টাকা নেই, একটা জুতো চায় প্রকাশ

দৌড়ের পথের মতোই তাঁর জীবনের পথও দুর্গম। সম্বল বলতে অদম্য জেদ। সেই জেদ দিয়েই পায়ের নীচে বিছিয়ে থাকা পথ ক্রমশ জয় করতে করতে ছুটে চলেছে রঘুনাথপুর থানার মৌতোড় গ্রামের প্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০০
Share:

অবিচল: প্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

দৌড়ের পথের মতোই তাঁর জীবনের পথও দুর্গম। সম্বল বলতে অদম্য জেদ। সেই জেদ দিয়েই পায়ের নীচে বিছিয়ে থাকা পথ ক্রমশ জয় করতে করতে ছুটে চলেছে রঘুনাথপুর থানার মৌতোড় গ্রামের প্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

বাবা সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রামে গ্রামে ঘুরে কেক, পাঁউরুটি ফেরি করেন। এক চিলতে ঘরে টানাটানির সংসার। সেখান থেকে ৮ এপ্রিল প্রকাশ যাচ্ছে মণিপুরের ইম্ফলে, আলট্রা ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে। শক্ত প্রতিযোগিতা। কিন্তু তা নিয়ে মোটেও ঘাবড়াচ্ছে না বছর বাইশের ওই যুবক। প্রশ্নটা যতক্ষণ অনুশীলন আর দক্ষতার, প্রকাশ আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু জুতো, ব্যাগ, আলো মিলিয়ে নেই নেই করেও অনেক টাকা দরকার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে। সেই খরচ কী ভাবে কুলিয়ে উঠবে, সেই ভাবনা এখন তাঁর চিন্তা জুড়ে।

স্কুলে পড়ার সময়ে ছুটতে ছুটতে চলে আসতেন রঘুনাথপুর শহরে। তার পরে একদিন কানে আসে ম্যারথন দৌড়ের কথা। আগ্রহ গড়ে ওঠে ক্রমশ। এখন প্রকাশের ঝুলিতে অনেক সাফল্যের স্মারক। আলট্রা ম্যারাথনেও সাফল্যের নজির রয়েছে তাঁর। প্রথমটা ছিল গুজরাটের আমেদাবাদে। ৯২ কিলোমিটার দৌড়ে ষষ্ঠ স্থান পেয়েছিলেন প্রকাশ। নয়া দিল্লির আলট্রা ম্যারাথনে ৮৬ কিলোমিটার দৌড়ে জুনিয়র বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গত ফ্রেবুয়ারিতে গুজরাটের ঢোলাভেরিতে আলট্রা ম্যারাথনে ৫১ কিলোমিটার দৌড়ে চেষ্টা করেও সফল হতে পারেননি। সরঞ্জাম বড় বালাই। প্রকাশ বলেন, ‘‘ওই দৌড়ের ৪১ কিলোমিটার ছিল পাথুরে রাস্তায়। বাকি দশ কিলোমিটার কচ্ছের রণে। বালি পা চেপে ধরছিল। আমার ভাল জুতো ছিল না।’’

Advertisement

দৌড়ের টানে উচ্চমাধ্যমিকের পরে পড়াশোনা থামিয়ে পুরোদস্তুর পথে নেমেছিল প্রকাশ। দিনরাত অদম্য অনুশীলন করে যেতে পারে সে। কিন্তু নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে প্রায় হাজার তিরিশেক টাকার জুতো কেনার কথা ভাবতেও পারে না ওই যুবক। সম্প্রতি ফের কলেজে ভর্তি হয়েছে প্রকাশ। চলছে দৌড়ও। গত নভেম্বরে তিনি গিয়েছিলেন কলকাতায়, একটি বেসরকারি সংস্থা আয়োজিত ম্যারাথন দৌড়ে যোগ দিতে। সাফল্যের সঙ্গে বাড়ি নিয়ে এসেছিলেন আরও একটা হাতছানি। ইম্ফলের আলট্রা ম্যারাথন। ৪২ কিলোমিটারেরও বেশি পথ। দুর্গম। কষ্টকর।

কিন্তু সেই পথ অনেক দূর। সমস্ত কথা শুনে রঘুনাথপুর থানার ওসি পঙ্কজ সিংহ ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিমানের টিকিটের ভাড়া জোগাড় করে দিয়েছেন। কিন্তু প্রকাশ বলেন, ‘‘মণিপুরে প্রতিযোগিতা হবে পার্বত্য এলাকায়। সেখানে দৌড়ানোর মতো ভাল জুতো, ব্যাগ নেই। তবে লড়াইটা ছাড়ব না। আশা করছি ভাল করতে পারব।”

এ বারের লড়াইটা শুরু সরকারি বা বেসরকারি সাহায্যের খোঁজ দিয়ে। প্রকাশের বাবা সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই দৌড়টা ওর কাছে নেশার মতো। কোনদিনই আপত্তি করিনি। কিন্তু আমাদের সংসারের যা অবস্থা তাতে ওকে কোন সাহায্যই করতে পারি না।” মঙ্গবার সাহায্যের জন্য প্রকাশ গিয়েছিল কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার কাছে। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘ছেলেটা যথেষ্ট প্রতিভাবান। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রীকে ওর কথা জানানোর চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন