রক্তের বন্ধনে শুরু যৌথ জীবন

কথায় বলে ‘রক্তের সম্পর্ক’। সেটা যে কী, বৃহস্পতিবার নতুন করে বুঝিয়ে দিলেন ইংরেজির শিক্ষক। রক্ত দিয়ে বাঁধা পড়লেন সাত পাকে। তিনি কৌশিক ঘোষ। সারেঙ্গা হাইস্কুলে ইংরেজি পড়ান। আর একটা পরিচয়ও রয়েছে। তৃণমূলের সারেঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ ঘোষের একমাত্র ছেলে।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

সারেঙ্গা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৬:৩০
Share:

বিয়ের অনুষ্ঠানে রক্তদান শিবির। নিজস্ব চিত্র

কথায় বলে ‘রক্তের সম্পর্ক’। সেটা যে কী, বৃহস্পতিবার নতুন করে বুঝিয়ে দিলেন ইংরেজির শিক্ষক। রক্ত দিয়ে বাঁধা পড়লেন সাত পাকে।

Advertisement

তিনি কৌশিক ঘোষ। সারেঙ্গা হাইস্কুলে ইংরেজি পড়ান। আর একটা পরিচয়ও রয়েছে। তৃণমূলের সারেঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ ঘোষের একমাত্র ছেলে। ২০১০ সালে ধীরেন্দ্রনাথবাবু আততায়ীদের গুলিতে বিদ্ধ হন। জখম অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কৌশিক বলেন, ‘‘বাবাকে রক্ত দিতে কয়েক হাজার মানুষের লাইন পড়ে গিয়েছিল। যাঁরা রক্ত দেওয়ার সুযোগ পাননি, তাঁরা আক্ষেপ করছিলেন। সেই দিন বুঝেছিলাম, রক্তদানের গুরুত্বটা ঠিক কী। সেটা শুধু দায়িত্ব নয়, ভালবাসাও।’’

তাই নতুন জীবনের শুরুয়াত শুধু উদ্‌যাপনের যমকে নয়, পোক্ত একটা ভিতের উপরে শুরু করতে চেয়েছিলেন কৌশিক। ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর নিয়ম করে এলাকায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে আসছেন তিনি। সেই সুবাদে খাতড়া মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কৌশিক বলেন, “ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরাই বিয়ে বাড়িতে রক্তদান শিবির করার প্রস্তাবটা দিয়েছিলেন। শুনেই লুফে নিই।’’

Advertisement

বৃহস্পতিবার প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানে রক্তদান শিবির করা হয়েছিল। মোট কুড়ি জন রক্ত দিয়েছেন সেখানে। প্রথমজন কৌশিক নিজে। তিনি যখন রক্ত দিচ্ছেন, মাথার কাছে দাঁড়িয়ে বাবা এবং নববধূ পূজা। পূজা বলেন, ‘‘আমাকে যখন এইটার ব্যাপারে বলেছিল, খুব ভাল লেগেছিল। একটাই আক্ষেপ, নিজে রক্ত দিতে পারলাম না।”

কৌশিকের মা স্বান্তনাদেবীও খুশি। তিনি বলেন, “বিয়েতে ধুমধাম তো সবাই করে। সেই সমস্ত আনন্দ এক লহমায় ফুরিয়ে যায়। এই ব্যাপারটায় কত মানুষের ভাল হবে! ভাবতেও ভাল লাগছে।’’ বন্ধুর বিয়েতে আনন্দ করার আগে শিবিরে রক্ত দিয়েছেন কৌশিকের দীর্ঘ দিনের বন্ধু অরুণ সিংহ, স্বরূপ দাসেরা। তাঁরা বলেন, “হইচই তো সব বিয়ে বাড়িতেই করি। এ বারে একটা কাজের কাজ করলাম।’’ পাত্রের জেঠতুতো ভাই দেবরাজ ঘোষ বলছেন, ‘‘এই বিয়ে বাড়ির কথা নিশ্চই সবাই মনে রাখবেন।’’

এখানেই শেষ নয় আয়োজনের। সারেঙ্গা ব্লককে নির্মল করার লক্ষ্যে লড়ে যাচ্ছেন কৌশিক। শৌচালয় ব্যবহার, ডেঙ্গি থেকে বাঁচতে মশারি টাঙিয়ে ঘুমানো— এই সমস্ত ব্যাপারেও ফ্লেক্স টাঙিয়ে অভ্যাগতদের সচেতন করেছেন তিনি। স্থানীয় দশজন দুঃস্থ মানুষকে দিয়েছেন মশারি আর কম্বল। ধীরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “নিজের আনন্দ সবার সঙ্গে সুন্দর ভাগ করে নিয়েছে কৌশিক। যুব সমাজের কাছে আমরা তো এটাই চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন