রোগ ছড়াচ্ছে মশা, অকেজো কামান

রাজ্যজুড়ে ডেঙ্গি নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বাঁকুড়া জেলাও এর বাইরে নয়। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে গত দু’সপ্তাহে ১০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছেন।তার মধ্যে কয়েকজন বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০১:৫৮
Share:

রাস্তার ধারে জমা জলে বাড়ছে মশা। বাঁকুড়ার স্কুলডাঙায় ছবিটি তুলেছেন অভিজিৎ সিংহ।

রাজ্যজুড়ে ডেঙ্গি নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বাঁকুড়া জেলাও এর বাইরে নয়। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে গত দু’সপ্তাহে ১০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছেন।তার মধ্যে কয়েকজন বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা। কিন্তু বাঁকুড়া পুরসভার মশা মারার কামান অকেজো থাকায় মশা নিধন অভিযান সে ভাবে শুরু হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ডেঙ্গি মোকাবিলায় প্রশাসন, স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভাগুলি কতটা প্রস্তুত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

বর্ষা এলেও বৃষ্টি তেমন হচ্ছে না। ফলে বিভিন্ন জায়গায় জমা জল মশার আঁতুরঘর হয়ে উঠেছে। সেখানেই ম্যালেরিয়া থেকে ডেঙ্গির জীবাণুবাহক মশার লার্ভা তৈরি হচ্ছে। ফলে শুধু ডেঙ্গিই নয়, মশাবাহিত অন্যান্য রোগও ছড়াচ্ছে। বাঁকুড়া মেডিক্যালে তাই মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়া মানুষের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া জেলায় এখনও পর্যন্ত ১২ জন ডেঙ্গিতে আক্রন্ত হয়েছেন। বাঁকুড়া পুরএলাকার চারজন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ওন্দা ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম থেকেও চারজন আক্রান্ত হয়েছেন ডেঙ্গিতে। ছাতনা, সোনামুখী, ইঁদপুর ও কোতুলপুর থেকেও একজন করে ডেঙ্গিতে অসুস্থ হয়েছেন। বিষ্ণুপুর হাসপাতালে জ্বর নিয়ে এক কলেজ ছাত্র ভর্তি রয়েছেন। বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে করা রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট মোতাবেক তাঁর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু রয়েছে। তবে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা নিশ্চিৎ হওয়ার জন্য সরকারি রিপোর্টের অপেক্ষা করছেন।

Advertisement

গত দু’সপ্তাহে যে ১০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। সাতজন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনা হল, গত দু’বছরে এই জেলায় বহু মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলেও এই রোগে কারও মৃত্যু হয়নি বলেই জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। চলতি বছরে এখনও ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে জেলায় কারও মৃত্যু হয়নি।

তবে স্বাস্থ্য দফতরের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ফেলসিফেরাম ম্যালেরিয়া। চলতি বছরে বাঁকুড়া জেলায় এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ২০০-র বেশি মানুষ। এখনও পর্যন্ত আটজনের মৃত্যু হয়েছে এই রোগে। মৃতদের মধ্যে সিমলাপাল ও রাইপুর ব্লকের দু’জন করে রয়েছেন। বিষ্ণুপুরের রাধানগর এলাকাতেও ফেলসিফেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। গঙ্গাজলঘাটি ও ইঁদপুর ব্লকে একজন করে ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এই রোগে।

এই পরিস্থিতিতে তাঁরা ম্যালেরিয়া নিয়ে বিশেষ তৎপর হয়েছে বলে জানাচ্ছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস জানান, প্রতিটি ব্লক ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ম্যালেরিয়া পরীক্ষার কিট পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও আশা কর্মীদেরও দেওয়া হয়েছে কিট। জ্বরে কেউ আক্রন্ত হলেই যাতে ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করা হয়, তার নির্দেশ দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। প্রসূনবাবু বলেন, “আজকাল জ্বরের হাবভাব দেখে কোনটা ম্যালেরিয়া তা বোঝা মুশকিল। তাই যে কোনও জ্বরেই যাতে প্রথমে ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করানো হয়, তার নির্দেশ দিয়েছি আমরা। গোড়াতেই এই রোগ নির্ণয় করা গেলে রোগ নির্মূল করার সুযোগও বেশি মিলবে।”

ডেঙ্গি রুখতেও শহরাঞ্চলের মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে সচেতন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। প্রসূনবাবু এ বিষয়ে বলেন, “পরিস্কার জমা জল যাতে কোনও ভাবেই ঘরে বা ঘরের আশেপাশে না রাখা হয়, এ ব্যাপারে আমরা মানুষকে সচেতন করব।”

যদিও বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, সোনামুখী পুরশহরে মশার দাপট যথেষ্টই রয়েছে। অথচ মশা মারতে এখনও সে ভাবে পথে নামতে দেখা যাচ্ছে না প্রশাসনকে। খাস বাঁকুড়া শহরে ইতিমধ্যেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন একাধিক মানুষ। বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশার উৎপাতে নাজেহাল অবস্থা হচ্ছে পুরবাসীর। অথচ পুরসভার তরফে মশা মারতে ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে ফি বছর বর্ষায় যে অভিযান হয়, তা এ বার বেশ দেরিতেই শুরু হয়েছে।

নামবেই বা কী করে? বাঁকুড়া পুরসভায় মশা মারার ‘ফগিং মেশিন’ বা কামান তো দীর্ঘদিন ধরে খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে! এই পরিস্থিতিতে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে সাহায্য চেয়েছে পুরসভা। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “বাঁকুড়া পুরসভার ওয়ার্ডগুলিতে মশা মারার কাজ শুরু হচ্ছে। পুরসভাকেও আমরা ফগিং মেশিন দেব।’’ বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “আপাতত বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্প্রেয়ার দিয়ে মশা মারার কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়ম মাফিক এই অভিযান চলবে।’’

তবে সোমবার বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত দাবি করেন, এ দিন থেকেই মশা নিধনের জন্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে পাওয়া ফগিং মেশিন নিয়ে পথে নেমেছেন পুরকর্মীরা। তাঁর দাবি, এ দিন শহরের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড থেকে অভিযান শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন