ধুনুচি গড়েই পুজোয় সুখের মুখ ওঁদের

থিমের পুজো হোক বা সাবেক, এদের চাহিদা কমে না। বাহারি টুনি, এলইডি আলোয় মাটির প্রদীপ কিছুটা বাজার হারালেও মাটির ভাঁড়, ধুনুচি বা পুজোর অন্য সামগ্রীর বাজার সেই একই। তাই উৎসবের মরসুম এলেই নাওয়া-খাওয়ার সময় পান না বাঁকুড়ার বাঁকিসেন্দড়া, রাজগ্রামের মৃৎশিল্পীরা।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০০
Share:

থিমের পুজো হোক বা সাবেক, এদের চাহিদা কমে না।

Advertisement

বাহারি টুনি, এলইডি আলোয় মাটির প্রদীপ কিছুটা বাজার হারালেও মাটির ভাঁড়, ধুনুচি বা পুজোর অন্য সামগ্রীর বাজার সেই একই। তাই উৎসবের মরসুম এলেই নাওয়া-খাওয়ার সময় পান না বাঁকুড়ার বাঁকিসেন্দড়া, রাজগ্রামের মৃৎশিল্পীরা।

শুধু বাড়ির কর্তারাই নন, সংসারের কাজ সামলে ধুনুচি তৈরিতে হাত লাগান গিন্নিরাও। কাজ চলে মাঝরাত পর্যন্ত।

Advertisement

কামারশালে দু’হাতে কাঁচা মাটি মাখতে মাখতে বাঁকিসেন্দড়ার মৃৎশিল্পী ভোলানাথ কুম্ভকার বলে চলেন, ‘‘চায়না বাতি আসায় দীপাবলিতে মাটির প্রদীপের চাহিদা কমেছে অনেকটাই। কিন্তু ধুনুচি, মাটির ভাঁড়ের চাহিদা একই।’’ দেবীকে ঘরে আহ্বান জানাতে সপ্তমীর দিন থেকে বাড়ির সদর দরজার সামনে ছোট্ট ভাঁড়ে জল ও আমপল্লব দিয়ে মঙ্গল ঘট সাজিয়ে রাখার চল বাঁকুড়া জেলার ঘরে ঘরে। ফলে ভাঁড়ের বিক্রি স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে যায়। তা ছাড়া প্রতি বছরেই পুজোর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে ধুনুচির বাজারও ভালই। মৃৎশিল্পীরা জানান, মাঝারি মাপের ধুনুচির দাম বাঁকুড়ার খোলা বাজারে ১৫-২০ টাকা। শিল্পীরা ওই ধুনুচি পাইকারি মূল্যে বিক্রি করে পান দশ থেকে বারো টাকা। পুজোর জন্য ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার ধুনুচি বানিয়ে ফেলেছেন তাঁরা।

দুর্গাপুজোর পরেই লক্ষী পুজো, তারপর দীপাবলী ও কালীপুজোতেও ধুনুচির বাজার থাকে। ভোলানাথবাবু বলেন, “সারা বছর এই ক’দিনের দিকেই তাকিয়ে থাকি আমরা। যত বেশি কাজ করতে পারব, ততই লাভ।’’ পুজো মরসুমে একটু বেশি লাভের আশায় একই রকম প্রাণপাত করে খেটে চলেছেন বাঁকিসেন্দড়ার আর এক মৃৎশিল্পী গুঁইরাম কুম্ভকারও। গুঁইরামবাবু বলেন, “বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ হলেও এই ক’দিনের ব্যাপারটাই আলাদা। এই ক’দিনেই ঘরে একটু টাকা আসে।’’

শিল্পীরা জানান, এলইডি, টুনি আলো বাজারে আসায় দীপাবলীতে মাটির প্রদীপের বিক্রি বেশ কয়েক বছর ধরেই কমে গিয়েছে। তবে মাটির ধুনুচি বা ভাড়ের বিকল্প এখনও আসেনি। বাড়তি রোজগারের আশায় তাই প্রদীপের চেয়ে এ সব জিনিসের উপরেই নির্ভর করেন শিল্পীরা। পুজোতে নবপত্রিকা স্নানের সময় বা বিসর্জনের সময় একাধিক ধুনুচি ব্যবহার করতে দেখা যায় পুজো কমিটিগুলিকে। মণ্ডপে বা ঘরোয়া পুজোয় ধুনুচি নাচেরও চল রয়েছে। বাঁকুড়ার দশকর্মা ব্যবসায়ী কালীপদ রক্ষিত, বুবুন দরিপারা বলেন, “বিভিন্ন পুজো কমিটি একসঙ্গে ১০-১২টি করে ধুনুচি কিনে নিয়ে যায়। মাটির ধুনুচির চাহিদা দিনের পর দিন বাড়ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন