পাল্টা চ্যালেঞ্জ মানসদের

অফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি দেওয়া-সহ কয়েক দফা দাবিতে কুড়মিরা আন্দোলন চালিয়ে আসছে। দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য বুধবারই জঙ্গলমহলের চার জেলায় সড়ক অবরোধ করে আদিবাসী কুড়মি সমাজ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জয়পুর শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:২৪
Share:

জমায়েত: পুরুলিয়ার জয়পুর আরবিবি স্কুল মাঠে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মানস ভুঁইয়ার জনসভা। নিজস্ব চিত্র

আদিবাসী কুড়মি সমাজের দাবিকে নৈতিক সমর্থন দেওয়ার কথা পুরুলিয়ায় এসে জানিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এক সপ্তাহ পরে বৃহস্পতিবার দিলীপবাবুর জনসভা করা সেই জয়পুরের মাঠেই তাঁর করা মন্তব্যকে ঘিরেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যসভার সাংসদ মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘‘কুড়মি সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ‘কুড়মি বোর্ডে’-র প্রস্তাব স্বীকৃতির জন্য রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। দিলীপবাবুদের কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত সেই স্বীকৃতি দিক।”

Advertisement

অফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি দেওয়া-সহ কয়েক দফা দাবিতে কুড়মিরা আন্দোলন চালিয়ে আসছে। দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য বুধবারই জঙ্গলমহলের চার জেলায় সড়ক অবরোধ করে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। রাজনৈতিক মহলের মতে, ওই চার জেলায় কুড়মি সম্প্রদায়ের বিপুল জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখেই ভোটের অঙ্ক কষছে রাজনৈতিক দলগুলি। তা থেকেই পঞ্চায়েত ভোটের আগে কুড়মিদের কাছে টানার প্রতিযোগিতা চলছে।

এ দিন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি কুড়মিদের দাবির প্রতি তাঁদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে জানিয়েছেন। আমরা তো সেই দাবির প্রতি সমর্থন বহু আগেই জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কুড়মিদের জন্য পৃথক বোর্ড গড়ার সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় পাশ করিয়ে ফেলেছেন।” বিজেপি শাসিত কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে রাজ্যের পাঠানো প্রস্তাব অনুমোদনের দায়িত্ব স্বভাবতই বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের উপরে চাপিয়ে দিয়েছেন মানসবাবু।

Advertisement

ভোট লুঠ রুখতে প্রতিরোধের পথ দেখাতে গিয়ে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি তৃণমূল কর্মীদের হাত-পা ভেঙে দিতে বলে গিয়েছিলেন। তার জবাবে পাল্টা মারের কথা অবশ্য শাসকদলের নেতারা বলেননি। যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুশান্ত মাহাতো বিরোধীদের রাজনৈতিক ভাবে মোকবিলা করার আহ্বান জানিয়েছেন। আর মানসবাবু কর্মী বলেছেন, ‘‘প্ররোচনায় পা দেবেন না। ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতির মোকাবিলা করুন।” বিজেপি-র রাজ্য সভাপতির মন্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিরোধী বলে দাবি করে মানসবাবু জানান, প্রয়াত সিপিএম নেতা নকুলবাবুর সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক মতপার্থক্য ছিল ঠিকই। কিন্তু দেখা হলে কখনই তিনি নকুলবাবুকে নমস্কার করে কুশল বিনিয়ম করতে ভোলেননি।

তবে তৃণমূলের নেতারা যাই দাবি করুন না কেন, আগামী পঞ্চায়েত ভোটে শাসকদলের ভরাডুবি নিশ্চিত বলে পাল্টা দাবি করেছেন বিজেপি-র জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী।

পাশেই কংগ্রেসের দখলে থাকা বাঘমুণ্ডি বিধানসভা কেন্দ্র। সেই প্রসঙ্গে এ দিন সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের নির্বাচনী সমঝোতা নিয়ে নিজের পুরনো দলকে বিঁধেছেন কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যাওয়া মানসবাবু। তিনি বলেন, ‘‘দিল্লিতে সোনিয়াজি নিজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে এক সাথে লড়াইয়ের কথা বলছেন। সেখানে রাজ্যে দুই জগাই-মাধাই অধীর কুমার ও মান্নান কুমার বলছেন, মমতা দুর হটো। আর হাত ধরছেন বিমান বসু, সূর্যকান্তবাবুদের। বাম আমলের সাড়ে তিন দশকে এই বামেদের হাতেই হাজার হাজার কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছেন। সব ভুলে দুই জগাই-মাধাই তাঁদেরই হাত ধরছেন!’’

দিলীপবাবুর সভায় গত সপ্তাহে বেশ ভালই ভিড় হয়েছিল। এ দিন তৃণমূলের সভায় তার দ্বিগুণ ভিড় হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। পুলিশের দেওয়া হিসেবেই এ দিন জয়পুরে তৃণমূলের সভায় অন্তত কুড়ি হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল। মাঠ ছাপিয়ে ভিড় উপচে পড়েছিল পাশের রাস্তায়। ভিড়ে ঠাসা মাঠ দেখে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত তৃণমূলের পুরুলিয়ার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, ‘‘বিজেপি ঝাড়খণ্ড ও জেলার সমস্ত প্রান্ত থেকে লোক এনেছিল। আর আমাদের সভা ছাপিয়ে দিয়েছেন শুধু জয়পুর বিধানসভা এলাকার কর্মী-সমর্থকেরাই।’’ এই স্বীকৃতিতে তৃপ্ত জয়পুরের তৃণমূলের বর্ষীয়ান বিধায়ক শক্তিপদ মাহাতো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন