বাঁকুড়ায় তাস সেই ‘সুব্রতদা’

জেলার সঙ্গে ‘দীর্ঘদিনের সম্পর্ক’। সঙ্গে গত ১০ বছরে পঞ্চায়েতের কাজ। জোড়া অস্ত্রে শান দিয়ে লোকসভা ভোটযুদ্ধে ঝাঁপাবেন বাঁকুড়ার তৃণমূল প্রার্থী তথা বঙ্গ রাজনীতির চেনা মুখ সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৯ ০৪:৪৩
Share:

জেলার সঙ্গে ‘দীর্ঘদিনের সম্পর্ক’। সঙ্গে গত ১০ বছরে পঞ্চায়েতের কাজ। জোড়া অস্ত্রে শান দিয়ে লোকসভা ভোটযুদ্ধে ঝাঁপাবেন বাঁকুড়ার তৃণমূল প্রার্থী তথা বঙ্গ রাজনীতির চেনা মুখ সুব্রত মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্যতম প্রবীণ সদস্য, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রতবাবুকে বাঁকুড়া লোকসভার প্রার্থী করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘোষণায় জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব কিছুটা অবাক হলেও খুশি। বাঁকুড়া কেন্দ্রে কাকে দলনেত্রী প্রার্থী করবেন তা নিয়ে জেলার জল্পনা চলছিল বেশ কয়েকদিন ধরে। আলোচনায় উঠে আসছিল দুই বিধায়কের নাম। তবে তাঁদের কাউকেই প্রার্থী না করে মুখ্যমনন্ত্রী তাঁর এক সময়ের রাজনৈতিক শিক্ষক ‘সুব্রতদা’কেই প্রার্থী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

নাম ঘোষণার পর টেলিফোনে দেওয়া সুব্রতর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বাঁকুড়ার সঙ্গে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ওই এলাকার সব জায়গার সঙ্গে আমি পরিচিত।’’ অতঃপর তাঁর সংযোজন, ‘‘বাম আমলের দীর্ঘ অনুন্নয়ন-পর্ব শেষ করে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। আগামী দিনে উন্নয়নকে আরও গহতি দেওয়াই আমার লক্ষ্য।’’ সুব্রতবাবুর কথাতেই পরিষ্কার বাঁকুড়ার সঙ্গে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা এবং পঞ্চায়েতমন্ত্রী হিসাবে গ্রামোন্নয়নের কাজকেই তিনি প্রচারের হাতিয়ার করতে চলেছেন

বাঁকুড়া কেন্দ্রে কাকে প্রার্থী করা হবে তা নিয়ে এদিন সকালে তৃণমূলের অন্দরে চর্চা আরও গতি পেয়েছিল।

Advertisement

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কালীঘাটে যখন তৃণমূল প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, তখন নিজের কার্যালয়ের ডেস্কটপে লাইভ সম্প্রচার দেখছিলেন বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত এবং তৃণমূলের কয়েকজন কাউন্সিলর। সুব্রতবাবুরর নাম ঘোষণার পরই চেয়ার থেকে কার্যত লাফিয়ে উঠেছিলন পুরপ্রধান। তারপরই বলে উঠলেন, ‘‘আসনটাই জিতে গিয়েছি।” এমনকি, সুব্রতবাবু কত ভোটে জিতবেন তারও একটা প্রাথমিক হিসেবও কষে নিলেন সেখানে উপস্থিত বাঁকুড়া পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অভিজিৎ দত্ত এবং তাপস সিন্দালের মতো তৃণমূলকর্মীরা। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সুব্রতদার মত দক্ষ এবং কাজের মানুষকে প্রার্থী হিসেবে পাওয়ায় জয় নিশ্চিত হয়ে গেল।” ২০০৯ লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের টিকিটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটপ্রার্থী হিসাবে এই কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী হয়েছিলেন সুব্রতবাবু। তবে সেবার জিতেছিলেন সিপিএম প্রার্থী বাসুদেব আচারিয়া। মহাপ্রসাদবাবু বলেন, “সুব্রতদাকে জেতানোর জন্য প্রাণপাত করেছিলাম। সফল না হওয়ায় প্রচণ্ড হতাশ হয়েছিলাম। এ বার সুব্রতদাকে জিতিয়ে হতাশা দূর করার সুযোগ পেলাম।”

রাজ্যে শাসনক্ষমতায় বদলের পর মন্ত্রী হয়ে প্রায়ই বাঁকুড়া এসেছেন সুব্রতবাবু। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ মুনমুন সেনের হয়ে ভোট প্রচারে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল সুব্রতবাবুকে। বাঁকুড়া শহরের এক সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বলেন, “প্রার্থী হিসেবে জেলার যে দুই বিধায়কের নাম নিয়ে জল্পনা চলছিল তাঁদের একজনের বিরুদ্ধে দলেরই একটা অংশ ক্ষুব্ধ। তিনি প্রার্থী হয়ে গেলে আমরা ভোট করতাম কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। সুব্রতবাবুর নাম ঘোষণা হওয়াতে আমরা খুশি।” এদিন দুপুর থেকেই দেওয়াল লিখনে নেমে পড়েন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বাঁকুড়ার উপ-পুরপ্রধান দিলীপ আগরওয়াল দলের কর্মীদের নিয়ে লালবাজার এলাকায় দেওয়াল লেখেন। তিনি বলেন, “সুব্রতদা প্রার্থী হওয়ায় দল এক জোট হয়ে লড়বে।” জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়, বাঁকুড়া শহর তৃণমূলের সভাপতি সিন্টু রজকরাও দেওয়াল লেখায় নেমে পড়েন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন