স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ পুরুলিয়ায়

অব্যবস্থা দেখে ক্ষুব্ধ এসডিও

আগাম খবর না দিয়েই শুক্রবার মহকুমাশাসক (মানবাজার) সঞ্জয় পাল, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট তারাপদ দাস, বিডিও নিলাদ্রী সরকার-সহ প্রশাসনের কর্তারা মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতাল পরিদর্শনে যান।

Advertisement

সমীর দত্ত

মানবাজার শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৪২
Share:

রান্নাঘরে: পরিচ্ছন্নতা আর মাছের টুকরোর মাপ নিয়ে মহকুমাশাসকের প্রশ্নের মুখে কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালের অব্যবস্থা নিয়ে আগেই অভিযোগ উঠেছিল। শুক্রবার হঠাৎ পরিদর্শনে সেটাই চাক্ষুষ করলেন মহকুমাশাসক। এ দিন মহকুমাশাসকের নেতৃত্বে যে পরিদর্শক দল হাসপাতালে এসেছিল, তাঁদের সঙ্গে ছিল বিভিন্ন নথিপত্র। মিলিয়ে দেখার জন্য হাসপাতাল থেকেও নথি চান তাঁরা। সব মিলিয়ে পরিদর্শকদের সামনে নাস্তানাবুদ হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যাওয়ার আগে, সুষ্ঠু ভাবে হাসপাতাল পরিচালনা করার জন্য মহকুমাশাসক নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন বিএমওএইচ-কে।

Advertisement

আগাম খবর না দিয়েই শুক্রবার মহকুমাশাসক (মানবাজার) সঞ্জয় পাল, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট তারাপদ দাস, বিডিও নিলাদ্রী সরকার-সহ প্রশাসনের কর্তারা মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতাল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ পাচ্ছি। কিছু জিনিসের অভাব রয়েছে এ কথা সত্যি, কিন্তু যা আছে সেটা দিয়েই ভাল ভাবে হাসপাতাল চালানো যায়।’’ তিনি জানান, প্রতিদিন হাসপাতালের সমস্ত ওয়ার্ড এবং চত্বর পরিষ্কার রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের সমস্ত কর্মী নিয়ম মেনে কাজ করছেন কি না, এ বার থেকে তা দেখা হবে। দায়িত্ব পালন না করলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ দিন হাসপাতালে ঢোকার মুখেই পরিদর্শক দল বিভিন্ন ওয়ার্ডে অবাঞ্ছিত লোকজনের আনাগোনা দেখতে পান। গেটে পাহারার দায়িত্বে থাকা দুই সিভিক ভল্যান্টিয়ারকে তাঁদের দায়িত্ব সম্বন্ধে এক প্রস্ত বোঝানো হয়। মেঝেয় শুয়ে থাকা রোগীদের জন্য স্টোররুম থেকে পরিদর্শকদের দৌলতে আসে শয্যা। রান্নাঘরের অবস্থা দেখে চমকে যান প্রতনিধিরা— ভাঙাচোরা, ধোঁয়া আর ঝুল ভর্তি ঘরের ছাদ থেকে চুইয়ে পড়ছে জল। স্যাঁতস্যাঁতে অস্বাস্থ্যকর দমবন্ধ পরিবেশ। বিদ্যুতের আলো নেই। ঘরের কোনায় আবর্জনার স্তূপ। রোগীদের খাবারে যে মাছ দেওয়া হয় তার মাপ দেখেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন পরিদর্শকেরা। হাসপাতালের সর্বত্র কুকুর বেড়ালের মল পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা। দেখেন, দোতলায় রোগীদের শৌচাগারে জল নেই। কোথাও আবার দরজার পাল্লা আধখানা ভেঙে ঝুলছে। কোথাও ছিটকিনি নেই। প্রতিনিধি দলের এক সদস্য বলেন, ‘‘আমরা জানি, এখানে রোগীর চাপ বেশি। কিন্তু পরিচালন ব্যবস্থায় তো কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই। নোংরা পরিবেশে মানুষ আরও অসুস্থ হয়ে পড়বেন।’’ নিয়মিত সাফাই করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা। বিডিও মানবাজার নিলাদ্রী সরকার বলেন, ‘‘হাসপাতাল চত্বর আবর্জনা মুক্ত রাখতে পঞ্চায়েত সমিতির খাত থেকে টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে।’’

Advertisement

এরই মধ্যে প্রশাসনের কর্তাদের হাতের নাগালে পেয়ে কিছু রোগীর পরিজনেরা হাসপাতালের অব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ জানান। পরিদর্শকেরাও দেখেন, পরিজনদের বিশ্রামের ঘর তালাবন্ধ। সেখানে হাসপাতালের জিনিসপত্র রাখা হয়। সেগুলি সরিয়ে ঘরটি খোলানোর ব্যবস্থা করেন তাঁরা। মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল বলেন, ‘‘গ্রামীণ হাসপাতাল হওয়ায় অনেক ব্লক এলাকা থেকে রোগীরা এখানে আসেন। পরিষেবাটা যাতে ঠিক মতো মেলে সেটা তো দেখতেই হবে।’’

বিডিও জানান, এ দিন তাঁরা বিদ্যুৎ দফতর থেকে কবে কখন লোডশেডিং হয়েছে সেই তালিকা নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘সেই তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে হাসপাতালের জেনারেটরের বিল দেখা হবে। কারচুপি দেখলে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’’ হাসপাতাল চত্বরে কাদের গাড়ি অ্যাম্বুল্যান্স হিসাবে ভাড়ায় খাটে সেই তালিকাও চান পরিদর্শকেরা। তালিকার বাইরে থাকা গাড়িগুলিকে অ্যাম্বুল্যান্স হিসাবে আদৌ মান্যতা দেওয়া হবে কি না, সেটা তাঁরা খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

এ দিন প্রতিনিধিদল রোগীদের ওয়ার্ড, আউটডোর অফিস-সহ বিভিন্ন জায়গায় যান। আগেই কর্মীদের কোয়ার্টার এবং হাসপাতালে মেরামতি হয়েছে। কতটা কাজ হয়েছে, কী রকম হয়েছে সেই সংক্রান্ত ব্যাপারে তাঁরা খোঁজখবর করেন। হাসপাতালের কর্মী না হয়েও কোয়ার্টার দখল করে রাখার অভিযোগ সেই সময়ে তাঁদের
কানে ওঠে।

বিএমওএইচ কালীপদ সোরেন এ দিন বলেন, ‘‘কিছু কর্মী আসলে নিয়ম মানেন না। কয়েকটি এজেন্সিকে এর আগে সতর্ক করা হয়েছে।’’ প্রশাসনের কর্তারাও বিএমওএইচ-কে জানিয়েছেন, নিয়ম না মানলে এ বার থেকে এক বারই সতর্ক করতে হবে। তার পরেই সোজা পদক্ষেপ করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন