জ্বর-আক্রান্ত ব্যবসায়ীর মৃত্যু শহরে

জেলা স্বাস্থ্য-কর্তাদের দাবি, মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয়। চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্র খতিয়ে না দেখে তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে না। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০১:৩২
Share:

মৃত রবির (ইনসেটে) গ্রাম রাঘবপুরে গিয়ে তাঁর পরিজনদের সঙ্গে কথা বলছেন স্বাস্থ্য-কর্তারা। ছবি: সুজিত মাহাতো

দেশবন্ধু রোড এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। তারই মধ্যে জ্বরে অসুস্থ সেখানকারই এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হল। সোমবার ভোরে রবি অধিকারী (৩৯) নামের ওই যুবকের মৃত্যু ডেঙ্গিতে হয়েছে বলে তাঁর পরিবার দাবি করলেও, তা মানতে নারাজ স্বাস্থ্য দফতর। জেলা স্বাস্থ্য-কর্তাদের দাবি, মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয়। চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্র খতিয়ে না দেখে তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে না।

Advertisement

রবির বাড়ি পুরুলিয়া ২ ব্লকের রাঘবপুর গ্রামে। পুরুলিয়া শহরের দেশবন্ধু রোডে একটি শপিংমলের উল্টো দিকে তাঁর দোকান রয়েছে। ঘটনা হল, পুরুলিয়া শহরের শুধু ওই এলাকাতেই গত কয়েক সপ্তাহে লাফিয়ে লাফিয়ে ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়ি ঘুরে একাধিক ব্যক্তি জ্বরে অসুস্থ বলে জানতে পারে স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভা। রবিবারও ওই এলাকার তিন জনের ডেঙ্গি ধরা পড়ে। এ নিয়ে ওই এলাকায় ইতিমধ্যে ৩৫ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।

এই পরিস্থিতিতে ওই এলাকার দোকানি রবির জ্বরে অসুস্থ হওয়ার পরে মৃত্যু হওয়ায়, স্বভাবতই তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে শহরে। রবির পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার তিনি জ্বরে অসুস্থ হন। তাঁর ভাই কবি অধিকারী বলেন, ‘‘দাদা ও আমি দু’জনেই দোকান চালাতাম। তাই দাদার জ্বর হওয়ায় দেরি না করে ডেঙ্গির পরীক্ষা করিয়েছিলাম। সেই রিপোর্টে দাদার ডেঙ্গি হয়েছে বলে জানানো হয়। আমরা মনে করি, ডেঙ্গির জন্যই দাদার মৃত্যু হয়েছে।’’

Advertisement

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিকে বাড়িতে রেখেই রবির চিকিৎসা করানো হচ্ছিল। তাঁর রক্তে এনএস১ পজিটিভ হলেও আইজিএম নেগেটিভ এসেছিল। রবিবার বিকেলে তাঁকে পুরুলিয়া শহরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানান, রবির রক্তে সুগার ও রক্তচাপজনিত সমস্যাও ছিল। তবে ডেঙ্গির কোনও পরীক্ষা এই নার্সিংহোমে হয়নি। সোমবার ভোরের দিকে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে স্থানান্তর করা হয়। ঝাড়খণ্ডের বোকারোর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রবির মৃত্যু হয়।

খবর পেয়ে এ দিন উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) গুরুদাস পাত্রের নেতৃত্বে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক প্রতিনিধি দল রবি যে নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন, সেখানে যান। তাঁরা রবির চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখেন। তাঁরা কিছু নথি সংগ্রহ করে নিয়ে যান। তারপরে তাঁরা যান রবির বাড়িতে। রবি ডেঙ্গিতেই মারা গিয়েছেন বলে তাঁদের কাছে দাবি করেন মৃতের ভাই।

তাঁর দাবি, ‘‘দাদার সুগার ও রক্তচাপের সমস্যা ছিল বলে নিয়মিত ওষুধ খেত। তবে দাদার শরীরে ডেঙ্গির লক্ষণ ছিল। ডেঙ্গিতেই তার মৃত্যু হয়েছে।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্র দেখানোর জন্য অনুরোধ করলে পরিবারের লোকজন জানান, তাঁদের মানসিক অবস্থা ভাল নয়। পরে কাগজপত্র দফতরের কাছে পাঠাবেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিদের কাছে পেয়ে গ্রামের লোকজন তাঁদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

পরে উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘তাঁর সুগার ও রক্তচাপের সমস্যা ছিল বলে জানা গিয়েছে। আমরা নার্সিংহোম থেকে মৃতের চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি খতিয়ে দেখেছি। মৃতের বাড়িতেও গিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁদের মানসিক অবস্থা খারাপ বলে মৃতের চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও নথিপত্র দেখাতে পারেননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন