কেরলের পাশে ছাত্র-দল, সাইকেলে গ্রাম ঘুরে ত্রাণ সংগ্রহ করল তারাই

মঙ্গলবার দিনভর সাইকেলে চড়ে তারা একের পর এক গ্রাম ঘুরে বানভাসিদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করল। ওদের এই উদ্যোগে অভিভাবকেরা তো বটেই, খুশি স্কুল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

শুভ্র মিত্র

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০১:২২
Share:

পথে: নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে গ্রামে-গ্রামে ঘুরছে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

কেরলের বানভাসি গ্রাম থেকে বহু দূরে তাঁদের বাস। সেই ভৌগোলিক দূরত্ব মুছে কেরলের বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে পথে নামল বিষ্ণুপুরের অবন্তিকা গ্রামের মানিকলাল সিংহ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। মঙ্গলবার দিনভর সাইকেলে চড়ে তারা একের পর এক গ্রাম ঘুরে বানভাসিদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করল। ওদের এই উদ্যোগে অভিভাবকেরা তো বটেই, খুশি স্কুল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

ক’দিন ধরে টিভি, সংবাদপত্রে বন্যা কবলিত কেরলের বাসিন্দাদের দুর্দশার খবর দেখতে দেখতে ওই স্কুলের কিছু পড়ুয়ার মন কেঁদে উঠেছিল। তাদের মধ্যে জনা ত্রিশেক ছাত্র ঠিক করে ফেলে, নিজেরাই ছোট ছোট হাতে যতটুকু টাকা সংগ্রহ করা যাবে, তুলে দেবে কেরলের মানুষদের জন্য। ওদের কেউ নবম শ্রেণির, কেউ দশম বা কেউ একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুখলাল হাঁসদা বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সবে দু’টো ক্লাস হয়েছে। ছেলেগুলো অফিসে ঢুকে জানাল, তারা আশপাশের গ্রামে কেরলের মানুষদের সাহায্যের জনঅয টাকা তুলতে যাবে। ওদের এই ইচ্ছার কথা শুনে, অনুমতি দিতে দেরি করিনি।’’ তিনি জানান, বিপদের দিনে আর্তের পাশে থাকাই তো প্রকৃত শিক্ষা। ওদের অনেকেই দিন আনা দিন খাওয়া ঘরের ছেলে। তবু বিপদে পাশা থাকার মানসিকতা গড়ে উঠেছে ছেলেগুলোর মধ্যে— এটাতেই স্কুল কর্তৃপক্ষ তৃপ্ত। তিনি ওই ছেলেগুলির সঙ্গে দু’জন শিক্ষককেও সাইকেলে বেরোতে বলেন।

Advertisement

মোহন নন্দী, দীপু বাগদি, সৌরিক পাল, শেখ রাজিব, শেখ সাদেক, শেখ সাবিরদের হাতে প্রথমেই কিছু অর্থ তুলে দেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা। এর পরে তারা ত্রিশ জন বন্ধু মিলে সাইকেল নিয়ে চষে ফেলল অবন্তিকা, বনমালিপুর, রেওড়া প্রভৃতি গ্রাম।

অবন্তিকা গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, গ্রামের আটচালার ধারে সার দিয়ে রাখা সাইকেল। গ্রামের ভিতর খানিকটা এগোতেই দেখা সাদেক, বাপিদের সঙ্গে। সামনেই ইউনিট টেস্ট। পড়ার ক্ষতি হবে না? পথে বেরনো ছেলেগুলো এক সাথে বলে ওঠে, ‘‘রাত জেগে পড়ে নেব। কাগজে তো দেখছি কী ভাবে নদী গিলছে কেরলের গ্রাম-শহরগুলোকে। কেরলের সাধারণ মানুষগুলোর অসহায়, আর্ত মুখগুলো আমাদের নাড়া দিচ্ছে। তাই স্কুল শুরু আগে সবাই মিলে ঠিক করি, ওঁদের জন্য কিছু একটা আমাদেরও করতে হবে।’’ তারা জানায়, প্রথমে নিজেদের টিফিনের হাত খরচ জড়ো করে। স্কুলের স্যার গুরুপদ মানিক আর তন্ময় মণ্ডল আবেদনের বার্তা লেখা কাগজ ছাপিয়ে দেন। সবাই মিলে দু’টো ক্লাস করে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে পরে।

একটা গ্রাম থেকে আর একটা গ্রাম— পাঁচ থেকে চার কিলোমিটারের পথ। ভাদ্রের রোদে জামা ভিজলেও, অসহায় মানুষগুলোর পাশে থাকার আনন্দে হইহই করতে করতে ছেলেগুলো ঘুরছিল। ভরা দুপুরে দরজায় কড়া শব্দে বেরিয়ে আসতেই তাদের দেখে অবাক হচ্ছিলেন বাসিন্দারা। প্রধান শিক্ষক জানান, এ দিন অবন্তিকা, বনমালিপুর ও রেওড়া থেকে চার হাজার টাকা সংগ্রহ করেছে ছাত্রেরা। শুক্রবার বাকি গ্রামগুলোয় তারা যাবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ওই টাকা পাঠিয়ে তা কেরল সরকারকে পাঠিয়ে দেওয়ার আবেদন জানানো হবে।

অবন্তিকার রঞ্জিত সাউ, ফটিক সাউ ছেলেগুলোর হাতে ধরা প্ল্যাকার্ড দেখে খুশি হয়ে ওঠেন। কেউ কেউ ওদের বুকেও টেনে নেন। সবাই তাদের ছোট্ট টিনের বাক্সে সাধ্যমতো সাহায্য তুলে দেন। আর বার বার বলতে থাকেন— ‘‘এই মানসিকতা যেন হারাস না। যত্ন করে রাখিস।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন