Maoist Poster

যুবক-যুবতীদের যোগ দিতে আহ্বান, পুরুলিয়ায় পোস্টার মাওবাদীদের

এই পোস্টার সামনে আসতেই একুশের নির্বাচনের আগে জঙ্গলমহলে ফের কালো মেঘ দেখছেন পুলিশ থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২০ ১৩:০৪
Share:

মাওবাদী পোস্টার। নিজস্ব চিত্র।

নতুন যুবক-যুবতী নিয়োগ করার ডাক মাওবাদীদের। সোমবার পুরুলিয়ার বরাবাজার ও বান্দোয়ান থানা এলাকা থেকে মাওবাদীদের বেশ কিছু পোস্টার, লিফলেট ও ব্যানার উদ্ধার হয়েছে। সাদা কাগজের উপর লাল কালিতে হিন্দিতে লেখা কিছু প্রচারপত্রও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। এ গুলি সামনে আসতেই একুশের নির্বাচনের আগে জঙ্গলমহলে ফের কালো মেঘ দেখছেন পুলিশ থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

Advertisement

এই পোস্টার সামন‌ে আসতেই পুরুলিয়ার মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় লাল সতর্কতা জারি করেছে পুলিশ। জেলার ৯টি মাওবাদী উপদ্রুত থানা, ৫টি ফাঁড়ি-সহ একাধিক জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্যাম্পকে সতর্ক করা হয়েছে। মাওবাদীদের গণমুক্তি গেরিলা ফৌজ এই রাজ্যে যাতে কোনও রকম নাশকতা ঘটাতে না পারে তার জন্য রাজ্য পুলিশের একাধিক বাহিনী ও কেন্দ্রীয় বাহিনী টহলদারি চালাচ্ছে। অভিযান চালানো হচ্ছে জঙ্গলেও।

মাওবাদীদের দক্ষিণ জোনাল কমিটির দু’পাতার ওই প্রচারপত্রে রয়েছে বিগত ১ বছরে হামলার সাফল্য থেকে নতুন রণকৌশল। নতুন যুবক-যুবতীদের যোগদান থেকে শুরু করে বাহিনীর উপর হামলার কথাও উল্লেখ রয়েছে সেখানে। প্রচারপত্রে লেখা রয়েছে, ‘এই মুহূর্তে ক্রান্তিকারি আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুকূল পরিস্থিতি। তাই দক্ষিণ জোনাল কমিটির আহ্বানে ভয়, ভীতি, ত্যাগ করে এবং এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে সামনের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিন। আর মনে প্রাণে গণমুক্তির মহাসংঘর্ষে নিজেদের জীবন সঁপে দিতে প্রস্তুত হন’।

Advertisement

মাওবাদীদের ওই সব পোস্টারে আগামী দিনে কাজের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘আমাদের বুঝতে হবে শত্রু নিজেদের ধাঁচে লড়ে। আর আমরা নিজেদের ধাঁচে। এই পদ্ধতিতেই চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে হবে। তার রূপরেখা তৈরী করতে হবে। এবং শত্রুর চতুর্মুখী আক্রমণের জবাব দিতে বুদ্ধি খাটিয়ে গেরিলা পদ্ধতিতে লড়াই করতে হবে। শত্রুপক্ষকে বিস্মিত করে তাঁদের সাপ্লাই লাইন নষ্ট করতে লাগাতার ছোট, মাঝারি অপারেশন করতে হবে। পাশাপাশি চারদিক থেকে আক্রমণের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে নিজেদের সীমিত শক্তি নিয়েই দুর্বল স্থানে অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত গতিতে আচমকা আঘাত হানতে হবে’।

কর্মপন্থার পাশাপাশি গ্রামে গ্রামে সংগঠন বাড়ানোর ডাকও দেওয়া হয়েছে। ‘গ্রামে-গ্রামে, এলাকায়-এলাকায় আত্মরক্ষা দল, গণমিলিশিয়া গঠন করতে বিশেষ নজর দিতে হবে। এবং জল-জঙ্গল-জমি নিয়ে কৃষি আন্দোলন-সহ ভূমি অধিগ্রহণ আইন নিয়ে সংগ্রামশীল আন্দোলন চলবে।’ ফ্যাসিবাদী আক্রমণ ঠেকানোর ডাকও দেওয়া হয়েছে ওই প্রচারপত্রে। এ সবের পাশাপাশি ২ থেকে ৮ ডিসেম্বর সপ্তাহব্যাপী যুবক-যুবতীদের দলে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছে তারা। এ নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার সুপার এস সিলভা মুরুগন বলেছেন, ‘‘'সমস্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরিয়া ডমিনেশন ও অপারেশন এই সব এলাকায় চালানো হচ্ছে।’’ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক আধিকারিকদের দাবি, ‘‘একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বে মাওবাদীদের এমন আহ্বান সত্যি ভাবার বিষয়। কারণ, বিগত কয়েক বছরে এরকম পোস্টার পাওয়া যায়নি।’’ তাহলে কি এই কয়েক বছরে বাংলার জঙ্গলমহলে পায়ের তলায় মাটি ফিরে পেল মাওবাদীরা? তবে হিন্দিতে ওই প্রচারপত্র এবং প্রেরক হিসাবে দক্ষিণ জোনাল কমিটির নাম থাকায় একটা বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। ঝাড়খণ্ডে বসে বাংলায় সংঠন তৈরিতে জোর দিয়েছে মাওবাদীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন