’টি অবৈধ হোমে কিশোরদের অন্ধকার ঘরে রাখার অভিযোগ উঠেছিল। গত তিন বছরে জেলায় অন্তত চারটি বেআইনি হোম বন্ধ করে দেয় বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, জেলায় অবৈধ হোমের তালিকায় নতুন সংযোজন খাতড়ার সুপুরের ওই হোম।
কী ভাবে খোঁজ মিলল এই হোমের? চাইল্ড লাইন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার তাদের হেল্পলাইনে (১০৯৮ নম্বর) ফোন আসে ওই হোমের দুই আবাসিকের অভিভাবকদের। তাঁরা চাইল্ড লাইনের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘ওই হোমের দুই আবাসিক সরকারি খরচে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু হোম কর্তৃপক্ষ তাদের ছাড়তে রাজি হচ্ছে না।’’ ফোনে অভিযোগ পেয়েই বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সজল শীল এবং সদস্য সব্যসাচী তিওয়ারি ও শ্রীমন্ত বাউরি ওই হোম পরিদর্শনে যান।
তাঁরা জানাচ্ছেন, ওই হোমে বাঁকুড়া জেলা তো বটেই, বাইরের জেলারও ৭-১৪ বছর বয়সের ১২ জন আদিবাসী আবাসিক রয়েছে। তারা স্থানীয় সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করে। পরিদর্শকদের দাবি, আবাসিকদের রাখার জন্য বৈধ লাইসেন্স বা রেজিস্ট্রশন হোম কর্তৃপক্ষ তাঁদের দেখাতে পারেননি। হোমে ভর্তি নেওয়ার সময় ছাত্রদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ৫০ টাকার একটি স্ট্যাম্প পেপারে লিখিয়ে নেওয়া হয়, যে তাঁরা স্বেচ্ছায় ওই হোমে তাঁদের ছেলেদের রাখে যাচ্ছেন।
ওই হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে সুপুর সংলগ্ন এলাকায় এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ২৯ শতক জমি কিনে ওই হোমটি তৈরি করা হয়। কেরলের একটি বেসরকারি সংস্থা ওই হোম চালায়। হোমের ইনচার্জ সুশীল সর্দার শুক্রবার দাবি করেন, “হোম চালানোর জন্য এত অনুমতি লাগে বলে আমাদের জানা ছিল না।” বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সজলবাবু বলেন, “হোম চালানোর জন্য এবং আবাসিক রাখার জন্য ওই হোম কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের কাছ থেকে কোনও অনুমতিই নেয়নি দেখে তাজ্জব হয়ে গিয়েছি। ওই হোম সম্পর্কে একটি রিপোর্ট জেলা সমাজ কল্যাণ দফতর ও শিশু কল্যাণ সমিতিকে জমা দিয়েছি।”
বাঁকুড়ার শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মৈনুর আলম বলেন, “অবৈধ ভাবে ওই হোমটি চলছিল বলে চাইল্ড লাইনের আধিকারিকেরা জানতে পেরেছেন। চাইল্ড লাইনের রিপোর্ট হাতে পেলেই হোম কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠাব।” জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক সুরেন্দ্রপ্রসাদ ভকত বলেন, “বেআইনি হোম বন্ধ করতে জেলা জুড়ে অভিযান চলছে। সুপুরের ওই হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন