সোনামুখীতে কমব্যার্ট ফোর্সের রুটমার্চ। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।
লোকসভায় ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সোনামুখীর সেই তৃণমূল বিধায়ক এ বার পুরভোটের প্রার্থী। তাই সোনামুখীতে পুরভোটেও গণ্ডগোলের আশঙ্কা করছেন বিরোধীরা। এই আশঙ্কায় সরাসরি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হলেন সোনামুখীর বামপ্রার্থীরা। অভিযোগ পাওয়ার পরেই জেলা প্রশাসনকে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিল নির্বাচন কমিশনও। অন্যদিকে এলাকায় লিফলেট ছড়িয়েও মানুষকে আক্রমণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ডাক দিচ্ছে বামেরা।
গত লোকসভা ভোটে সোনামুখীর সাহাপুর বুথে অনুগামীদের নিয়ে ছাপ্পাভোট করার অভিযোগ ওঠে সোনামুখীর বিধায়ক দীপালি সাহার বিরুদ্ধে। ভোট গ্রহণে আসা সরকারি কর্মীদের হেনস্থার অভিযোগও উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এই ঘটনার পর বেশ কিছুদিন ফেরার ছিলেন তিনি। পরে বিষ্ণুপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করে তিনি জামিন পান। লোকসভা ভোটের ঘটনাটিকে ঘিরে আলোড়ন পড়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। প্রশ্ন উঠেছিল পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।
এ বার সেই দীপালিদেবীই আবার সোনামুখী পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী। শুধু লোকসভাতেই নয়, দীপালিদেবীর বিরুদ্ধে সোনামুখীর টাউন লাইব্রেরি নির্বাচনের গণনাও বানচাল করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, ২০১৩ সালে ওই নির্বাচনে ভোট গণনায় ফলাফল খারাপ হচ্ছে আঁচ পেয়েই ব্যালট পেপার শাড়ির আঁচলে করে নিয়ে গণনা কেন্দ্র থেকে চম্পট দিয়েছিলেন তিনি। নির্বাচন কমিশনকে লেখা চিঠিতে এই সব ঘটনার কথাই উল্লেখ করেছেন বাম প্রার্থীরা। আসন্ন পুরভোটে বাহিরাগত দুষ্কৃতীদের এলাকায় নিয়ে এসে সন্ত্রাস চালানো, হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ করা হয়েছে। পুরভোট ঘোষণা হওয়ার পর এক কংগ্রেস প্রার্থীকে মারধর করে দোকান দখলেরও অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে।
বাঁকুড়ায় জেলায় তিনটি পুরসভার মধ্যে একমাত্র সোনামুখীতেই ক্ষমতায় রয়েছে সিপিএম। এ বারও পুরসভা ধরে রাখতে মরিয়া বাম শিবির। অন্যদিকে সোনামুখী ছিনিয়ে নিতে মরিয়া তৃণমূলও। সব মিলিয়ে ভোটের হাওয়া জেলার আর দু’টি পুরসভার চেয়ে কিছুটা বেশিই উত্তপ্ত সোনামুখীতে। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “অসামাজিক কিছু লোকজনকে বাইরে থেকে এনে ভোট করতে চাইছে তৃণমূল। বিধায়কের প্রত্যক্ষ মদতে এইসব হচ্ছে। এলাকায় বাম প্রার্থী ও সমর্থকদের রীতিমতো হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে আমাদের দলের পতাকা ফেস্টুন। প্রকাশ্যেই চলছে হুমকি।’’ তাঁর সংযোজন, “নির্বাচন কমিশনকে আমরা বিষয়টির উপর নজর রাখার আবেদন জানিয়েছি। আমরা চাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট হোক। এলাকায় লিফলেট ছড়িয়ে মানুষকেও এই ধরনের ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে আহ্বান জানিয়েছি।’’ প্রতিটি ওয়ার্ডেই লিফলেট বিলি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সুব্রতবাবু। লিফলেটে বিগত কয়েক বছরের রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ঘটনার কথাও লেখা হয়েছে।
দীপালিদেবী অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করছেন। উল্টে ভোটে হারার ভয়ে সিপিএম তাঁর বিরুদ্ধে ‘চক্রান্ত’ করছে বলে অভিযোগ তুলছেন তিনি। তাঁর দাবি, “বিগত ৩৪ বছরে যা কাজ হয়নি ক্ষমতায় আসার কয়েক বছরের মাথায় সেই কাজ করে দেখিয়েছি আমরা। সাধারণ মানুষ এর সাক্ষী। সিপিএমও জেনে গিয়েছে এ বার ভোটে হার নিশ্চিত। তাই এইসব অপবাদ দিচ্ছে আমার বিরুদ্ধে।” তাঁর বক্তব্য, “ভোট একটা গণতান্ত্রিক অধিকার। মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট দেবেন। আমি কোনও দিনই ভোট প্রক্রিয়ায় বাধা দিইনি। সব ক্ষেত্রেই আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে।”
এ দিকে বাম প্রার্থীদের অভিযোগ পাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসেছে নির্বাচন কমিশনও। জেলা শাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে সোনামুখীর উপরে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে কমিশনের তরফে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৫টি ওয়ার্ডের সোনামুখী পুরসভার ২৯টি বুথের মধ্যে ১১টি অতি স্পর্শকাতর ও ১০ টি বুথকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “নির্বাচন কমিশনে কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন বাম প্রার্থীরা। অভিযোগের তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কমিশন সোনামুখীর পরিস্থিতির উপরেও নজর রাখতে বলেছে।” জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলেন, “বাম প্রার্থীদের অভিযোগ তদন্ত করে আমরা কমিশনে রিপোর্ট পাঠিয়েছি। সোনামুখীতে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট করতে পুরোদমে নজরদারি চালানো হচ্ছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পুলিশি টহল চলছে। ভোটের দিনেও বিশেষ ব্যবস্থা নেব।”