রঘুনাথপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র

কয়লা নিয়ে আসতে বসছে রেল

 কয়লার জোগানে ঘাটতি। তাতেই পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন করতে সমস্যায় পড়েছে রঘুনাথপুরের ডিভিসি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। দু’টি ইউনিটে দৈনিক ১২০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের ক্ষমতা থাকলেও পর্যাপ্ত কয়লার অভাবে শুধু একটি মাত্র ইউনিটই চালানো হচ্ছে।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৫১
Share:

কয়লার জোগানে ঘাটতি। তাতেই পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন করতে সমস্যায় পড়েছে রঘুনাথপুরের ডিভিসি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। দু’টি ইউনিটে দৈনিক ১২০০ মেগাওয়াট উৎপাদনের ক্ষমতা থাকলেও পর্যাপ্ত কয়লার অভাবে শুধু একটি মাত্র ইউনিটই চালানো হচ্ছে। তাতে উৎপাদন হচ্ছে গড়ে ৪০০ মেগাওয়াট। এই প্রেক্ষিতে রেলপথে কয়লা আসার দিন গুনছে ডিভিসি।

Advertisement

ডিভিসি সূত্রে খবর, এক বছরের মধ্যে রেল করিডর তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের তিনটি স্টেশনের সাইডিংয়ে কয়লা নামিয়ে সড়কপথে তা বিদ্যুৎকেন্দ্রে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডিভিসি কর্তৃপক্ষের আশা, এই আরসিআর মোডে (রেল কাম রোড করিডর) কয়লা আনার কাজ শুরু হলে বছরে ২৮ লক্ষ টন কয়লা আসবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে। তাতেও অবশ্য পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন করা যাবে না। কিন্তু ওই পরিমাণ কয়লা এলেও সামগ্রিক ভাবে উৎপাদন অনেকটাই বাড়ানো যাবে।

ডিভিসি-র এই প্রকল্পের মুখ্য বাস্তুকার মহম্মদ ইয়াসিন বলেন, ‘‘আরসিআর মোডে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের রুকনি, রাধানগর ও চৌরাশি স্টেশনে মালগাড়ি থেকে কয়লা নামানো হবে। সেখান থেকে সড়ক পথে কয়লা আসবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে। আগামী বছরের শুরুতেই বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার জোগান কয়েকগুন বাড়বে।”

Advertisement

জমি-জটে আটকে এমনিতেই রঘুনাথপুরের ডিভিসি-র এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যমাত্রা বার বার পিছিয়েছে। ওয়াটার করিডর তথা জলের পাইপ লাইন পাতার কাজের হাজারো বিঘ্ন মিটিয়ে শেষ পর্যন্ত বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়েছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এ বার ডিভিসি চাইছে রঘুনাথপুর থেকে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন শুরু করতে। ডিভিসি সূত্রেই জানা গিয়েছে, রঘুনাথপুরের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য পিপিএ (পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট) কয়েকটি রাজ্যের সঙ্গে হয়ে আছে। পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করলে, বিদ্যুৎকেন্দ্র লাভের মুখ দেখবে।

সরাসরি বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত রেললাইন পেতে মালগাড়িতে কয়লা নিয়ে আসার পরিকল্পনা থাকলেও, তা নিয়ে জমি জট এখনও পুরোপুরি কাটেনি। রেললাইন পাতার জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় চারশো একর জমির প্রায় সবটাই অধিগ্রহণ করে ডিভিসিকে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণে রাজি না হওয়ায় অবশিষ্ট ২১ একর জমি নিজেরাই কিনতে মাঠে নেমেছে ডিভিসি। রঘুনাথপুর ১ ও ২ ব্লকের মোট ২১টি মৌজা থেকে ওই পরিমাণ জমি কিনতে চায় ডিভিসি।

সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে ১১ একর জমি কেনা হয়েছে। বাকি ১০ একর জমি কেনার কাজ চলছে। তবে জমির দাম ও মালিকানা সংক্রান্ত কিছু সমস্যায়, জমি কেনার কাজ প্রত্যাশিত গতিতে চলছে না। বস্তুত জমি হাতে পেলেই রেললাইন পাতার কাজে আরও গতি আসবে বলে জানাচ্ছেন ডিভিসি-র কর্তারা। মুখ্য বাস্তুকার জানাচ্ছেন, বর্তমানে বিসিসিএল-এর ঝাড়খণ্ডের কয়েকটি খনি থেকে সড়কপথে দৈনিক সাড়ে পাঁচ হাজার টন কয়লা আসছে। এরই মধ্যে কোল ইন্ডিয়ার সঙ্গে ডিভিসি-র ফুয়েল সাপ্লাই এগ্রিমেন্ট (এফএসএ) সম্পন্ন হয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী, বছরে ৫০ লক্ষ টন কয়লা ডিভিসি-র রঘুনাথপুরের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইসিএল, বিসিসিএল ও সিসিএল-এর কয়লাখনিগুলি থেকে সরবরাহ হবে।

মুখ্য বাস্তুকার বলেন, ‘‘ফুয়েল সাপ্লাই এগ্রিমেন্ট হয়ে যাওয়াতে কয়লা পেতে সমস্যা নেই। কিন্তু সড়ক পথে এই বিপুল পরিমাণ কয়লা আনা সম্ভব। তাই আমরা যতটা দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত রেল লাইন পাতার কাজ সেরে ফেলতে চাইছি।”

আদ্রা ডিভিশনের বেড়ো ও জয়চণ্ডী স্টেশনের সাইডিং থেকে রেললাইনের মাধ্যমে কয়লা আসবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে। বেড়োয় সাইডিং তৈরি হয়ে গিয়েছে। জয়চণ্ডীতে সম্প্রতি সেই কাজ শুরু হয়েছে। বেড়ো ও জয়চণ্ডী পাহাড় স্টেশনের মাঝে তিনকিনা রেল গেট এলাকা থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে পর্যন্ত সরাসরি রেলপথ তৈরি করতে চাইছে ডিভিসি। সে জন্য তিনকিনা থেকে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কের নতুনডি মোড় অবধি রেললাইন পাতার কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। তবে সড়কের অন্যপ্রান্ত থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত রেললাইন পাতার কাজ পুরোটাই বাকি। এই এলাকাতেই জমি কেনার ক্ষেত্রে স্থানীয় কিছু সমস্যায় পড়েছে ডিভিসি।

তবে রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থার আশা, জেলা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে বাকি ১০ একর জমি দ্রুত কিনে ফেলতে পারবে তারা। মুখ্য বাস্তুকার জানান, জমির দাম নির্ধারণ থেকে শুরু করে জমি মালিকদের সাথে আলোচনা— প্রতি ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। রঘুনাথপুরের ডিভিসির এই বিদ্যুৎকেন্দ্র যাতে কোনও সমস্যায় না পড়ে, সেই বিষয়ে অতীতে প্রতিবারই জেলা সফরে এসে তা দেখার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শাসকদলের স্থানীয় বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, ডিভিসি কোনও সমস্যার কথা জানালেই তা মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। রেল লাইন পাতার জন্য বাকি জমি কিনতে সমস্যায় পড়তে হবে না ডিভিসিকে।” স্থানীয় বাসিন্দা ও জমি মালিকদের সাথে তাঁরা দলগত ভাবে আলোচনা চালাচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন বিধায়ক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন