ঘরের মেয়ে মোয়ে মাৎসুইয়ামা

সারা বাংলা কুষ্ঠ কলোনি সমিতির সম্পাদক যোগেন দাস বলেন, ‘‘কত দূর থেকে এসে ক’দিনেই একেবারে ঘরের ছেলে মেয়ে হয়ে উঠেছে ওরা। কলোনিটার ভোল পাল্টে ফেলেছে।’’ অবশ্য এই প্রথম নয়, বেশ কয়েক বছর ধরে রাজ্যের বিভিন্ন কুষ্ঠ কলোনিতে আসছেন জাপানি পড়ুয়ারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৭:৫০
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

গ্রামের রাস্তায় স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে কাঁধে কাধ মিলিয়ে কাঠ বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এক জাপানি যুবক। যেতে আসতে ঘাড় ঘুরিয়ে সেই দৃশ্য দেখছেন অনেকে। রোজ এমনটা দেখা যায় না বটে। কিন্তু সে তো চোখের দেখা। রেতসু নাকানিসি, রিং কোয়েমারা বলেন, ‘‘মনে হয় এই মাটিতেই যেন আমাদের শিকড় কখনও ছড়িয়ে ছিল।’’

Advertisement

জাপানের স্কুবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু পড়ুয়া সম্প্রতি এসেছেন বিষ্ণুপুরে। পর্যটক হয়ে নয়। তাঁরা এসে উঠেছেন মড়ার গ্রাম পঞ্চায়েতের কুষ্ঠ কলোনিতে। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেল, মোয়ে মাৎসুইয়ামা, রিং কোয়েমা, ইয়োকা ওয়াতানাবে, মোয়ে তাকেতা, মেগু কোয়েমা, সাকাই মিওয়াদের ব্যস্ততার শেষ নেই। কড়া ভাদ্রের রোদ উপেক্ষা করে কেউ কোদাল হাতে নিকাশি নালা পরিষ্কার করছেন। কেউ নিজের হাতে সাফ করে দিচ্ছেন গৃহস্থের শৌচালয়। কেউ হাতুড়ি পেরেক নিয়ে মিস্ত্রিদের সঙ্গে লেগে পড়েছেন ঘর মেরামতিতে। তার ফাঁকে খুদেদের সঙ্গে খেলছেন, যত্ন করে স্নান করিয়ে দিচ্ছেন।

সারা বাংলা কুষ্ঠ কলোনি সমিতির সম্পাদক যোগেন দাস বলেন, ‘‘কত দূর থেকে এসে ক’দিনেই একেবারে ঘরের ছেলে মেয়ে হয়ে উঠেছে ওরা। কলোনিটার ভোল পাল্টে ফেলেছে।’’ অবশ্য এই প্রথম নয়, বেশ কয়েক বছর ধরে রাজ্যের বিভিন্ন কুষ্ঠ কলোনিতে আসছেন জাপানি পড়ুয়ারা। দলনেত্রী মোয়ে মাৎসুইয়ামা বলেন, ‘‘এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি চলছে। সেই ফাঁকে চলে এলাম। এখানের সবাই আমাদের ক’দিনেই আপন করে নিয়েছেন।’’ দলনেত্রী জানান, সহপাঠীদের থেকে চাঁদা তুলে তাঁরা যাতায়াতের খরচ তুলে ফেলেন। এখানে আসার পরে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাঁদের সাহায্য করে। তা দিয়েই বাড়ি মেরামতি থেকে শুরু করে আর সমস্ত কাজ হয়। শুধু তাই নয়, এলাকার যুবক যুবতীদের নিজের পায়ে দাঁড় করাতে ওই পড়ুয়ারা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন মাশরুম চাষের।

Advertisement

যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে এ রাজ্যে এসেছেন ওই পড়ুয়ারা, সেটির কর্ণধার অরুণ সিনহা বলেন, ‘‘সাত বছর হল ওঁরা আসছেন। এখন কলোনির তরুণ প্রজন্মকে স্বনির্ভরতার পাঠও দিচ্ছেন।’’ নতুন অতিথিদের ফিরে যাওয়ার দিন যত এগিয়ে এসেছে, ততই মন খারাপ হয়ে গিয়েছে এলাকাবাসীর। অবশ্য বিদেশি পড়ুয়ারা আশ্বাস দিয়েছেন, আবার ঘরের ছেলে হয়েই ফিরে আসবেন বিষ্ণুপুরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন