শ্যাম থেকে শম্পা, পদে কোণঠাসারা

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়কে জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান করেছেন মমতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪৮
Share:

শিরোপা: জঙ্গলমহল কাপের পুরস্কার বিতরণ। নিজস্ব চিত্র

দলের মধ্যে কিঞ্চিত কোণঠাসা হয়ে পড়া কিছু নেতানেত্রীকে পঞ্চায়েত ভোটের আগে পদ দিয়ে সামনের সারিতে তুলে আনলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুরুলিয়া থেকে বাঁকুড়া পৌঁছে সার্কিট হাউসে জেলার দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মমতা। সেখানে গত বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত তৃণমূল বিধায়ক-সহ বেশ কয়েকজনকে দলীয় পদ দেওয়া হয়।

Advertisement

দল সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়কে জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান করেছেন মমতা। শ্যামবাবুকে দলীয় কাজে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।

গত বিধানসভা নির্বাচনে নিজের গড় বিষ্ণুপুরে জোট প্রার্থী তুষারকান্তি ভট্টাচার্যের কাছে পরাজিত হন শ্যামবাবু। সেই পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসাবে শ্যামবাবুর ঘনিষ্ঠেরা অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন পুরপ্রধানের এক সময়ের সঙ্গী উপ-পুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে।

Advertisement

বুদ্ধ-তুষার গোষ্ঠীই বিষ্ণুপুরে দলের চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে। যার জেরে শ্যামবাবু দলের মধ্যে দলের মধ্যেই বেশ কিছুটা কোণঠাসা
হয়ে পড়েন।

এই পরিস্থিতিতে নেত্রী তাঁকে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ায় নতুন করে অক্সিজেন পেয়েছেন শ্যামবাবুর অনুগামীরা। বৈঠক শেষে হতেই দলে শ্যামবাবুর পদোন্নতির খবর ছড়িয়ে পড়ে। রাতে বিষ্ণুপুর শহরে শ্যামবাবুর অনুগামীরা বাজি ফাটিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন। শ্যামবাবু বলেন, “দলনেত্রী আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা পালন করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।”

তৃণমূলের জেলা সম্পাদকের পদ পেয়েছেন শম্পা দরিপা। তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরে, গত বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী হিসেবে বাঁকুড়া বিধানসভায় জয়ী হন শম্পা। নির্বাচনের কয়েক মাস পরেই ফের তৃণমূলের কর্মসূচিতে যোগ দিতে শুরু করেন তিনি।

বিধানসভায় সরকারি ভাবে এখনও শম্পা কংগ্রেস বিধায়ক। এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি মুচকি হেসে জবাব দেন, “এ নিয়ে কিছু বলব না।” জেলার কংগ্রেস নেতা অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য কটাক্ষ করে বলছেন, “তৃণমূলের আমলে নিয়ম নীতি যে কেমন, এটা তারই দৃষ্টান্ত।’’ তবে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এই পদ পাওয়ার ব্যাপারে কোনও অসুবিধা হবে না।

পদ পেয়েছেন ছাতনার প্রাক্তন বিধায়ক শুভাশিস বটব্যাল, বড়জোড়ার প্রাক্তন বিধায়ক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়-সহ বেশ কিছু পুরনো তৃণমূল কর্মী। সার্কিট হাউসের বৈঠকে জেলার সব ক’টি ব্লকের তৃণমূল সভাপতিরাই উপস্থিত ছিলেন। সূত্রের খবর, দলনেত্রী তাঁদের নির্দেশ দিয়েছেন, পুরনো কর্মীদের দলে গুরুত্ব দিতে হবে। দ্বন্দ্ব মিটিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে এক হয়ে লড়তে হবে। জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, ‘‘দলের পিছনের সারিতে চলে যাওয়া এক সময়কার কিছু তাবড় নেতাকে পঞ্চায়েত ভোটের আগে সক্রিয় করতে চান নেত্রী।’’

ঘটনা হল, গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিপুল ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। ফল বেরনোর পরে দেখা যায়, বিরোধীরা কার্যত ধুয়ে গিয়েছেন। কিন্তু বাঁকুড়ায় ব্যাপারটা ছিল অন্য রকমের। এই জেলায় বারোটির মধ্যে পাঁচটি আসনে পরাজিত হয় তৃণমূল। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছিল রাজ্য নেতৃত্ব। পঞ্চায়েত ভোটে অবশ্য ফল উল্টো হবে বলেই দাবি করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খান। তিনি বলেন, “আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের মধ্যে বাঁকুড়ায় দৃষ্টান্তমূলক সাফল্য পাব আমরা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন