উদ্যোগ বাঁকুড়া প্রশাসনের

মানুষের কথা শুনতে হাতিয়ার ‘সংযোগ’

প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে দূরত্ব কমাতে রাজ্যে পালা বদলের পর থেকেই সচেষ্ট হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী ও শীর্ষ আমলাদের নিয়ে জেলায় জেলায় গিয়ে বৈঠক করেছেন বারবার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪৬
Share:

প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে দূরত্ব কমাতে রাজ্যে পালা বদলের পর থেকেই সচেষ্ট হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী ও শীর্ষ আমলাদের নিয়ে জেলায় জেলায় গিয়ে বৈঠক করেছেন বারবার।

Advertisement

অথচ জেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের সঙ্গে সেখানকার বিধায়ক কিংবা জেলাশাসকদের দূরত্ব যে ঘুচে গিয়েছে, তা বলা যাবে না। এ বার সেই দূরত্ব মেটাতেই উদ্যোগী হয়েছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। ব্লকে ব্লকে মানুষের সমস্যা শুনতে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হচ্ছেন জেলাশাসক, বিধায়ক, সভাধিপতি। আজ, শনিবার তালড্যাংরা বিধানসভা কেন্দ্রের সিমলাপাল ও তালড্যাংরা ব্লকে এই অনুষ্ঠান হতে চলেছে। যার পোশাকি নাম ‘সংযোগ’। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানান, পূর্ত থেকে সেচ, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা প্রশাসনের প্রায় সব ক’টি দফতরের আধিকারিকেরাই এই সংযোগ অনুষ্ঠানে থাকবেন। ব্লক প্রশাসনের তরফে এলাকায় মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানানো হয়েছে।

জেলাশাসকের কথায়, “মানুষ যে সব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তা জেনে দ্রুত তার সমাধান করাই আমাদের লক্ষ্য।’’ তিনি জানাচ্ছেন, গত নভেম্বরে জঙ্গলমহলের রাইপুর ও রানিবাঁধে পরীক্ষামূলক ভাবে এই অনুষ্ঠান করা হয়েছিল। মৌমিতাদেবী বলেন, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ নিজের সমস্যার কথা সরাসরি প্রশাসনের কাছে জানাতে পারেন না। রাইপুর ও রানিবাঁধে গিয়ে বুঝেছি, প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের ব্যবধান ঘোচাতে বেশ কার্যকরী হচ্ছে এই অনুষ্ঠান।’’

Advertisement

আগামী দিনে তাই জেলার প্রতিটি ব্লকেই ‘সংযোগ’ কর্মসূচি নেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে জেলা প্রশাসন। তালড্যাংরার বিধায়ক সমীর চক্রবর্তীর কথায়, “গত মাসেই সংযোগ কর্মসূচি নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। এটা দারুণ উদ্যোগ। মানুষ সরাসরি প্রশাসনকে নিজেদের সমস্যা বলার সুযোগ পেলে উন্নয়নের গতি বাড়বে।’’ তালড্যাংরা কেন্দ্রের ব্লকগুলিতে যাতে নিয়মিত এই অনুষ্ঠান হয়, সে বিষয়ে তিনি উদ্যোগী হবেন বলেও জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে যে-সব সমস্যা উঠে আসবে, তা দ্রুত মেটানোর বিষয়েও তিনি প্রশাসনিক দফতরগুলির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলার আশ্বাস দিয়েছেন বিধায়ক। জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর মতে, রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই প্রশাসনের অন্দরের জটিলতা কাটাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আগে সরকারি দফতরে এসে সাধারণ মানুষ আধিকারিকদের দেখাই পেতেন না। জনপ্রতিনিধিরাও এলাকায় যেতেন না। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কড়া মানসিকতায় এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উলটো। জনপ্রতিনিধি ও আধিকারিকেরা মানুষের এলাকায় আসছেন সমস্যা শুনতে। সংযোগ কর্মসূচিও সেই লক্ষেই নেওয়া।’’

প্রশাসনের এমন উদ্যোগে আশায় রয়েছেন জেলার সাধারণ নাগরিকেরা। তালড্যাংরার প্রত্যন্ত নব্বই বিঘা গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা শেখ মহম্মদ ভুঁইয়ার কথায়, “আমার দীর্ঘ জীবনে কখনও এমন অনুষ্ঠানের কথা শুনিনি। গ্রামে নানা অসুবিধার মধ্যে রয়েছি আমরা। কিন্তু কোনও দিনই এলাকার বিধায়ক বা জেলাশাসককের সামনে তা তুলে ধরার সুযোগ পাইনি।’’ তালড্যাংরারই আমজোড়ের বাসিন্দা ললমোহন গরাই, গণেশ্চন্দ্র রায়রা বলেন, “এলাকায় কোনও অনুষ্ঠান হলে বিধায়ক বা জেলাশাসক আসতেন। আমাদের দূর থেকে দেখতে হত। পার্টির লোকেদের মাধ্যমে বিধায়কদের কাছে এলাকার সমস্যা জানালেও কাজ হত না। এ বার হয়তো কাজ হবে।’’

আমজোড়ের দেশবাঁধ খালের উপর একটি সরু কজওয়ে রয়েছে। ফি বছর বর্ষায় সেটি জলে ডুবে যায়। তার উপর দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন গ্রামবাসীরা। এই সমস্যা গত চার দশকের। দীর্ঘদিন ধরে ওই খালে পাকা সেতুর দাবি তুললেও তা কানে তোলা হয়নি বলে ক্ষোভ গ্রামবাসীর। তাঁরা জানান, মাস খানেক আগে বিধায়ক এসেছিলেন। তাঁকে সমস্যার কথা জানানোর পরে ব্লকের আধিকারিকেরা এসে কজওয়ের মাপজোক করে গিয়েছেন। ওই কজওয়ের পাশে একটি রাস্তাও করে দিয়েছেন। সেখানে সেতুও হবে বলে শোনা যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন