পথে একজোট জনতা

নেশা রুখতে সামনে ইমাম

নেশার কবলে যুব সমাজ। তার জেরে এলাকায় বাড়ছে ড্রাগের নেশায় আক্রান্তের সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাদক বিক্রেতা। নেশার দ্রব্য কিনতে যুবকেরা হাত পাকাচ্ছে চুরি-ছিনতাইয়েও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ০১:১২
Share:

হুঁশিয়ার। সিউড়ির রাস্তায় মাদক-বিরোধী প্রচারে পা মেলালেন বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র

নেশার কবলে যুব সমাজ। তার জেরে এলাকায় বাড়ছে ড্রাগের নেশায় আক্রান্তের সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাদক বিক্রেতা। নেশার দ্রব্য কিনতে যুবকেরা হাত পাকাচ্ছে চুরি-ছিনতাইয়েও। অথচ নির্বিকার পুলিশ-প্রশাসন। ছবিটা পাল্টাতে এ বার তাই আসরে নামলেন এলাকার মানুষেরাই। তৈরি হল নেশাগ্রস্ত ও বিক্রেতাদের তালিকা। স্থানীয় মসজিদের ইমামের নেতৃত্বে মিছিল করে প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেশার বিপদ সম্বন্ধে বোঝানোর পাশাপাশি সতর্কও করল জনতা।

Advertisement

রবিবার সকালে এমনই এক অভিযানের সাক্ষী থাকল সিউড়ির ৩ নম্বর ওয়ার্ড। মাদক রুখতে ইমাম মহম্মদ আসগর আলির নেতৃত্বে স্থানীয় হাটজনবাজার, স্টেশন মোড় সংলগ্ন এবং ফকিরপাড়া এলাকায় প্রচার চালালেন গ্রাম কমিটি, মাদ্রাসা কমিটি, মসজিদ কমিটির সদস্য এবং পদাধিকারীরা। এলাকাবাসীর দাবি, গত তিন বছরে ব্রাউন সুগারের নেশার কবলে পড়ে বহু তরুণের জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে। অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। কিন্তু নেশাগ্রস্তদের সংখ্যা কমার বদলে বেড়েই চলেছে। আর তাদের হাতে নেশার দ্রব্য তুলে দিচ্ছেন পাড়ারই কিছু লোক। তারাই বাইরে থেকে আসা কারবারিদের কাছ থেকে মাদক কিনে নিশ্চিন্তে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।

ইমাম আসগর আলি এবং গ্রাম কমিটির সম্পাদক শেখ কবীরের কথায়, ‘‘বর্তমানে এলাকার ৫০-৬০ জন নেশা করছে। ওদের মধ্যে ১৫-২৫ বছর বয়সীদের সংখ্যাই বেশি। নেশাগ্রস্তেরা তো বটেই, এতে শেষ হয়ে যাচ্ছে পরিবারও। নেশার দ্রব্য কেনার টাকা জোগাতে বাড়ছে চুরি, ছিনতাই। এলাকার মানুষের করুণ আর্তির কারণে এবং পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছিল দেখেই আমাদের এই পদক্ষেপ।’’ ঘটনা হল, দিন কয়েক আগে শহর লাগোয়া হাটজনবাজার কলোনি থেকে দুই আন্তর্জাতিক মাদক কারবারিকে ধরেছে দিল্লি পুলিশ। পরিস্থিতি যে ভয়াবহ, একমত সিউড়ির বাসিন্দারও। শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর কাজী ফরজুদ্দিন মানছেন, ‘‘প্রশাসনিক তৎপরতা সেই পর্যায়ে না থাকায় আমাদেরকেই সচেতন হতে হচ্ছে। শনিবারই সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে এক গাঁজা ব্যবসায়ী এবং এক ব্রাউন সুগার বিক্রেতাকে হাতেনাতে ধরা হয়েছিল। আপাতত সতর্ক করে ছেড়ে দিয়েছি। তবে শিক্ষা না নিলে পুলিশের হাতে তুলে দেব।’’ তাঁর ক্ষোভ, নেশার রসদ জোগাতে পাড়ায় পাড়ায় চুরি বেড়েছে। গত কয়েক মাসে তাঁর ওয়ার্ড থেকেই অন্তত ২৪টি পথবাতি (হ্যালোজেন) চুরি গিয়েছে।

Advertisement

এ দিনের অভিযানে সামিল বাসিন্দারা জানান, এলাকার নেশাগ্রস্ত এবং বিক্রেতা মিলিয়ে তালিকাভুক্ত ৩৮ জনের বাড়িতে গিয়ে প্রত্যেককে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। ইমাম সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নেশার দ্রব্য কিছুতেই এলাকায় বিক্রি হতে দেবেন না। প্রয়োজনে আসক্তদের নেশামুক্তি ঘটাতে চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হবে। এখনও পর্যন্ত এগিয়ে না এলেও দরকারে প্রশাসনের সাহায্যও নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ইমাম। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই দাবি, ‘‘পুলিশ দায়িত্ব পালন করলে কি এ ভাবে পথে নামতে হত? পা়ড়ার লোক জানে, শহরের সবাই জানে। কেবল পুলিশই জানে না— এমনটা বিশ্বাস করা কঠিন। সে ক্ষেত্রে পুলিশের সঙ্গে কারবারিদের অন্য রকম সমীকরণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’’

এ দিকে জেলা পুলিশ ও আবগারি দফতরের দুই শীর্ষ কর্তা দাবি করছেন, যত নষ্টের মূলে রয়েছে গত এক দশক ধরে জেলায় চলা অবৈধ পোস্ত চাষের রমরমা। বিশেষ করে দুবরাজপুর ও খয়রাশোল এলাকায় এ বারও কয়েক হাজার একর জমিতে পোস্ত চাষ হয়েছে। তাই পোস্তর গুটি চিরে পাওয়া আঠার কমতি নেই বাজারে। সেই আঠার সঙ্গে রাসায়নিক মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে ব্রাউন সুগার। আর তারই কবলে পড়ছে একের পর এক এলাকার যুব সম্প্রদায়। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘একবার নেশার কবলে পড়লে সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই কঠিন। এ ক্ষেত্রে সিউড়ির অবস্থা অত্যন্ত বিপজ্জনক।’’

আফগারি দফতর, পুলিশ ব্যবস্থা নেয় না কেন?

পুলিশের এক কর্তা মানছেন, ‘‘জাল এত দূর ছড়িয়েছে যে নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর। নেশাগ্রস্ত কাউকে ধরলেও বিপদ রয়েছে। কেননা নেশার দ্রব্য না পেলে যে ভাবে পাগলের মতো আচরণ করে, যে কোনও সময় হিতে বিপরীত হতে পারে। ভয় সেখানেও।’’ জেলা আবগারি দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট তপনকুমার রায়ের অবশ্য দাবি, মাদক রুখতে সব সময়ই অভিযান চলে। তবে, দফতর বর্তমানে চাঁইদের সন্ধান চালাচ্ছে। সাপ্লাই লাইন কেটে ফেলতে পারলে ছবিটা অনেকটাই পাল্টে যাবে বলে ওই কর্তার মত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন