Market

ফাটা ছাদ, জল পড়ে পুর-বাজারে

ঝালদা শহরের আনাজ বাজার বলতে মূলত দু’টি। একটি ঝালদা রেলওয়ে স্টেশন লাগোয়া, অন্যটি ঝালদা বাসস্ট্যান্ডের কাছে মিউনিসিপ্যালিটি আনাজ বাজার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝালদা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২০ ০১:৪০
Share:

বেহাল: ঝালদা শহরের আনাজ বাজার। নিজস্ব চিত্র

পুরভোট আসন্ন। এই অবস্থায় পুরপরিষেবা নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভকে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বিরোধীরা। রাজ্যের ক্ষমতায় যেখানে তৃণমূল, সেখানে সে দলের পরিচালিত ঝালদা পুরসভা কেন পুরবাজারের হাল ফেরাতে পারেনি— প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য বাজার সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন।

Advertisement

ঝালদা শহরের আনাজ বাজার বলতে মূলত দু’টি। একটি ঝালদা রেলওয়ে স্টেশন লাগোয়া, অন্যটি ঝালদা বাসস্ট্যান্ডের কাছে মিউনিসিপ্যালিটি আনাজ বাজার। প্রথমটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হলেও, দ্বিতীয়টি পুরোপুরি ঝালদা পুরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন। সেখান থেকে কর নেয় পুরসভা। ওই দুই বাজার ছাড়া, শহরের বাঁধাঘাট, স্টেশন যাওয়ার রাস্তার মোড়েও দিনের বিভিন্ন সময়ে ছোট আকারে আনাজের বিক্রিবাটা হয়ে থাকে। তবে বড় বাজার বলতে শহরে মূলত ওই দু’টিই।

এক প্রবীণ বাসিন্দার কথায়, আগে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যত্রতত্র আনাজ বিক্রি হওয়ায় নানা সমস্যা হত। সমস্যা সমাধানে ২০১০ সালে পুরসভার ‘বিএমএসও’ তহবিল থেকে তৈরি করা হয় মিউনিসিপ্যালিটি আনাজ বাজার। ওই বছর ৪ এপ্রিল তৎকালীন পুরপ্রধান তপন কান্দুর হাত দিয়ে দরজা খুলে দেওয়া হয় ওই আনাজ বাজারের।

Advertisement

তবে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার এবং উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শহরের প্রাণকেন্দ্রে থাকা ওই বাজার বেহাল হতে শুরু করেছে বলে অভিযোগ। তাই বাজারটির আমূল সংস্কারের প্রয়োজন বলে দাবি করে আসছেন বাসিন্দারা। ওই বাজারে গিয়ে দেখা গিয়েছে, টিনের ছাউনির বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি নামলে বিক্রেতাদের ছাতা মাথায় আনাজ বিক্রি করা ছাড়া, উপায় থাকে না। অনেকে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে মাথার উপর খাটিয়ে নেন ত্রিপল।

এখানেই শেষ নয়। বাজারের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গিয়েছে, আবর্জনার স্তূপ। তাই বাজার সাফাই নিয়েও ক্ষোভ জমছে এলাকায়। সেই ক্ষোভকে কাজে লাগাতে মাঠে নেমেছেন বিরোধীরা। ঝালদা শহর কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি বিপ্লব কয়াল অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘বাজারটি পুরোপুরি বেহাল হয়ে পড়েছে। সব জেনেও পুরসভা হাত গুটিয়ে বসে আছে। এত মানুষজনের ভোগান্তি, কিন্তু তাতে পুরকর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই।’’ এমনকি, বাজার সংস্কারের জন্য বারবার পুরসভায় জানিয়েও ফল মেলেনি বলে অভিযোগ ওই কংগ্রেস নেতার।

তবে অভিযোগ মানতে চায়নি তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড। তাদের বক্তব্য, বিরোধীরা ভোটে নিজেদের ফায়দা তুলতে ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগ তুলে বাজার গরম করতে চাইছে। ঝালদার পুরপ্রধান তৃণমূলের প্রদীপ কর্মকারের দাবি, ‘‘বাজার সংস্কারে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু করার চেষ্টা চলছে।’’

বাজারের জীর্ণ অবস্থার কথা বলতে গিয়ে ওই বাজারের আনাজ বিক্রেতা অসীম দে বলেন, ‘‘ছাউনি ফেটে গিয়েছে। বৃষ্টি পড়লে আমরা ছাতা মাথায় আনাজ বিক্রি করি। অনেকে নিজের উদ্যোগে ত্রিপলও টাঙিয়ে নিয়েছেন।’’ বাজারের কোণে মাছ বিক্রির দোকান রয়েছে কাঞ্চন ধীবরের। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই ভুক্তভোগী। বাজারের সংস্কার করা খুব দরকার।’’

প্রায় দিন ওই বাজারে আনাজ কিনতে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক মিলন মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু সংস্কার করে দিলেই সমস্যা মিটবে না। ওই বাজার যাতে নিয়মিত সাফাই করা হয়, তাও পুরপ্রশাসনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। বাজারের কোণায় কোণায় নোংরা জমে থাকে।’’

তবে পুরপ্রধানের দাবি, তাঁরা হাতে গোনা সাফাই কর্মী নিয়েও শহরকে জঞ্জালমুক্ত করতে সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই বাজারে সাফাইয়ের ক্ষেত্রেও এ বার থেকে নজরদারি চালানো হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। তবে কংগ্রেস থেকে শুরু করে অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের বক্তব্য, ‘‘কাজের কাজ কিছুই হবে না। নির্বাচন আসছে বলে ক্ষমতাসীন বোর্ড এখন উন্নয়নের বেলুন ফুলিয়ে মানুষকে বোকা বানাতে চাইছে। ‘ফাঁকা’ প্রতিশ্রুতিতে লাভ হবে না বলে মত তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন