কয়লাখনি বন্ধ হচ্ছে? বিভ্রান্তি পারবেলিয়ায়

নিতুড়িয়ায় ইসিএলের সেই পারবেলিয়া কয়লাখনি কি এ বার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে?

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

নিতুড়িয়া শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৮ ০০:৩৪
Share:

শঙ্কা: নোটিস বোর্ডে চোখ এক কর্মীর। নিজস্ব চিত্র

এক বছর আগেই কর্মীদের সুরক্ষার কারণ দেখিয়ে কয়লাখনির উৎপাদন সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। নিতুড়িয়ায় ইসিএলের সেই পারবেলিয়া কয়লাখনি কি এ বার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে? সম্প্রতি খনি কর্তৃপক্ষের দেওয়া পর পর দু’টি বিজ্ঞপ্তি ঘিরে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে কর্মীদের মধ্যে।

Advertisement

গত ১৪ অগস্ট পারবেলিয়া কয়লাখনি কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, কয়লা মন্ত্রকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই কয়লাখনি আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে বন্ধ করে দেওয়া হবে। কর্মীরা কোথায় বদলি হতে চান, তাঁদের কাছে তা নিয়ে আবেদন চাওয়া হয়। পরে আবার নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, কয়লাখনি বন্ধের বিষয়ে ইসিএলের জেসিসি-তে (জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিটি) আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

যদিও এতে স্বস্তির কোনও কারণ দেখছে না শ্রমিক সংগঠনগুলি। তাদের মতে, দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে খনি যে বন্ধ করা হচ্ছে না, এমন কথা লেখা নেই। হয়তো জেসিসিতে আলোচনার পরেই পারবেলিয়া কয়লাখনি জানুয়ারি মাস থেকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে। লোকসানে চলা এই খনি কয়লা মন্ত্রক যে আর চালাতে চাইছে না, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার এমকে জোশী। তিনি বলেন, ‘‘উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় লোকসানে চলছে সোদপুর এরিয়ার ছ’টি খনি। তার মধ্যে আছে নিতুড়িয়ার পারবেলিয়াও। এই খনিগুলি বন্ধ করার বিষয়ে কয়লামন্ত্র সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে। ইসিএলের কার্যত করণীয় কিছু নেই।”

Advertisement

বস্তুত, পুরুলিয়ায় শুধুমাত্র নিতুড়িয়া ব্লকে পারবেলিয়া ও দুবেশ্বরী— এই দুই কয়লাখনি এখনও চালু রয়েছে। ইতিমধ্যে লোকসানে চলছিল এই যুক্তিতে পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়েছে দেউলি, রানিপুর ও ভামুরিয়ার খনি।

ইসিএল সূত্রের খবর, ১৯০২ সালে পিট আকারে শুরু হয়েছিল এই খনি। পরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ও ভালও মানের কয়লা পাওয়ায় পুরোদমে খনি চালু করা হয়। বর্তমানে খনিতে কাজ করেন প্রায় সাড়ে সাতশো কর্মী ও শ্রমিক। তবে খনি বন্ধ হলে শ্রমিকেরা কাজ হারাবেন না। তাঁদের বদলি করে দেওয়া হবে।

কয়লা চোরের দল যে আলাদা গর্ত খুঁড়ে ইসিএলের পারবেলিয়া খনির মধ্যে ঢুকে পড়েছে, গত বছরেই পরির্দশনের সময় নজরে আসে ডিজিএমএসের কর্তাদের। তারপরেই গত বছর পুজোর মুখে কর্মীদের সুরক্ষাজনিত কারণে কয়লা উত্তোলন বন্ধ করার নির্দেশ দেয় ডিজিএমএস। প্রায় এক মাস বন্ধ থাকার পরে ফের কাজ শুরু হয়।

ইসিএলের একটি সূত্রে খবর, পারবেলিয়ায় কয়লা উত্তোলনের খরচ দ্বিগুণের বেশি বেড়ে যাওয়া, মজুত কয়লার পরিমাণ কমে যাওয়া ও খনিতে সুরক্ষাজনিত বিষয়গুলি বিবেচনা করেই বন্ধের দিকে এগোচ্ছে মন্ত্রক। ইসিএলের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘খনিটি পুরোপুরি বন্ধে কয়লামন্ত্রকের নেওয়া সিদ্ধান্ত সাধারণত ইসিএলের জেসিসি নাকচ করতে পারে না।” কিছু শ্রমিক সংগঠনেরও দাবি, আগেও জেসিসিতে তাদের সঙ্গে ইসিএলের আলোচনা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, দেখা গিয়েছে, তাদের মতামতের বিশেষ গুরুত্ব সেখানে দেওয়া হয় না।

কয়লা মজদুর কংগ্রেসের নেতা তথা নিতুড়িয়ার তৃণমূল নেতা শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদবের দাবি, ‘‘পারবেলিয়া খনি থেকে আরও আট বছর কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব। অথত ইসিএল খনির আধুনিকীকরণ না করে তা বন্ধ করতে চাইছে।’’ এসইউসির শ্রমিক সংগঠনের নেতা নবনী চক্রবর্তীও দাবি করেন, ‘‘খনির আধুনিকীকরণ করা হলে কখনই পারবেলিয়া থেকে লোকসানে পড়তে হত না ইসিএলকে। খনি বন্ধ হলে এলাকার অর্থনীতি ধ্বসে যাবে।” দু’জনেই জানান, খনি বন্ধ করা হলে সমস্ত শ্রমিক সংগঠন এক সাথে আন্দোলনে নামবে।

তবে ইসিএলের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, খনি বন্ধ করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। কিছু কারণে বছরের সাড়ে তিন মাস পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন হয় না। তারপরে কয়লা তুলতে এক টনে খরচ বেড়েছে ১৮,৫০০ টাকার মতো। উৎপাদনও কমেছে দৈনিক ১৯০-২১০ টনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন