গণপুর, রামপুরে প্রচারে এগিয়ে পদ্ম

এলাকাবাসীর মতে, দুটি এলাকার অধিকাংশ দেওয়ালেই হয় পদ্মফুল আঁকা হয়েছে, না হয় পদ্ম আঁকার জন্য আগেই সেই দেওয়াল দখল করে রেখেছে বিজেপি।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০০:০৬
Share:

লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে পুরনো ‘ক্ষত’ কতটা শুধরে নেওয়া যাবে, তা সময় বলবে। কিন্তু, শাসকদলের কাছে এখনও অস্বস্তির জায়গা মহম্মদবাজারই। তার ইঙ্গিত মিলছে ভোট প্রচারের নিরিখেও। দেওয়াল দখলের লড়াইয়ে জেলার প্রায় সর্বত্র এগিয়ে শাসকদল। ব্যাতিক্রম মহম্মদবাজারের গণপুর ও রামপুর।

Advertisement

এলাকাবাসীর মতে, দুটি এলাকার অধিকাংশ দেওয়ালেই হয় পদ্মফুল আঁকা হয়েছে, না হয় পদ্ম আঁকার জন্য আগেই সেই দেওয়াল দখল করে রেখেছে বিজেপি। অন্য দিকে, কিছুদিন আগে তৃণমূল নেতৃত্ব ওই দুটি অঞ্চলে তড়িঘড়ি কমিটি তৈরি করে প্রচারের নির্দেশ দিলেও এখনও পর্যন্ত তেমন করে নিজেদের ‘ছাপ’ রাখতে পারেনি দল, ঘনিষ্ঠমহলে তা মানেন শাসকদলের নেতারাই। রটনা যে পুরোপুরি মিথ্যা নয়, তার কিছু ইঙ্গিত মিলেছে তৃণমূল ব্লক সভাপতি তাপস সিংহের বক্তব্যেও। তিনি বলছেন, ‘‘আমরাও লিখছি। তবে কিছুটা এগিয়ে বিরোধী দল। সেটা ভোটপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোনও বাধা হবে না।’’

এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গত বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই ভিন্ন পথে হাঁটছে মহম্মদবাজার। গত বছরের মে মাসের ৭ তারিখ প্রায় ১০ হাজার মানুষের জমায়েত করে ‘উন্নয়নের’ বাধা টপকে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির অধিকাংশ আসেন প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি। শাসকদলের অভিযোগ ছিল ঝাড়খণ্ড থেকে লোক নিয়ে এসে এমনটা করেছে বিরোধীরা। ওই ঘটনার পরপরই ১০ হাজার ৫৬ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের স্বতঃপ্রণোদিত মামলা হয়। বেশ কিছু বিরোধী নেতাকর্মী গ্রেফতার হন। এই আবহে ব্লক জুড়ে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার না করতে পারলেও আদিবাসী প্রধান মহম্মদবাজার এলাকায় ভোটের ফলে চমক দেয় বিজেপি। তার পিছনে শাসকদলের নেতাদের প্রতি ক্ষোভকেই দায়ী করেছিলেন স্থানীয় মানুষ।

Advertisement

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশির ভাগ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পাওয়া ছাড়াও জেলার ১৬৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত শাসকদলের হাত ছাড়া হয়েছিল। সেই তালিকায় ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের মল্লারপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও ছিল মহম্মদবাজারের গণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতটি। এখানেই শেষ নয়। ৬ আসন বিশিষ্ট রামপুর ৩-৩ আসন টাই হয়ে যাওয়ার পরে কোন দল সেখানে বোর্ড গড়বে, তৃণমূল-বিজেপির সেই দ্বন্দ্ব এখনও বর্তমান। তা নিয়ে নাটকও হয়েছে বিস্তর। আইনশৃঙ্খলতা জনিত সমস্যা দেখিয়ে এখনও বোর্ড গঠন হয়নি। এলাকা সূত্রে খবর, বিজেপির ‘দাপটে’র জন্যই দুটি অঞ্চলে প্রচারে পিছিয়ে শাসকদল।

তৃণমূলেরই একটি সূত্র বলছে, গণপুর পঞ্চায়েত হাতছাড়া হাওয়ার মূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। টাই হয়ে থাকা রামপুর পঞ্চায়েতেও বর্তমানে পাল্লাভারি বিজেপির। প্রথম দিকে জেতা সদস্যদের নিজেদের দিকে টানতে চেষ্টার কসুর করেনি কোনও দলই। গত ডিসেম্বরে বিজেপির টিকিটে জেতা দুই প্রার্থী বোলপুরে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় খেলা শেষ হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছিদল। কিন্তু, তার ঠিক দু’দিনের মাথায় দলবদল করা দুই সদস্য ফের বিজেপির পতাকা হাতে নেওয়ায় ফের অ্যাডভান্টেজ বিজেপির। এলাকাবাসী বলছেন, ‘‘ওই ঘটনাই প্রমাণ করে পাল্লা কোন দিকে ভারী।’’

পরিস্থিতি সামলাতে দিন কয়েক আগে মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ, মলয় মুখোপাধ্যায় ও ব্লক সভাপতি তাপস সিংহেরা দুটি এলাকার বেশ কিছু কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচার ও এলাকার হাল ধরতে দুটি পৃথক কমিটি গড়ে গিয়েছেন। তার পরেও পরিস্থিতি শাসকদলের অনুকূলে এমনটা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলছেন, ‘‘আমরা দেওয়াল লিখতে কাউকে কোথাও বাধা দিইনি। আসলে ওই এলাকায় মানুষ শাসকদলের থেকে সরে গিয়েছেন। তাই দেওয়াল দখলের লোকের অভাব হয়েছে।’’

রামকৃষ্ণ রায়ের বক্তব্যকে পাত্তা দিতে নারাজ কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলছেন, ‘‘দেওয়াল দখল শব্দেই আপত্তি। মানুষের সামর্থই আসল। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। যাঁর দেওয়াল, তাঁর অনুমতি নিয়েই দেওয়াল লেখা হচ্ছে। দখলের প্রশ্নই নেই। শুধু কে, কত বেশি দেওয়াল লিখল সেটার উপরে ভোটের ফল নির্ভর করবে না। জিতব আমরাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন