চট-কাগজের মণ্ডপ, চোখ রাঙাচ্ছে বৃষ্টি

সাধারণ ভাবে বর্ষা-বিদায়ের পরে আসে শারদোৎসব। কিন্তু, পুজো এ বার পরে গিয়েছে বর্ষার মধ্যেই। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সক্রিয় থাকার কথা বর্ষার।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:৩১
Share:

পৌরাণিক গাথা অনুযায়ী, পূর্বপুরুষদের আত্মাকে মুক্তি দিতে সাগররাজের বংশধর ভগীরথ ব্রহ্মার কাছে প্রার্থনা করে গঙ্গাকে মর্তে আহ্বান করেছিলেন। এ বারের পুজোয় সিউড়ির হাটজনবাজার মিলনি সঙ্ঘের এটাই থিম। কিন্তু চট, পেপারের মণ্ড, প্লাস্টার অফ প্যারিস দিয়ে তৈরি হিমালয় থেকে গঙ্গাকে আদৌ মর্তে সময় মতো পৌঁছে দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে ঘোর সংশয়ে মণ্ডপ শিল্পী সৌরেন্দ্র ভাণ্ডারী।

Advertisement

সমস্যার মূলে শরতেও বর্ষার মেঘ। আর দফায় দফায় বৃষ্টি। মেঘের বুক চিরে শুক্রবার জেলার আকাশে রোদ উঠেছে তো কী, আজই আবার ফের বৃষ্টি নামবে না কে বলতে পারে? উদ্যোক্তাদের উদ্বেগ সেখানেই। সংশয়ে রয়েছেন শান্তিনিকেতন কলাভবন থেকে পড়াশোনা করা শিল্পী শুভেন্দু চৌধুরীও। এ বার দুবরাজপুরের ডিএসএ ক্লাবের দু্র্গাপুজোয় থিম পাহাড়েশ্বরের মামা-ভাগ্নে। যার রেপ্লিকা ফুটিয়ে তুলছেন তিনি। কিন্তু, সেই একই উপাদান চট, পেপারের মণ্ড, প্লাস্টার অফ প্যারিস আর রঙ দিয়ে সেই তৈরি পাথরগুলি কতটা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে সেই নিয়ে সংশয়ে শুভেন্দু।

শারদীয় আকাশের চেনা ছবি নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। কিন্তু কোথায় কী? গত কয়েক দিন ধরে কালো শ্রাবণী মেঘে ছেয়ে গিয়েছে আকাশ। আর যখন-তখন সেই মেঘ ফুঁড়ে নেমে আসছে বৃষ্টি। তাতেই ধুয়ে যাচ্ছে যাবতীয় প্রস্তুতি। সৌরেন্দ্রবাবুদের আক্ষেপ, ‘‘এক দিন না হয় রোদ উঠেছে। কিন্তু, ফের বৃষ্টি হলে কী ভাবে শুকোবে চট, প্লাস্টার অফ প্যারিস কিংবা রঙ? মাথায় তো ঢুকছে না।’’ শুধু ওই দুই মণ্ডপ শিল্পী নন। শরতেও মন খারাপ করা বর্ষা দেখে কপালে ভাঁজ অন্য মণ্ডপ শিল্পী, পুজো উদ্যোক্তা থেকে প্রতিমা শিল্পীদের। তাঁরা ভেবে পাচ্ছেন না, শেষ পর্যন্ত কী ভাবে সব ঠিকঠাক হবে। রবিরার থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস থেকেও তেমন নিশ্চিন্ত হওয়ার উপায় নেই।

Advertisement

সাধারণ ভাবে বর্ষা-বিদায়ের পরে আসে শারদোৎসব। কিন্তু, পুজো এ বার পরে গিয়েছে বর্ষার মধ্যেই। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সক্রিয় থাকার কথা বর্ষার। এই পরিমণ্ডলে হঠাৎই এক জোড়া ঘূর্ণাবর্তের উদয়ে তা বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছে। যদিও আবহাওয়া দফতর বুধবার জানিয়েছে, হাওয়া একটি ঘূর্নাবর্ত আরও পশ্চিমে সরে যাওয়ায় আবহাওয়ার উন্নতি হবে। শুক্রবারই যেমন রোদ দেখা গিয়েছে জেলায়। কিন্তু, আদতে সেটা স্থায়ী হয় কিনা সেটাই দেখার।

চলতি মরসুমে ঘূর্ণাবর্ত আর নিম্নচাপ যখন-তখন হানা দিয়ে বর্ষণে ইন্ধন জুগিয়েছে। অতিবৃষ্টির জেরে ইতিমধ্যে দফায় দফায় বন্যা হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গে। উৎসবের পটভূমিতে মানুষের প্রশ্ন, পুজোর কটা দিন কী রেহাই মিলবে না। চিন্তার পিছনে বড় কারণ হল কলকাতার সঙ্গে মফস্সলের পার্থক্য হচ্ছে কলকাতায় মহালয়া বা তার দু’এক দিনের মধ্যেই প্রস্তুতি সাড়া হয়ে যায়। কিন্তু, ছোট শহর বা মফস্সলে সেই প্রস্তুতি শেষ হতে হতে পঞ্চমী এমনকী ষষ্ঠী গড়িয়ে যায়।

সিউড়ির একটি জনপ্রিয় পুজো উদ্যোক্তা চৌরাঙ্গী ক্লাবের কর্মকর্তা দেবাশিস ধীবর বলছেন, ‘‘এ বার আমরা মণিপুরি নাচকে থিম করেছি। কিছুটা ঢাকা অংশে যেখানে মণ্ডপ ও প্রতিমা রয়েছে সেটা বাদ দিলে এই দফায় দফায় বৃষ্টিতে খুব অসুবিধা হচ্ছে।’’ হোগলাপাতা ও মাদুর দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছে সিউড়ির যাত্রিক ও ১ এর পল্লির পুজো উদ্যোক্তারাও। ১ এর পল্লির পুজো মণ্ডপ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা শিল্পী অপূর্ব ঘোষ বলছেন, ‘‘টানা দেড় মাস কাজ করছি। সঙ্গে নদিয়া ও বর্ধমানের শিল্পীরা রয়েছেন। কিন্তু শেষ বেলায় এ ভাবে দফায় দফায় বৃষ্টি চরম সমস্যায় ফেলেছে।’’ তবে সময়ে শেষ করতে হবে এই বিশ্বাস রেখেই এগোচ্ছি।

খয়রাশোলের নাকড়াকোন্দা ফাল্গুনীপল্লি দু্র্গোৎসবের এ বারের থিম ‘মা এলেন নৌকায়’। কালো মেঘ আর বৃষ্টির ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে তৈরি হচ্ছে মযূরপঙ্খী নৌকা। উদ্যোক্তাদের প্রার্থনা, ‘‘থিমেই থাক নৌকা। বাস্তবে জল ভেঙে দর্শকদের যেন মণ্ডপে আসতে না হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন