ময়ূরাক্ষীতে ডুবে নিখোঁজ দুই

দিনভর তল্লাশি, মিলল শিশুর দেহ

নদীতে স্নান করতে নেমে শনিবার যে দুই নাবালিকা তলিয়ে গিয়েছিল তাদের মধ্যে ববি সাউ (১১)-এর দেহ মিলল রবিবার ভোরে। বুলু গুপ্তর (১০) খোঁজে এ দিন সকাল থেকে নদীতে সাত সদস্যের ডুবুরি ও দুটি স্পীড বোর্ট নামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০০:৪৭
Share:

তল্লাশিতে ডুবুরি। —নিজস্ব চিত্র

নদীতে স্নান করতে নেমে শনিবার যে দুই নাবালিকা তলিয়ে গিয়েছিল তাদের মধ্যে ববি সাউ (১১)-এর দেহ মিলল রবিবার ভোরে। বুলু গুপ্তর (১০) খোঁজে এ দিন সকাল থেকে নদীতে সাত সদস্যের ডুবুরি ও দুটি স্পীড বোর্ট নামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত তার কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, নদী থেকে বালি তোলার জন্যই এরকম দুর্ঘটনা বাড়ছে। বালির খালের জমা জলে পড়ে এর আগেও অনেকে মারা গিয়েছেন।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার দুপুর দুটো নাগাদ সাঁইথিয়ার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুবপুরে ময়ূরাক্ষী নদীতে কয়েকজন ছেলেমেয়েরা স্নান করতে যায়। তাদেরই দু’জন নদীর জলে তলিয়ে যায়। একজন সুনীতা গুপ্তর মেয়ে বুলু ও অন্যজন প্রতিবেশী সুনীল সাউয়ের মেয়ে ববি। স্থানীয় লোকজনদের কথায়, ওরা যেখানে স্নান করতে নেমেছিল, সেখানে বালি তোলার গভীর খাল ছিল। নদীতে গত কয়েকদিন থেকে জল ছাড়ায় সমস্ত বালি খালগুলি জলে ভরে গিয়েছে। সম্ভবত সেই খালে পড়ে যাওয়াতেই তারা তলিয়ে যায়। অবিলম্বে নদী সংস্কার ও বালিঘাট বন্ধের দাবি জানিয়েছেন এলাকার লোকজন।

সাঁইথিয়া দু’নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুনীতা গুপ্তর পরিবার সূত্রে জানা যায়, তাঁর মেয়ে লক্ষী দাসের কুতুবপুরের বাড়িতে শনিবার পুজো ছিল। সেখানে গিয়েই প্রতিবেশী কয়েকজন শিশুর সঙ্গে নদীতে গিয়েছিল ববি ও বুলু। দুপুর দুটো নাগাদ খবর আসে, বুলু-ববিরা নদীর জলে তলিয়ে গেছে। তারপর থেকে পরিবার ও স্থানীয় লোকজন নদীতে তল্লাশি চালায়। এ দিন ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ, ববির দেহ নদীতে ভেসে ওঠে।

Advertisement

নদীর পাড়ে পরিজনদের সঙ্গে বসে ছিলেন ছিলেন সুনীতাদেবী। মেয়ে জলে ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে মুখে দানা পর্যন্ত কাটেননি। সারা রাত জেগে আছেন। একবার নদীর চড়ে, একবার পাড়ে এ ভাবেই খুঁজে বেড়িয়েছেন মেয়েকে। কোনও রকমে বলেন, ‘‘অনেকদিন আগে স্বামীকে হারিয়েছি। তারপর মেয়েকে যে এ ভাবে হারাতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি।’’ ববির মৃতদেহ উদ্ধারের পর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই ছিলেন ববির বাবা সুনীল গুপ্ত ও মা কাকলীদেবী। সুনীলবাবু বলেন, ‘‘একেই বলে অদৃষ্ট!’’ তারপরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কাকলীদেবী মৃত মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন।

প্রশাসন সূত্রের খবর, দুই নাবালিকা উদ্ধারে শনিবার গভীর রাত্রে লাভপুর থেকে একটি স্পিড বোর্ট আসে। রবিবার সকালে আরেকটি স্পিড বোর্ট নিয়ে আসানশোল থেকে এক এএসআই সহ আট সদস্যর ডুবুরি দল আসে। তল্লাশির সুবিধার্তে তিলপাড়া জলাধার থেকে জল ছাড়া কমিয়ে দেওয়া হয়। সকালে প্রথমে একটি বোর্ট বুলুর খোঁজে নামে। তাতে সাঁইথিয়া থানার ওসি সুজয় টুঙ্গা, স্থানীয় কাউন্সিলার মিঠু কোনাইয়ের স্বামী সঞ্জয় কোনাইরা সকলে চেপে তল্লাসি চালায়। তার ঘন্টা দু’য়েক পর ডুবুরিরা নামেন। পরে দ্বিতীয় স্পীড বোর্টটি নামানো হয়। সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘ঘটনাস্থল থেকে পূর্ব দিকে আরও ৩-৪ কিলোমিটার পর্যন্ত তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়। এখনও পর্যন্ত বুলুর কোনও হদিস পাওয়া যায়নি।’’

আসানশোলের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের ১৬ নম্বর ব্যাটেলিয়ানের এএসআই চঞ্চল শর্মা জানান, ঘটনাস্থলের ২০০ মিটার মতো এলাকায় ডুবুরিরা এবং বোটে করে তল্লাশি চালানো হয়। সাঁইথিয়ার তৃণমূল পুরপ্রধান বিপ্লব দত্ত বলেন, ‘‘খুব দুঃখ জনক ঘটনা। বাচ্চাটির খোঁজে সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি উদ্ধার করা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন