বিজেপি কর্মী খুনের পরে অশান্তি

এ বার সরানো হল লাভপুরের ওসি-কে

বিজেপি কর্মী খুনের পরে ওসি-কে অপসারণ করার মধ্যে দিয়ে সেই কড়া বার্তাই আরও এক বার দেওয়া হল বলে মনে করছেন জেলা পুলিশের একাংশ। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

লাভপুর শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৯ ০৫:২৪
Share:

নিহত ডালু শেখ। নিজস্ব চিত্র

বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনার পরে পরেই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল লাভপুর থানার ওসি চয়ন ঘোষকে। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, ওই দায়িত্বে এলেন বোলপুর থানার সাব-ইনস্পেক্টর পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

ওসি-র বদলি ঘিরে এলাকায় গুঞ্জন ছড়িয়েছে। কী কারণে চয়নবাবুকে সরানো হল, তা নিয়ে চলছে কানাঘুষো। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্যই ওসি-কে অপসারণ করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে বিস্ফোরণে উড়ে যায় দাঁড়কা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি পরিত্যক্ত আবাসন। তার পর থেকে সেখানকার কয়েকটি জায়গায় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ জানিয়েছেন, চয়ন ঘোষকে ওসি-র পদ থেকে সরিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য শো-কজ করা হয়েছে।

এটাই প্রথম নয়। সম্প্রতি দাঁড়কা ও মল্লারপুরের ক্লাবে জোড়া বিস্ফোরণের পরেই কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন পুলিশ সুপার। কারণ,

Advertisement

পরপর দু’টি বিস্ফোরণের ঘটনা জেলা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল। তাই মল্লারপুরের ঘটনার পরে সরিয়ে দেওয়া হয় মল্লারপুর থানার ওসি টুবাই ভৌমিককে। দাঁড়কা-কাণ্ডের পরে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয় দাঁড়কা পুলিশ ফাঁড়ির ইন-চার্জ পার্থ সাহাকে। চার জন সিভিক কর্মীকেও বসিয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গেই ওসি চয়নবাবুকে শো-কজও করা হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রের খবর। সব মিলিয়ে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা বার্তা দিয়েছিলেন, কর্তব্যে ঢিলেমি বরদাস্ত করা হবে না।

এ বার বিজেপি কর্মী খুনের পরে ওসি-কে অপসারণ করার মধ্যে দিয়ে সেই কড়া বার্তাই আরও এক বার দেওয়া হল বলে মনে করছেন জেলা পুলিশের একাংশ।

শনিবার রাতে বাড়ির কাছে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় নিহত হন দাঁড়কা পঞ্চায়েতের মীরবাঁধ গ্রামের বিজেপি কর্মী ডালু শেখ ওরফে হিলাল শেখ। ১১ জন তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ ওঠে। পুলিশ জানায়, ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ওই ঘটনার জেরে রবিবার অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে স্থানীয় হাতিয়া গ্রাম। বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে বোমাবাজি, ইটবৃষ্টি হয় হয়। এক তৃণমূল নেতার বাড়িতেও বোমা মারার অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। দু’পক্ষেরই কয়েক জন আহত হন। গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

ঘটনা হল, লাভপুরের সদ্য অপসারিত ওসি-কে নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের ক্ষোভ ছিল। দাঁড়কার বিস্ফোরণ-কাণ্ডের পরে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পুলিশক্যাম্পের সামনেই চয়নবাবুকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন তৃণমূলের দাঁড়কা অঞ্চল কমিটির সভাপতি কাজল রায়।

তাঁর অভিযোগ ছিল, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এলাকায় বোমা-বারুদ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নাম জানানো সত্ত্বেও ওসি তাদের ধরছেন না। যদিও বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ মণ্ডলের দাবি, ‘‘ওই ওসি নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করার চেষ্টা করছিলেন। তৃণমূল নেতাদের দায়ের করা মিথ্যা অভিযোগে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ধরছিলেন না। মীরবাঁধে আমাদের দলীয় কর্মী খুনের ঘটনায় আসল অপরাধীদের আড়াল করতে শাসকদলের নেতাদের মদতে ওসিকে সরিয়ে দেওয়া হল।’’ ওই অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওসি বদলি পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদের তরফে তাতে মদত জোগানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন