এই সেই পাখি। —নিজস্ব চিত্র।
শিকারিদের খপ্পড়ে পড়েছিল পরিযায়ী পাখিটি। ডানা কেটে পাখিটিকে মেরে ফেলার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের কাছ থেকে সেই খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে পাখিটিকে উদ্ধার করে বন দফতরের হাতে তুলে দিয়েছিল। দিন কুড়ি আগে নলহাটি থানার পাইকপাড়া এলাকায় উদ্ধার হওয়া সেই ‘পেলিকান’ প্রজাতির সারসটি এখন অনেকটাই সুস্থ হওয়ার পথে। আগের মতো ডানা গজিয়ে উঠলেই ছেড়ে দেওয়া হবে রামপুরহাটের তুম্বনি রেঞ্জের দেখভালে থাকা সেই পাখি। তবে, তার আগে এলাকার মানুষের কাছে রীতিমতো দর্শনীয় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই পাখি।
ক’দিন আগেই পাখিটিকে দেখে গিয়েছেন জেলা বনাধিকারিক কল্যাণ রায়। তিনি বলছেন, ‘‘পরিযায়ী পাখিটি পেলিকান প্রজাতির। কোনও ভাবে পাখি শিকারীদের খপ্পড়ে পড়ে গিয়েছিল। পাখিটিকে উদ্ধার করার পরেই প্রয়োজনীয় পরিচর্যা চলছে।’’
সম্প্রতি তুম্বনি রেঞ্জ অফিসে গিয়ে দেখা গেল, দু’দিকের ডানা কাটা পাখিটি সুস্থ হয়ে বন দফতরের জায়গার মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে। কেউ খাবার দিতে আসলে সেই খাবার খাচ্ছে। কর্মীরা জানান, দিন কুড়ি আগে পাখিটিকে যখন প্রথম এখানে নিয়ে আসা হয়, তখন মানুষ দেখলেই সে কামড়ে দেওয়ার জন্য তেড়ে আসত। এখন অনেকটাই শান্ত আচরণ করে। এক কর্মী ছোট ছোট মাছ দিলে পাখিটি লম্বা ঠোঁট বাড়িয়ে তা দিব্যি মুখে তুলে নিল। রেঞ্জের কর্মী মহম্মদ ইনজামামুল বললেন, ‘‘পাখিটিকে তিন বেলা ছোট ছোট মাছ খেতে দেওয়া হচ্ছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জলাধারে অল্প জল ও তার উপর কাঠ ফেলে ঠান্ডা জায়গায় তাকে রাখা হয়। রাতে বনভূমির ঘেরা জায়গায় রাখা হয় পাখিটিকে।’’ পাখিটি যখন বনভূমির মধ্যে ঘোরাঘুরি করে, তখন তাকে দেখতে রেঞ্জ অফিসের পাশে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ভিড় করে।
তুম্বনি রেঞ্জ অফিসার অরিন্দম কাঞ্জিলাল জানান, সাধারণত দলবদ্ধ ভাবে থাকতে ভালবাসে এই ধরনের পাখি। অতিরিক্ত গরমে কোনও কারণে পাখিটি অসুস্থ হয়ে নেমে এসে থাকতে পারে। তাঁর কথায়, ‘‘পাখিটি হাতে পাওয়ার পরেই নলহাটিতে প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করা হয়। পাখিটি যত দিন না ডানা মেলে সম্পূর্ণ ভাবে উড়তে পাচ্ছে, তত দিন তাকে এখানে রেখেই পরিচর্যা করা হবে।’’ জেলা বনাধিকারিক জানিয়েছেন, ডানা ঠিক হলে সামনের শীতের পরেই পাখিটাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তার আগে একই প্রজাতির আরও পাখি থাকা বর্ধমানে একটি ছোট চিড়িয়াখানায় পেলিকানটিকে রেখে আরও পরিচর্যার পরিকল্পনাও দফতরের রয়েছে।
যদিও পাখি শিকারীদের এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায়নি। তাই ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও আইনানুগ পদক্ষেপ করা হয়নি।