মুশকিল আসানে মডেল ‘লো-কস্ট’, সাত দিনেই ঘর অঙ্গনওয়াড়ির

এক চিলতে উঠোন। তারই এক কোণে খান কয়েক ইট পরপর সাজিয়ে আড়াল তৈরি করে রান্নার ব্যবস্থা। সামনে খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে বসে শিশু, প্রসূতি মহিলারা।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৬ ০২:০৬
Share:

দুবরাজপুরে তৈরি হচ্ছে লো-কস্ট ডিজাইনের ঘর। —নিজস্ব চিত্র

এক চিলতে উঠোন। তারই এক কোণে খান কয়েক ইট পরপর সাজিয়ে আড়াল তৈরি করে রান্নার ব্যবস্থা। সামনে খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে বসে শিশু, প্রসূতি মহিলারা। দু’একটি ফাইবারের টুল, ছড়ানো থালা-বাটি, জলের পাত্র— এই চলছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। কোথাও পাকা নির্মাণ কিংবা উঠোন নয়, খোলা আকাশ বা গাছের নীচেই চলছে সরকারি প্রকল্পের কেন্দ্র। জেলার বেশ কিছু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের এই ছবি বদলে দিতেই লো কস্ট ডিজাইনের বাড়ি নির্মাণ করছে সুংসহত শিশু বিকাশ দফতর। দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক অরিন্দম ভাদুরী বলেন, ‘‘মডেল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মাপের লো কস্ট ডিজাইনের এই ধরনের বাড়ি তৈরির খরচ অর্ধেকের কম। ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন এবং আরআইডিএফ প্রকল্পের টাকায় এই মুহূর্তে জেলায় জেলায় এমন ১৭টি কেন্দ্র নির্মিত হবে। কাজ চলছে।’’

Advertisement

নিজস্ব ঘর না থাকা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির মধ্যে তেমনই একটি কেন্দ্র দুবরাজপুরের বাবুবেড়া ১৭৭ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র।

বছরের পর বছর ধরে শীত গ্রীষ্ম বর্ষা কষ্টে চলতে থাকা কেন্দ্রটির দুর্ভোগ কাটতে চলেছে অচিরেই। নতুন লো কস্ট বাড়ি পাওয়ার তালিকায় রয়েছে তাদের নাম। তৈরি হচ্ছে কেন্দ্রটির জন্য নতুন ঘর। এতদিন পরে নিজস্ব ঘর পাওয়ায় আনন্দ তো আছেই, তবে চমক তার থেকেও বেশি অন্য কারণে।

Advertisement

চমকের মূলে রয়েছে ঘর তৈরির পদ্ধতি এবং উপকরণ।

গ্যালভ্যানইজড শিট দিয়ে তৈরি ফাঁপা প্যানেল বোর্ড (যার মধ্যে রয়েছে ফোম, কাঠের গুড়ো) এবং লোহার ফ্রেম দিয়েই তৈরি হচ্ছে লো-কস্ট ডিজাইনের বাড়ি। অনেকটা টিনের ছাউনি বাড়ির মতো দেখতে হলেও নব নির্মিত বাড়িটি দেখতে অনেক স্মার্ট। দুধসাদা ৬৪০ স্কোয়ার ফিট বাড়িটিতে থাকছে বড় হল ঘর, রান্নাঘর, স্টোর রুম এবং টয়লেট। বাড়িটির দুদিকে বড় বড় গ্রিলঘেরা অ্যালুমিনিয়ামের ফ্রেমে কাঁচের জানালা। সুদৃশ দরজা, ফ্লোর টাইলস লাগানো মেঝে। বাবুবেড়া গ্রামে উত্তেজনা বাড়ি তৈরির ধরনকে ঘিরেই।

দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে জেলার মোট ৪৮৮৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩১১২টি কেন্দ্রের নিজস্ব ঘর রয়েছে। বাকিগুলির অধিকাংশই চলে হয় পাড়ার ক্লাব ঘরে, নয় অন্যের দাওয়ায় বা খোলা আকাশের নীচে। ফলে একটি কেন্দ্র থেকে যে পরিষেবা পাওয়ার কথা সেগুলির অনেকটাই পাওয়া যায় না। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টির ঘাটতি মেটানোর পাশাপাশি শিশুদের যে প্রি-স্কুল ট্রেনিংয়ের কথা বলা হয়েছে সেটা কার্যত হয়ই না। কোনও ক্রমে খিচুড়িটুকু রান্না হয়।

মডেল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গুলির জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৬ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা। একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বাড়ি তৈরির শ্রমের খরচ ধরলে সেটা আরও বাড়ে। অথচ লাখ তিনেকের মধ্যেই তৈরি হচ্ছে লো-কস্ট ডিজাইনের বাড়ি। আরও একটি সুবিধে বাড়িটিতে নোনা ধরার সম্ভবনা নেই। প্রকল্প আধিকারিক অরিন্দম ভাদুরী বলছেন, ‘‘যে ঠিকাদার সংস্থা বাড়িগুলির রূপরেখা তৈরি করছেন তাঁদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে যাতে বৃষ্টির জল ধরে শৌচাগারে ব্যবহার করা যায় সেটার ব্যবস্থা যাতে করা যায়।’’

ঝাড়খণ্ডের পালামৌ জেলা থেকে আসা জনা পাঁচেক শ্রমিক দুবরাজপুরের ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঘরটি তৈরি করছিলেন। তাঁদের মধ্যে গুড্ডু শর্মা, সনু বর্মারা বলছেন, ‘‘একটি কেন্দ্র তৈরি হতে ছ’দিন সময় লাগে। দিন দুয়েকের মধ্যেই রেডি হয়ে যাবে।’’ দ্রুত খোলা আকাশের নীচ থেকে ঘরে পৌঁছে যাবে কেন্দ্র সেই জন্য খুশি কর্মী মধুমিতা রুজ ও সহায়িকা মিতা চ্যাটার্জীরা। তাঁরা বলছেন, এতদিন কষ্ট করেছি। সব মিলিয়ে ১০০ জন উপভোক্তা। ইচ্ছে থাকলেও পড়ানোর জায়গা ছিল না। এ বার হবে।’’ খুশি স্থানীয় পূর্ণিমা দাস, আরতি বাউরিরাও। তাঁরা বলছেন, ‘‘এ ভাবে রোদ জলে আর বাইরে শিশুদের নিয়ে দাঁড়াতে হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন