পুজোর ফুলে লক্ষ্মী ফিরেছে কত সংসারে

সেটা ২০১২ সাল। ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের রামভদ্রপুরের একটি পরিবার চার কাঠা জমিতে জবা ফুলের চাষ শুরু করেন। ক্রমে সেই ফুল বিক্রি করে তাঁরা লাভের মুখ দেখেন। এখন জমির পরিমাণ বেড়ে এক বিঘে! এই চার বছরে ওই দুই পরিবারের সঙ্গে জবা চাষে যুক্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবার।

Advertisement

অরুণ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩২
Share:

বাজারে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি।— নিজস্ব চিত্র

সেটা ২০১২ সাল। ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের রামভদ্রপুরের একটি পরিবার চার কাঠা জমিতে জবা ফুলের চাষ শুরু করেন। ক্রমে সেই ফুল বিক্রি করে তাঁরা লাভের মুখ দেখেন। এখন জমির পরিমাণ বেড়ে এক বিঘে! এই চার বছরে ওই দুই পরিবারের সঙ্গে জবা চাষে যুক্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবার। ফুল চাষ করে তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানো দেখে ভাবছে প্রশাসনও। তারা চায়, তারাপীঠ সংলগ্ন গ্রামে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে জবা ফুল-সহ অন্য ফুল চাষে স্থানীয়দের আগ্রহ তৈরি করতে।

Advertisement

চার বছর আগে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, ছোট্ট একটি জমিতে ব্যবসািয়ক ভিত্তিতে জবা ফুলের চাষ শুরু করেন শ্যামপদ ফুলমালি। পরে প্রতিবেশী অমৃতলাল ফুলমালিও ওই চাষে আগ্রহ দেখিয়ে মাঠে নামেন। লাভের মুখ দেখতেই তাঁরা ফুল চাষ করেই আরও কিছু জমি কিনে চাষে জোর দেন। চার কাঠা থেকে জমি বেড়ে হয় এক বিঘে। এখন সেই এক বিঘে জমিতে জবা ফুলের চাষ হচ্ছে। চাষের কাজ করছেন পড়শি কয়েকটি পরিবারের সদস্যেরাও। কেবল জবা নয়, পাশাপাশি কিছুটা এলাকায় গাঁদা ফুলেরও চাষ করেছেন তাঁরা। ফুল চাষিরা জানিয়েছেন, জবা ফুলের চাষ করতে তেমন কোনও খরচ হয় না এবং যে সব এলাকায় গাছগুলি রয়েছে, তার ফাঁকে ফাঁকে লঙ্কা, বেগুন প্রভৃতি চাষ হয়।

‘‘ফুলের চাহিদা দেখে, মেদিনীপুর থেকে সম্প্রতি কিছু গাঁদা ফুলের চারা এনে চাষ শুরু করি। গাঁদা ফুল সাধারণত শীত কালে চাষ হয়। কিন্তু এই বিশেষ জাতের গাঁদা ফুল সারা বছর হয়,’’ বলছিলেন শ্যামপদবাবু। ফুল বিক্রি করা এবং তদারকি করার কাজ করেন আরও কয়েকটি পরিবার। এখন রামভদ্রপুর এলাকাকে জবাফুলের গ্রাম বলেই চেনেন আশেপাশের মানুষজন। শ্যামাপদবাবু ও অমৃতলালবাবু জানান, প্রতিদিন বিকেলে জবা ফুল তুলে বিভিন্ন সাইজের মালা করে ভোর বেলায় তারাপীঠের বিভিন্ন দোকানে দেওয়া হয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তিথিতে ফুলের মালার দামের হেরফের হয়। এখন কৌশিকী অমাবস্যার জন্য মালার বাজার বেশ ভাল। অমৃতলাল বলেন, ‘‘প্রায় দেড় হাজার ফুলের জোগান দিই এখন। আমাকে ছেলেও সাহায্য করে।’’

Advertisement

গ্রামেরই বাসিন্দা ফুলের ব্যবসায় যুক্ত বলরাম বাগদি বলেন, ‘‘কৌশিকী অমাবস্যার জন্য তারাপীঠে ফুলের মালার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। দামও পাওয়া যায়। তা ছাড়া, ফি সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার মালার চাহিদা থাকে।’’ তারাপীঠের এক সেবাইত পুলক চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জবা ফুলের মালা বেশিরভাগই জেলার বাইরে থেকে আসে। এখন রামভদ্রপুর থেকেও ফুলের মালা আসে। এতে কিছুটা সুবিধে হচ্ছে।

ফুল চাষ করে শ্যামপদ, অমৃতলালদের ঘুরে দাঁড়ানোই স্বপ্ন দেখাচ্ছে তারাপীঠ উন্নয়ন পর্ষদকে। সংস্থার চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ময়ূরেশ্বর এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তারাপীঠ লাগোয়া বিভিন্ন গ্রামে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে জবা ফুল-সহ অন্য ফুল চাষের উদ্যোগ হচ্ছে। আশিসবাবু বলেন, ‘‘ফুল চাষে চাষিদের উৎসাহ দিতে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন