আঁধার পেরিয়ে

উচ্চ শিক্ষার খরচ নিয়ে চিন্তায় জয়ন্তী-শুভেন্দু

এক জনের বাবার মৃত্যু হয়েছে সাত বছর আগে। অন্য জনের বাবা নিরুদ্দেশ। সে-ও সাত বছর ধরেই। দু’জনেই যখন ক্লাস সিক্সের পড়ুয়া, তখনই তাদের জীবনে এই চরম বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে। এই বিপর্যয় আর আর্থিক অনটন নিয়েই এ বার পরীক্ষায় সফল রাজনগরের জয়ন্তী মণ্ডল ও দুবরাজপুরের শুভেন্দু দে। উভয়েই এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৫ ০২:১২
Share:

শুভেন্দু দে (বাঁ দিকে) এবং জয়ন্তী মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

এক জনের বাবার মৃত্যু হয়েছে সাত বছর আগে। অন্য জনের বাবা নিরুদ্দেশ। সে-ও সাত বছর ধরেই। দু’জনেই যখন ক্লাস সিক্সের পড়ুয়া, তখনই তাদের জীবনে এই চরম বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে। এই বিপর্যয় আর আর্থিক অনটন নিয়েই এ বার পরীক্ষায় সফল রাজনগরের জয়ন্তী মণ্ডল ও দুবরাজপুরের শুভেন্দু দে। উভয়েই এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল করেছে।

Advertisement

রাজনগরের ভবানীপুর রাওতাড়া গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্তী। এবার কলাবিভাগের ওই ছাত্রী মাধাইপুর পল্লিমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে পেয়েছেন ৪২৩। শতাংশের হিসাবে ৮৪.৪ শতাংশ। অন্য দিকে, দুবরাজপুর আরবিএসডি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখার ছাত্র শুভেন্দু দে-র প্রাপ্ত নম্বর ৪৫৫। অর্থাৎ ৯১ শতাংশ। আর্থিক দীনতার সঙ্গে লড়াই করে এতটা পথ এলেও উচ্চ শিক্ষার পথ কী ভাবে খুলবে, দুশ্চিন্তায় দুই পড়ুয়াই।

মা সজনা মণ্ডল এবং দাদু, ঠাকুমাকে নিয়ে চার সদস্যের পরিবার জয়ন্তীদের। বাবার মৃত্যুর পর দাদু একটি ছোট্ট মুদিখানা দোকান করে সংসার প্রতিপালন করেন বৃদ্ধ বংশীধর মণ্ডল। খুব কষ্টে চলে খাওয়া-পড়া। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেই ভবানীপুর স্কুল থেকে মাধ্যমিকে ভাল ফল করার পর মাধাইপুর পল্লিমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় জয়ন্তী। বাড়ি থেকে ৮ কিমি দূরে কখনও সাইকেল কখনও বা বাসে করে স্কুল যাতায়াত করেও পরীক্ষার ফল যথেষ্ট ভাল। এ জন্য অবশ্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুদীপ কুমার চট্টোপাধ্যায় ও সহ শিক্ষকদের ভূমিকা রয়েছে। বইখাতা, টিউশন সব ক্ষেত্রেই তাঁরা এগিয়ে এসেছিলেন বলে জানায় জয়ন্তী ও তাঁর পরিবার।

Advertisement

অন্য দিকে, দুবরাজপুর বাজারে একটি মনোহারি দোকান চলাতেন শুভেন্দুর বাবা। তিনি নিরুদ্দেশ হওয়ার পর থেকে দাদু ও কাকু জেঠুরা খাওয়া পড়ার দায়িত্ব নিলেও পড়ার খরচ জোগার করা খুবই শক্ত ছিল। শুভেন্দু মাধ্যমিকের আগে দু’বছর একটি স্কলারশিপ পেয়েছিল। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের অর্ধেক টিউশন শিক্ষকেরা বিনা সাম্মানিকে দেখিয়ে দিয়েছেন। দাদু বৈদ্যনাথ দে ও শুভেন্দুর মা ববিতা দে বলছেন, ‘‘এতদিন ঘরের কাছে স্কুল ছিল। বাইরের কলেজে ভর্তি হলে এবার সেটা কয়েক গুণ বাড়াবে। কী ভাবে পড়াশুনা চলবে ওর, চিন্তায় ঘুম হচ্ছে না।’’

শুভেন্দু এ দিন নিজে বলছে, ‘‘পলিটেকলিক জন্য জয়েন্টে দিয়েছিলাম। ৯১০ র‌্যাঙ্ক হয়েছে। সরকারি কলেজে সুযোগ পেতে পারি। কিন্তু, ইচ্ছে রসায়ান নিয়ে ভাল কলেজে ভর্তি হওয়ার। জয়েন্টও দিয়েছি, সেখানে সফল হলেও পড়ার সামর্থ্য নেই।’’ অন্য দিকে, জয়ন্তীর ইচ্ছে ভূগোলে অনার্স নিয়ে পড়ার। এত দিন আট কিলোমিটার দূরের স্কুলে পড়েছেন, এ বার বাড়ি থেকে অন্তত ২০ কিলোমিটার দূরে যেতে হবে। এত দূরে কলেজে পড়ার খরচ জোগাবে কে? চিন্তায় মা সজনাদেবী। উদ্বিগ্ন গলায় বললেন, ‘‘কী ভাবে কী হবে বুঝতে পারছি না!’’

মাধাইপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুদীপ কুমার চট্টোপাধ্যায় এবং দুবরাজপুর আরবিএসডি-র প্রধান শিক্ষক মধুসূদন মণ্ডলেরা বলছেন, ‘‘ওদের আর্থিক দীনতার কথা আমরা জানি। চাই ওরা এগিয়ে চলুক। উচ্চ শিক্ষার পথে বাধা আসলে স্কুল সব রকম ভাবে পাশে থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন