Satabdi Roy

অনুব্রত নেই, শতাব্দীর গুরুত্ব আরও বাড়ছে?

সরাসরি উত্তর এড়ালেও দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশ বলছেন, ‘‘যিনি টানা তিন বারের সাংসদ ও দলের কোর কমিটির সদস্য তাঁর তো গুরুত্ব থাকাটা স্বাভাবিক।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৩ ০৯:১৩
Share:

শতাব্দী রায়। নিজস্ব চিত্র।

তিন বারের সংসদ তিনি। দলের জেলা কোর কমিটির সদস্যও বটে। তবে ইদানিং দলের সংগঠনের খুঁটিনাটিতে নজর দেওয়া থেকে বিভিন্ন মঞ্চে বক্তব্য পেশ, সবেতেই যেন আলাদা করে নজরে পড়ছে বীরভূম কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়কে। চর্চা শুরু হয়েছে, অনুব্রতহীন বীরভূমে কি সংসদ শতাব্দী রায়ের গুরুত্ব বাড়ছে?

Advertisement

রুপোলি পর্দার নায়িকা শতাব্দী রায়ের রাজনৈতিক জীবন শুরু ২০০৯ সালে বীরভূম লোকসভা প্রার্থী হওয়া এবং জেতা দিয়ে। তার পরেও দু’বার জয়ী হয়েছেন। তবে আগে সাংসদ হিসাবে দায়িত্ব পালন ছাড়া সেভাবে দলের সংগঠন নিয়ে মাথা ঘামাতে দেখা যেত না শতাব্দীকে। কিন্তু এখন সত্যিই দলের সংগঠনে রদবদল থেকে নেতা-কর্মীদের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দেওয়ার কাজটা নিয়মিতই তাঁকে করতে দেখা যাচ্ছে।

সম্প্রতি কাজল শেখের জেলা পরিষদের সভাধিপতি হিসাবে শপথ নেওয়ার পর অতি উৎসাহী কাজল অনুগামীদের প্রতি সংযত থাকার বার্তা দেন তিনি। তাছাড়া দুবরাজপুরের লোবায় এসে দলের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রধান বেছে নেওয়ার জন্য দায়ী নেতাদের হুঁশিয়ারি, বা নলহাটি ২ ব্লকে গিয়ে কেন পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল খারাপ হল প্রশ্ন তোলা— সবেতেই প্রমাণ মিলেছে শতাব্দী আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisement

সরাসরি উত্তর এড়ালেও দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশ বলছেন, ‘‘যিনি টানা তিন বারের সাংসদ ও দলের কোর কমিটির সদস্য তাঁর তো গুরুত্ব থাকাটা স্বাভাবিক। জেলাটা হাতের তালুর মতো চেনা, দলের নেতা কর্মীদের কাজকর্ম গতিবিধি সম্পর্কে যাঁর সম্যক ধারাণা রয়েছে তিনি তো সক্রিয় হবেনই।’’ তবে দলের নেতারা মানছেন, এটা ঠিক যে আগে শতাব্দী সংগঠন নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাতেন না। অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই বদলে যায় পরিস্থিতি।

শতাব্দীও মানছেন, ‘‘আমি আগে সাংগঠনিক কাজ সেভাবে দেখতাম না। কেষ্টদাই সংগঠনের সবটা দেখতেন। আমরা কাজ ভাগ করে নেওয়ার মতো করে দেখতাম।’’ সেই সঙ্গেই শতাব্দী বলছেন, ‘‘মাথা হিসেবে কেষ্টদা সেই অর্থে যেহেতু সামনে নেই, তার ফলে তো মানুষকে যা বলার, দলের কর্মীদের ধরে রাথতে, চাঙ্গা করতে যেগুলো বলার প্রয়োজন সেই দায়িত্ব তো নিতেই হবে। গুরুত্ব দিতে হবে কারও বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগকেও।’’ শতাব্দীর সংযোজন, ‘‘আসল লক্ষ্য তো দলের ভাল করা। তবে একক ভাবে নয়, মিলিত ভাবেই সেই কাজটা করছি।’’

২০০৯ সালে ‘নতুন মুখ’ হিসেবে বীরভূমে আসনে প্রার্থী হয়েই বাজিমাত করেছিলেন শতাব্দী রায়৷ যদিও তাঁকে প্রার্থী করা নিয়ে দলের দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছিল বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। সেই সময় অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে শতাব্দীর সম্পর্ক মসৃণ ছিল না। মূলত আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও নিজের তারকা-ইমেজের উপর নির্ভর করেই শতাব্দী জয় পান বলে দলের নেতাদের অনেকের দাবি।

দ্বিতীয় বার দল ফের তাঁকে যখন প্রার্থী করে তখন অবশ্য অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হয়েছে শতাব্দীর। শেষ বার ফের সংঘাত তৈরি হল বলে দল সূত্রে দাবি। জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই নাকি শতাব্দীকে প্রার্থী হিসাবে চাননি। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শতাব্দীকেই প্রার্থী করেন। শেষ পর্যন্ত দলের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে পাশে দাঁড়ান কেষ্ট। কিন্তু অনুব্রত জেলে যাওয়ার পরে পরিস্থিতি আমূল বদলে গিয়েছে। সেই কারণেই শতাব্দী নিজের উপরেই বেশি ভরসা করছেন বলে মত দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশের।

শতাব্দী বলছেন, ‘‘রাজনীতিতে আসার আগে এবং রাজনীতিতে আসার পরেও আমি সবসময় যেটা বিশ্বাস করেছি, সেটা বলেছি। তখন রাজনৈতিক কথা না বললেও আমার জীবনবোধ থেকে কথা বলতাম। এখনও তাই। ছকে বাঁধা কথা আমি বলি না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এতদিন ধরে নেতা কর্মীদের দেখছি। তাঁদের চিনি। কে ভাল সংগঠন। কে দ্বন্দ্ব পাকাতে পারে জানি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন