অবরোধ: রেলগেটের দাবিতে লাইনে জনতা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি
পরীক্ষামূলক যাত্রাতেই হোঁচট খেল আমোদপুর–কাটোয়া লাইনের ট্রেন। বৃহস্পতিবার রেলগেটের দাবিতে লাভপুরের ষষ্ঠীনগরে ট্রেনটিকে আটকে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯১৬ সালে ম্যাকলিওড কোম্পানি আমোদপুর থেকে কাটোয়া পর্যন্ত ৫২ কিমি ন্যারোগেজ রেলপথের সূচনা করে। সেই সময় ওই রেলপথের উপর দিয়েই বহু গ্রামে যাতায়াতের রাস্তা ছিল। রেলগেটের মাধ্যমে ওই সব রাস্তায় যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করত রেল দফতর। লাভপুরের গরুরহাট তথা ষষ্ঠীনগর সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় বড়গোগা যাওয়ার রাস্তার উপরেও ছিল তেমনই একটি রেলগেট। সেই গেটটি তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ।
প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, ন্যারোগেজ রেলপথকে ব্রডগেজে উন্নীত করার দাবি দীর্ঘ দিনের। সেই দাবি মেনে ২০১৩ সালে ব্রডগেজে রূপান্তরের কাজ শুরু হয়। সেই সময় রেলগেটের ঝামেলা এড়াতে বহু জায়গায় ‘আন্ডারপাস’ নির্মাণ করা হয়। যেখানে ‘আন্ডারপাস’ তৈরি করা সম্ভব হয়নি, সেই সব জায়গায় রেলগেটই বহাল রাখে রেল দফতর। কিন্তু, বড়োগোগা যাওয়ার রাস্তায় সেই রকম কোনও ব্যবস্থাই রাখা হয়নি। উল্টে তাঁদের ভুল বুঝিয়ে লোহার পাত দিয়ে রাস্তাটাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে গ্রামবাসীর অভিযোগ।
অথচ, স্থানীয় প্রশাসনই রাস্তাটি ঢালাই করেছে। সেই রাস্তা দিয়েই ৬/৭টি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন। ওই সব গ্রামের বাসিন্দারা বৃহস্পতিবার ট্রেন অবরোধে সামিল হন। এ দিনই প্রথম দু’দিকে ইঞ্জিন সহ ১০ বগির ট্রেনটি পরীক্ষামূলক ভাবে কাটোয়া থেকে আমোদপুর অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। ওই ট্রেনে ছিলেন কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি অফিসার পিকে আচারিয়া, ডিআরএম মনু গোয়েল, রেল পুলিশ এবং রেলের অন্য পদস্থ আধিকারিরা।
সাড়ে ১২টা নাগাদ ট্রেনটি ষষ্ঠীনগরে পৌঁছলে সেটি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দুপুর দু’টো নাগাদ প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কাশীনাথ মিশ্র, সুমন ঘোষ, শান্তনু দাস, সন্তোষ দাসদের অভিযোগ, ‘‘রেল দফতর আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। প্রথম দিকে রেলগেট নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এমনকি গেটের রক্ষী থাকার জন্য ঘরও তৈরি করেছে। তারপরই হঠাৎ লোহার পাত দিয়ে রাস্তাটাই বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ ওই রাস্তাটা দিয়েই আমরা পুরুষানুক্রমে যাতায়াত করছি।’ শুভাশিস মণ্ডল, শান্তি মণ্ডলরা জানান, রাস্তাটি বন্ধ হয়ে গেলে ৬/৭টি গ্রামের মানুষ জনকে প্রায় ২ কিলোমিটার ঘুরপথে যাতায়াত করতে হবে।
এ ব্যাপারে রেল দফতরের কর্তারা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে বিশয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন রেলকর্তারা। লাভপুরের বিডিও শুভ দাস বলেন, ‘‘গ্রামবাসীরা রেলের আধিকারিকদের লিখিত ভাবে তাঁদের দাবির কথা জানিয়েছেন। আমাদের জানালে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রেল দফতরের দৃষ্টি আর্কষণের ব্যবস্থা করা হবে।’’