জেলা পরিষদে সংরক্ষণের তালিকা

আসন নেই শুনে খুঁটি ধরতে দৌড়

আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের আসন সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে, সভাধিপতি-সহ শাসকদলের বহু নেতা-নেত্রীর পুরনো আসনে কোপ পড়েছে।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৫
Share:

চেনা আসন নয়, দল টিকিট দিলে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের অনেক জনপ্রতিনিধিকেই ফেরার জন্য এ বার নতুন আসনে লড়তে হবে।

Advertisement

আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের আসন সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে, সভাধিপতি-সহ শাসকদলের বহু নেতা-নেত্রীর পুরনো আসনে কোপ পড়েছে। এমনকী ১৯৭৮ সাল থেকে টানা আট বার কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতাও তাঁর নিজের আসন থেকে এ বার আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। তালিকা পাওয়ার পরে মূলত তৃণমূলের অন্দরে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। দল সূত্রের খবর, সংরক্ষণের কোপে পড়া কিছু নেতা-নেত্রী ইতিমধ্যেই পছন্দের আসন পেতে দলের শক্ত খুঁটি ধরতে ঘুঁটি সাজাতে নেমে পড়েছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলা পরিষদের মোট আসন ৩৮টি। তার মধ্যে এ বার খসড়া তালিকা অনুযায়ী সাধারণের জন্য ৯টি, অনগ্রসর শ্রেণির জন্য ২টি, তফসিলি জাতির ৪টি, তফসিলি উপজাতির ৪টি ও মহিলাদের জন্য ১৯টি (তার মধ্যে সাধারণ ১০টি, অনগ্রসর শ্রেণির ৩টি, তফসিলি জাতির ৩টি, তফসিলি উপজাতির ৩টি)

Advertisement

সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলরামপুরের যে আসন থেকে জিতেছিলেন, এ বার তা তফসিলি উপজাতি (মহিলা) সংরক্ষিত হয়েছে। বলরামপুরের অন্য আসনটি অবশ্য সংরক্ষণের কোপে পড়েনি। একই ভাবে সংরক্ষণের কোপে পড়েছেন দলের জেলা মহিলা সভানেত্রী তথা নারী ও শিশুকল্যাণ কর্মাধ্যক্ষ নিয়তি মাহাতোও। মানবাজার- ১ ব্লকের যে আসন থেকে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন, তা এ বার তফসিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। তবে নিয়তিদেবীর বাড়ি মানবাজার ২ ব্লকের দু’টি আসন অবশ্য মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে।

সৃষ্টিধরবাবু বলেন, ‘‘আমি নিজে এখনই কী করে বলব, যে বলরামপুরের অন্য আসনে দাঁড়াব। দল যদি মনে করে তবেই প্রার্থী হব।’’ আর নিয়তিদেবীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সকলেই যাতে সুযোগ পান, সে জন্যই সংরক্ষণ করা হয়। এটা নির্বাচনের অঙ্গ। আমি স্বাগত জানাই। আর দলে তো কেউ ব্যক্তি হিসেবে প্রার্থী হন না। দল যোগ্যদেরই প্রার্থী করবে।’’

শাসকদলের আরেক হেভিওয়েট নেতা দলের জেলা সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুঞ্চার আসনটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। তবে পুঞ্চার অন্য আসনটি অবশ্য সাধারণের জন্য রয়েছে। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘আমি মনে করি জেলাস্তরের নেতৃত্বের জন্য কোনও বিশেষ আসন নয়, দল যদি তাঁকে মনে করে অন্য আসনেও প্রার্থী করতে পারে। দল আমাকে প্রার্থী করলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।’’

একই ভাবে নিজের আসন হারাচ্ছেন দলের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুষেণচন্দ্র মাঝি, বন ও ভূমি বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ হলধর মাহাতো, কৃষি ও সেচ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ অনাথবন্ধু মাজিরাও। সাঁতুড়ির আদিবাসী নেতা বড়কারাম টুডু, বান্দোয়ানের ভাস্বতী মাঝি, বরাবাজারের সুমিতা সিংহ মল্ল, ঝালদা ২ ব্লকের গৌরী মাহাতোদের মতো জেলা পরিষদের সদস্যেরাও টিকিট পেলে নিজেদের পুরনো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।

বান্দোয়ান ও সাঁতুড়ি ব্লকে জেলা পরিষদের আসন একটিই। বরাবাজারে সুমিতাদেবীর আসনটি ওবিসি এবং এই ব্লকের অন্য আসনটি তফসিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছে।

ঝালদা ২ ব্লকে গৌরীদেবীর আসনটি তফসিলি উপজাতির জন্য এবং এই ব্লকের অন্য আসনটি তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছে। হুড়া থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন দলের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি নরেন চক্রবর্তীর স্ত্রী অনিতা চক্রবর্তী। তাঁর আসনটি তফসিলি উপজাতি (মহিলা) সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছে। তবে হুড়া ব্লকের অন্য আসনটি সাধারণের জন্য রয়েছে। দলের এক জেলা নেতার মন্তব্য, ‘‘কাকে, কোথায় টিকিট দেওয়া হবে, তা দলের আলোচনায় ঠিক হবে। এখনই এ নিয়ে দুর্ভাবনার কিছু নেই।’’

একই ভাবে জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা টানা আটবার জিতে আসা বাহাদুর মাহাতোর ঝালদা ১ ব্লকের পুরনো আসনটিও মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। এই ব্লকের অন্য আসনটি আবার তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। যদিও বাহাদুরবাবু বলছেন, ‘‘আমি এ বার আগেই দলকে জানিয়েছিলাম, আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই না। আমাকে যেন অব্যাহতি দেওয়া হয়। যাই হোক সংরক্ষণ বিধিই আমাকে অব্যাহতি দিল।’’

দলে বিতর্কের জেরে অনাস্থায় কর্মাধ্যক্ষের পদ খোয়ানো (বর্তমানে কংগ্রেস জেলা সহ-সভাপতি) উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসনটিও এ বার তফসিলি মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমার পুরুলিয়া ১ ব্লকের দু’টি আসনই সংরক্ষিত হল, অথচ শাসকদলের দুই হেভিওয়েট নেতার ব্লকে একটি করে আসন অসংরক্ষিত থাকল কেন? এ নিয়ে আমাদের আপত্তির কথা জানাব।’’

তবে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালির বক্তব্য, ‘‘এটা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত খসড়া তালিকা। এতে তৃণমূলের কোনও ভূমিকা নেই। অভিযোগ থাকলে সেখানে কেউ জানাতে পারেন।’’

জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের আধিকারিক অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই তালিকা নিয়ে কারও মতামত থাকলে, তা ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্য নির্বাচন দফতরে জানানো যাবে।’’ তিনি জানান, ৩০ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মতামতগুলির নিষ্পত্তি করে তারপরেই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন