B.Ed Colleges Affiliation

অনুমোদন না পাওয়া বিএড কলেজ মালিকদের নিয়ে বৈঠকে কেষ্ট-ঘনিষ্ঠ মলয়, মমতাকে জানানোর সিদ্ধান্ত

রাজ্যের বিএড বিশ্ববিদ্যালয় যে ২৫৩টি বিএড কলেজের অনুমোদন বাতিল করেছে, তার মধ্যে মোট পাঁচটির মালিক কেষ্ট-ঘনিষ্ঠ মলয় পিট। পাঁচটির মধ্যে তাঁর তিনটি ঝাঁ-চকচকে বিএড কলেজ রয়েছে বীরভূমেই।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:৩২
Share:

অনুব্রত মণ্ডল-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী মলয় পিটের পাঁচ বিএড কলেজের একটি (বাঁ দিকে)। মলয় পিট (ডান দিকে) —নিজস্ব চিত্র।

প্রয়োজনীয় শর্তপূরণে ব্যর্থ হওয়ায় রাজ্যের ২৫৩টি বিএড কলেজের সরকারি অনুমোদন বাতিল হয়ে গিয়েছে। ওই বিএড কলেজ মালিকদের নিয়ে বোলপুরের শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজে বৈঠকে বসলেন অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী মলয় পিট। গরু পাচার মামলার বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রতের গ্রেফতারির পর সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন বীরভূমের ওই প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। শনিবার অনুমোদন বাতিল হওয়া বিএড কলেজের মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁদের সমস্যা সমাধানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেওয়ার কথা ভাবছেন মলয়রা। বস্তুত, রাজ্যের বিএড বিশ্ববিদ্যালয় যে ২৫৩টি বিএড কলেজের অনুমোদন বাতিল করেছে, তার মধ্যে মোট পাঁচটির মালিক কেষ্ট-ঘনিষ্ঠ মলয়। পাঁচটির মধ্যে তিনটি ঝাঁ-চকচকে বিএড কলেজ রয়েছে বীরভূমেই।

Advertisement

শিক্ষা বিষয়ে ডিগ্রির নাম বিএড। শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে যাঁরা গ্রহণ করতে চান এবং যাঁরা এই পেশায় জড়িত তাদের জন্যই এই কোর্স। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার সরকারি কলেজ আছে ২৪টি। তবে বেসরকারি কলেজের সংখ্যা প্রায় ৬০০। সেগুলোতে শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ নেন লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী। ফি বছর সরকারি অনুমোদন পুনর্নবীকরণের জন্য আবেদন করতে হয় ওই বেসরকারি বিএড কলেজগুলোকে। এ বছর ৪ অক্টোবর ছিল অনুমোদনের আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন। বিভিন্ন আবেদনপত্র যাচাই করে দেখা যায়, বেসরকারি কলেজগুলির মধ্যে প্রায় সাড়ে তিনশোটি কলেজ সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনেছে। বাকি ২৫৩টি কলেজ সেই নিয়ম মানেনি। ওই কলেজগুলোর মালিকেরা শনিবার মলয়ের মেডিক্যাল কলেজে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেবেন। মালিকেরা সরাসরি, বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে আঙুল তুলেছেন। এর আগে সোমা বলেছিলেন, ‘‘পুনর্নবীকরণের জন্য ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন (এনটিসিই) যে শর্ত দিয়েছে, সেই শর্ত পূরণ না হলে পুনর্নবীকরণের জন্য লিঙ্ক খুলে ফর্ম ফিলাপ করতে গিয়ে আটকে যাবে কলেজগুলি। শর্তগুলির মধ্যে অন্যতম হল ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত ঠিক রাখা। তাই এখানে আমাদের কিছু করার নেই। যে সব কলেজে এখনও অনেক শিক্ষক নেই, তারা যেন ধারাবাহিক ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে যায়।’’

মলয়দের অভিযোগ, ‘‘উপাচার্য এ বার প্রথম বার এজেন্সির মাধ্যমে ৮ লক্ষ টাকা করে দাবি করেছেন। যাঁরা এই টাকা দিতে পেরেছেন, তাঁদের কলেজ অনুমোদন পেয়েছে।’’ বিএড কলেজ মালিকদের অভিযোগ, হঠাৎ করে নতুন নিয়মের ফলে অসুবিধার মুখে পড়েছেন তাঁরা। তা ছাড়া, যে নিয়মের গেরোয় ২৫৩টি কলেজের অনুমোদন আটকেছে, সেই একই শর্তাবলি পূরণ না করেও অনেক কলেজই অনুমোদন পেয়েছে। পাশাপাশি, মলয়দের যুক্তি, যে বিষয় নিয়ে আদালতে মামলা চলছে, তা নিয়ে উপাচার্য কী ভাবে মন্তব্য করলেন বা সিদ্ধান্ত নিলেন। মলয় বলেন, ‘‘দমকল-সহ যে সমস্ত প্রকার অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে, সে সব শংসাপত্র পেতে সময় লাগে। সেই সময়সীমা না দিয়েই হঠাৎ করে কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল?’’

Advertisement

ওই বৈঠক এবং মলয়দের তোলা প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ার জন্য বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমার সঙ্গে যোগাযোগ করে আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। তাঁর হোয়াট্‌সঅ্যাপ বার্তা, ‘‘প্রমাণ দিক। আগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ দেখুন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বার বার করে সাবধান করা হয়েছিল, কেউ যেন এজেন্টদের খপ্পরে না পড়েন। কোনও টাকাপয়সার লেনদেনে যেন কেউ না জড়িয়ে পড়েন। আর আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন।’’ অভিযোগের বিষয়ে বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ‘‘প্রমাণ দিক আগে।’’

প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় জড়িয়ে তাপস মণ্ডলেরও কয়েকটি বিএড কলেজের নাম বাদ পড়েছিল আগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন