শৌচাগার বাড়াতে দাওয়াই

বাঁকুড়া: এগিয়ে যাচ্ছে অন্য জেলাগুলি। কিন্তু পিছিয়ে রয়েছে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া। বাড়ি বাড়ি শৌচালয় গড়ার নির্মল বাংলা প্রকল্পে এই দুই জেলাকে নিয়ে তাই রাজ্য সরকারের মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৭ ০১:৪৩
Share:

রবীন্দ্রভবনে: মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

বাঁকুড়া: এগিয়ে যাচ্ছে অন্য জেলাগুলি। কিন্তু পিছিয়ে রয়েছে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া। বাড়ি বাড়ি শৌচালয় গড়ার নির্মল বাংলা প্রকল্পে এই দুই জেলাকে নিয়ে তাই রাজ্য সরকারের মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে। প্রকল্পের গতি বাড়াতে তাই দুই জেলার জন্যই নতুন টোটকা বের করেছেন পঞ্চায়েত দফতরের কর্তারা।

Advertisement

পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এতদিন নির্মল বাংলা প্রকল্পে বাড়ি-বাড়ি শৌচালয় গড়া হতো স্বেচ্ছ্বাসেবী সংস্থার মাধ্যমে। তবে এ বার বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার জন্য সেই নিয়ম পাল্টে ফেলা হয়েছে। এই প্রকল্পে দুই জেলার উপভোক্তারা নিজেরাই শৌচালয় গড়তে পারবেন। পরে তাঁদের টাকা দিয়ে দেবে পঞ্চায়েত দফতর।

বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনের বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের কর্তারা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও।

Advertisement

২০১৮ সালের অক্টোবর মাসের মধ্যেই নির্মল বাংলা প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে পঞ্চায়েত দফতর। কিন্তু পশ্চিমাঞ্চলের এই দুই জেলার কাজের যা হাল তাতে হতাশ প্রশাসন। এ জন্য স্বেচ্ছ্বাসেবী সংস্থাগুলির উপর ক্ষুব্ধ প্রশাসনের একাংশ। তা ছাড়া জেলায় এই ধরনের কাজে আগ্রহী স্বেচ্ছ্বাসেবী সংস্থার অভাবও রয়েছে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, বাঁকুড়া জেলা লক্ষ্যমাত্রা থেকে এখনও অনেকটাই দূরে। জেলায় প্রায় ৪ লক্ষ ৭৬ হাজার বাড়িতে শৌচালয় গড়তে নেমে এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৫৫ হাজার বাড়িতেই কেবল শৌচালয় গড়তে সক্ষম হয়েছে প্রশাসন।

রবীন্দ্রভবনে বৈঠকে আসার আগেই বাঁকুড়ার সার্কিট হাউসে মন্ত্রী সুব্রতবাবু এ নিয়ে বলেন, “শৌচালয় গড়ার জন্য আরও বেশি সংখ্যক স্বেচ্ছ্বাসেবী সংস্থা দরকার। কিন্তু তা পাওয়া যাচ্ছে না।”

এরপরে রবীন্দ্রভবনের বৈঠকে এসে পঞ্চায়েত দফতরের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার বলেন, “এ বার থেকে নির্মল বাংলা মিশন প্রকল্পে শৌচালয় গড়বেন উপভোক্তা নিজে। মাঝে কোনও স্বেচ্ছ্বাসেবী সংস্থা থাকবে না।” বৈঠক শেষে তিনি জানান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলাতেই আপাতত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তাঁর যুক্তি, “এতে কাজের গতি বাড়বে। উপভোক্তা নিজে দায়িত্ব নিয়ে শৌচালয় গড়লে তা ব্যবহারের দিকেও বেশি মনোযোগী হবেন।”

আগে এই প্রকল্পে শৌচালয় গড়ার জন্য সরকার ১০ হাজার ও উপভোক্তা ৯০০ টাকা দিতেন। নতুন নিয়মে শৌচালয় গড়া হয়ে গেলে পরিদর্শন করে উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে উপভোক্তাকে নিজের পকেট থেকেই প্রথমে শৌচালয় গড়ার খরচ বহন করতে হবে। ফলে গ্রামের দরিদ্র মানুষেরা কতটা উৎসাহিত হবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে প্রশাসনের একাংশে।

বাঁকুড়া জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “এই গরীব জেলায় পকেটের টাকা ঢেলে সাধারণ মানুষ শৌচালয় গড়তে কতটা উদ্যোগী হবেন, তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।”

যদিও উপভোক্তাদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, টাকা পেয়ে গেলে তাঁরা নিজেদের মতো করে শৌচাগার তৈরি করতে পারবেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) নবকুমার বর্মন অবশ্য আশাবাদী, ‘‘নতুন এই সিদ্ধান্তে মানুষের আগ্রহ আরও বাড়বে।’’ তিনি জানান, আগামী মাসেই জেলায় আরও ৩০ হাজার নতুন শৌচালয় গড়ার কাজ শুরু হচ্ছে। সেগুলি উপভোক্তারা নিজেরাই তৈরি করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন