আশ্রয়হীন: ঘরছাড়াদের জন্য চলছে রান্না। শনিবার পাড়ুইয়ের মালপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
একটা লোকসভা ভোটের পরে হিংসায় জ্বলে উঠেছিল এই তল্লাট। পাঁচ বছর পরের লোকসভা নির্বাচনের পরে আবার তেতে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে বীরভূমের সেই পাড়ুই!
শুক্রবার রাতে পাড়ুই থানার জিনাইপুর ও গদাধরপুর গ্রামে বিজেপি-র বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। তাদের দাবি, রাতভর গদাধরপুরের তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের সামনে মুড়িমুড়কির মতো বোমা ফেলা হয়। কার্যালয়ে থাকা জিনিসপত্র ও তৃণমূলের বেশ কিছু দলীয় পতাকা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পাশের জিনাইপুর গ্রামে তৃণমূল সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি হামলা চালানোর অভিযোগও ওঠে বিজেপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় তিন জনকে আটক করা হয়েছে। বিজেপি অবশ্য অভিযোগ মানতে চায়নি। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও তুলেছেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশ জানিয়েছে, দু’পক্ষের তরফ থেকেই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
শনিবার সকালে জিনাইপুরে ঢুকতেই দেখা গেল চারদিকে থমথমে ভাব। রাস্তার চারপাশে পড়ে রয়েছে পোড়া বোমার সুতলি, অজস্র ভাঙা ইটের টুকরো। জিনাইপুর ও গদাধরপুরের অনেকগুলি তৃণমূল সমর্থক পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে জিনাইপুরের মালপাড়ায় খোলা আকাশের নীচে গাছের তলায় আশ্রয় নিয়েছে। সেখানেই রান্নাবান্না করে চলছে তাঁদের খাওয়াদাওয়া। তৃণমূল সমর্থক কল্যাণী মাল, সন্ধ্যা মালদের অভিযোগ, ‘‘বিজেপির অত্যাচারে আমরা ঘরছাড়া হয়ে রয়েছি। পুলিশকে জানিয়েও কোনও সাহায্য পায়নি। সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ গ্রামে এসেছে। কিন্তু আমাদের ঘরে ফেরানোর কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি।’’ জিনাইপুরের বাসিন্দা, তৃণমূলের অমরপুর অঞ্চলের যুব সভাপতি পলাশ সূত্রধরের বাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি তাঁর মোটরবাইক ও দু’টি ট্রাক্টর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পলাশের অভিযোগ, তাঁকে মারধর করে বিজেপি-র লোকজন। বাঁচাতে গেলে তাঁর দাদা উজ্জ্বল এবং অন্তঃসত্ত্বা বৌদি অনামিকাকেও মারধর করা হয়।
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের পরে গ্রাম দখলের লড়াইকে ঘিরে বিজেপি-তৃণমূল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জন্য শিরোনামে এসেছিল পাড়ুই। কিছুদিন আগে পর্যন্তও কার্যত বিরোধী-শূন্য থাকলেও সদ্য বিজেপিতে যোগদান করেছেন পাড়ুইয়ের বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা নিমাই দাস। লোকসভা ভোটের ফল বলছে, পাড়ুইয়ের অমরপুর, মঙ্গলডিহি, বাতিকার, কসবা পঞ্চায়েতে বিজেপি-র থেকে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। পাড়ুইয়ে তাই আবার বিজেপি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। সেটাই এখন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের।
পলাশের দাবি, ‘‘বিজেপি গ্রামে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে এলাকা অশান্ত করার চেষ্টা করছে। আবার হামলা হতে পারে, এই আশঙ্কায় আমাদের পরিবারও ঘরছাড়া হয়ে রয়েছে।’’ তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘ওই এলাকার কিছু সিপিএমের দুষ্কৃতী রয়েছে। তারাই বিজেপির পতাকা নিয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। সমস্ত ঘটনা জানিয়ে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’ ঘরছাড়াদের ফেরানোর ব্যবস্থাও তাঁরা নিচ্ছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা অবশ্য দাবি করেন, ‘‘কেউ ঘরছাড়া হয়ে রয়েছেন, এমন খবর আমাদের কাছে নেই। যারা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাদের খোঁজ চলছে।’’ এ দিন সকাল থেকেই গদাধরপুর ও জিনাইপুর গ্রামে পুলিশ টহল দিতে শুরু করেছে।
তৃণমূলের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। পাড়ুই অঞ্চলের বিজেপি সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সম্পাদক শেখ সামাদের দাবি, ‘‘এত দিন তৃণমূল উন্নয়নের নামে গ্রামে গ্রামে চরম অত্যাচার করেছে। তাদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। এখন মানুষেরই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। ওই দুই গ্রামে যা ঘটেছে, তার সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই।’’