Marigold

ফুল ফুটিয়ে স্বনির্ভরতার তালিম বিষ্ণুপুরের গ্রামে

প্রকাশ কৃষি সমবায় সমিতি সূত্রে জানানো হয়েছে, তাদের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ৫২৭টি মহিলা স্বনির্ভর দলের সদস্য কাজ করছেন। তাঁরা নিজেদের পারিশ্রমিক জমিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকার পুঁজিও  তৈরি করেছেন। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২০ ০৪:০৯
Share:

ফুলের-ফসল: পানরডাঙর গ্রামের গাঁদা ফুলের খেতে। ছবি: শুভ্র মিত্র

তাঁরা পরিশ্রমী। সঞ্চয়ীও। বছরভর ধান-আলু সহ নানা রকমের ফসলের চাষ করেন। বিষ্ণুপুর ব্লকের গুমুট, পানরডাঙর, উলিয়াড়া, নিমারডাঙা, নারায়ণপুর, প্রকাশ গ্রামের মহিলারা এ বার গাঁদা ফুল চাষের পাঠ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার নতুন দিশা খুঁজছেন। তাঁদের প্রশিক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে প্রকাশ কৃষি সমবায় সমিতি।

Advertisement

প্রকাশ কৃষি সমবায় সমিতি সূত্রে জানানো হয়েছে, তাদের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ৫২৭টি মহিলা স্বনির্ভর দলের সদস্য কাজ করছেন। তাঁরা নিজেদের পারিশ্রমিক জমিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকার পুঁজিও তৈরি করেছেন।

ওই সমবায়ের ম্যানেজার তপন গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ‘নাবার্ড’-এর আর্থিক সাহায্যে বাঁকুড়া জেলা সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের উদ্যোগে উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ৬০ জন মহিলাকে দু’টি পর্যায়ে হাতে-কলমে ফুল চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন জেলা কৃষি দফতরের বিষ্ণুপুর মহকুমার সহ-কৃষি অধিকর্তা রতন মুর্মু এবং বিষ্ণুপুর ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা তাপস ঘোষ।

Advertisement

প্রথম পর্যায়ের শিবিরে যোগ দিয়েছেন গুমুট গ্রামের শ্যামলী বারিক, রিঙ্কু কর, প্রকাশ গ্রামের শোভা ভাণ্ডারিরা। তাঁরা জেনে নিচ্ছিলেন বছরের কোন সময়ে, গাঁদার কোন জাতের চারা জমিতে বসানো উচিত, পরিচর্চা কী ভাবে করতে হবে।

সমিতির ম্যানেজার বলেন, ‘‘২০১৯-’২০ আর্থিক বর্ষে পরীক্ষামূলক ভাবে উলিয়াড়া গ্রামের দুলি বাগদিকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। এক বিঘা জমিতে তিনি গাঁদা ফুল চাষে ভাল লাভ করেন। দুলিদেবীর সাফল্যে সমিতি উৎসাহিত হয়ে এ বার আরও অনেক মহিলাকে গাঁদা ফুল চাষে নামাতে উদ্যোগী হয়েছে।’’

বিষ্ণুপুর ব্লকের কৃষি দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা তাপস ঘোষ বলেন, ‘‘উলিয়াড়া পঞ্চায়েতের ওই এলাকার মাটি এবং আবহাওয়া গাঁদা ফুল চাষের উপযোগী। প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে গত ১৫-২০ বছর বিকল্প অর্থকরী ফসল হিসাবে গাঁদা ফুলের চাষ হয়ে আসছে।’’ তিনি জানান, ‘আতমা’ প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁদের উন্নত জাতের ফুলের চারা, ওষুধ ও অণু-খাদ্য দেওয়া হয়। মহিলারাও যাতে ফুল চাষে স্বনির্ভর হন, আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হন, সে জন্য গাঁদা ফুল চাষে বেশি করে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাপসবাবু।

তিনি জানান, প্রশিক্ষণ শিবিরে অভিজ্ঞ গাঁদা ফুল চাষিদের সঙ্গে ১০ জন নতুন চাষিও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাপসবাবুর আশ্বাস, বারো মাসই গাঁদা ফুল চাষ সম্ভব। বাজারও ভাল।

পানরডাঙরের অভিজ্ঞ গাঁদাফুল চাষি ভৈরব হাত ছিলেন প্রশিক্ষণ শিবিরে। তিনি বলেন, ‘‘কেজি প্রতি গাঁদাফুলের পাইকারি দাম ৭০ টাকা। আবার আড়াই ফুটের ২০টি মালা বিক্রি করে ২০০ টাকা দামও পাওয়া যায়। ধান, আলুর সঙ্গে গাঁদা ফুল চাষও আমাদের এলাকায় অন্যতম অর্থকরী ফসল হয়ে উঠেছে।’’

তাঁর মতো এলাকার অভিজ্ঞ গাঁদাফুল চাষিরা ফুল সংরক্ষণের জন্য একটি ছোট হিমঘর এবং ফুল চাষকে শস্যবিমার আওতায় আনার দাবি তুলেছেন। তা হলে ফুল চাষে অনেকের আগ্রহ বাড়বে বলে তাঁদের আশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন