বিচার পেল মেয়ে, রায় শুনে চোখে জল মায়ের

মণি বললেন, “২০০০ সালে অসুখে ভুগে স্বামী মারা গিয়েছিল। সে শোক সামাল দিতে না দিতেই ছোট ছেলেটাও বজ্রপাতে মারা গেল। শোক ভুলতে মেয়েটাকে আঁকড়ে ধরে দিন কাটছিল। সেই মেয়েটাকেও হারাতে হল।’’ একটু সামলে আরও বলেন, ‘‘ছেলেটা আমার মেয়েকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেলামেশা করেছিল। তার পরে অন্য জায়গায় বড় লোকের মেয়েকে বিয়ে করবে বলে আমার মেয়েকে খুন করেছিল। আজকের রায় শুনে আমি খুশি।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:০৮
Share:

মণি বাসকি। নিজস্ব চিত্র

আগের দিনই দোষী সাব্যস্ত করেছিল রামপুরহাট আদালত। নাবালিকাকে অপহরণ করে খুনের মামলায় শুক্রবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে অতিরিক্ত ৯ মাস কারাদণ্ডের সাজা শোনালেন বিচারক। তা শুনে অনেকেই বলেছেন, ‘‘সাত বছর আগের এক ঘটনার একটা বৃত্ত যেন সম্পূর্ণ হল।’’

Advertisement

কোমরের ব্যথায় দীর্ঘ দিন ধরেই কাবু। অশক্ত শরীরটা যেন আর টানতেও পারছেন না। সে সব উপেক্ষা করেই কিশোরী মেয়ের খুনের সাজা শুনতে আদালতে ছুটে এসেছিলেন পঞ্চাশের মণি বাসকি। ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা রামপুরহাট থানার উপর-রনিগ্রাম গ্রাম থেকেও সকাল সকাল পৌঁছে গিয়েছিলেন রামপুরহাট আদালতে। ভরসা দিয়েছিলেন আইনজীবীরা। অতিরিক্ত জেলা আদালতের এজলাসে আইনজীবীদের ভিড়ে বিচারক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য যখন অভিযুক্ত বুদ্ধদেব টুডুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনাচ্ছেন তখন চোখে জল চিকচিক করছে মণি বাসকির।

লহমায় ফিরে গেলেন পুরনো দিনে। মণি বললেন, “২০০০ সালে অসুখে ভুগে স্বামী মারা গিয়েছিল। সে শোক সামাল দিতে না দিতেই ছোট ছেলেটাও বজ্রপাতে মারা গেল। শোক ভুলতে মেয়েটাকে আঁকড়ে ধরে দিন কাটছিল। সেই মেয়েটাকেও হারাতে হল।’’ একটু সামলে আরও বলেন, ‘‘ছেলেটা আমার মেয়েকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেলামেশা করেছিল। তার পরে অন্য জায়গায় বড় লোকের মেয়েকে বিয়ে করবে বলে আমার মেয়েকে খুন করেছিল। আজকের রায় শুনে আমি খুশি।’’

Advertisement

সরকারী আইনজীবী উৎপল মুখোপাধ্যায় জানান, ২০১২ সালের ২৩ নভেম্বরের ওই ঘটনায় বিচারক বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত বুদ্ধদেব টুডুকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। শুক্রবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে অতিরিক্ত ৯ মাস কারাদণ্ডের সাজা শোনান। এ ছাড়া ৩৬৪ ধারায় অপহরণের মামলায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ৬ মাস কারাদণ্ড, সেই সঙ্গে ২০১ ধারায় প্রমাণ লোপের মামলায় তিন হাজার জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারক। সরকারি আইনজীবীর কথায়, ‘‘সব কটি সাজা একসঙ্গে চলবে।’’

শুক্রবার রায় শুনতে এসেছিলেন বুদ্ধদেবের বাবা নবীন টুডুও। পেশায় চাষি নবীনের দাবি, ‘‘ছেলের সঙ্গে মেয়েটার মেলামেশা ছিল জানতাম। কিন্তু, মেয়েটা তো নিজেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন