দৃষ্টির বাধা পেরিয়ে অগ্নিসাক্ষী যুগলের

সব বাধা পেরিয়ে চার হাত এক হল বীরভূমের সুমিত ঘোষ, মেদিনীপুরের প্রতিমা মাহাতের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সদাইপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০২:৪৬
Share:

বন্ধন: বিয়ের পরে। নিজস্ব চিত্র

আলো পুরোপুরি মুছে গিয়েছে এক জনের চোখে। অন্য জনের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ।

Advertisement

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ঘিরে দু’জনের দুনিয়া। প্রতিবন্ধকতা ছিল দূরত্বেও। কিন্তু সম্পর্কে পাঁচিল তুলতে পারল না কোনও কিছুই। বৃহস্পতিবার তার সাক্ষী থাকল বক্রেশ্বরধাম।

সব বাধা পেরিয়ে চার হাত এক হল বীরভূমের সুমিত ঘোষ, মেদিনীপুরের প্রতিমা মাহাতের।

Advertisement

একে অন্যকে কথা দিয়েছিলেন আজীবন পাশে থাকার। সেই প্রেম পরিণতি পেল এ বার। মনের মানুষকে কাছে পেয়ে খুশি দু’জনেই। খুশি তাঁদের পরিবারও।

জন্ম থেকেই ডান চোখে দৃষ্টিশক্তি ছিল না সদাইপুরের আদুরিয়া গ্রামের সুমিতের। অল্প আলো পৌঁছত বাঁ চোখে। দু’ছেলের মধ্যে ছোট সুমিতকে সিউড়ির দৃষ্টিশক্তিহীনদের স্কুলে ভর্তি করেন কিঙ্কর ঘোষ। এক দুর্ঘটনায় মাধ্যমিক পরীক্ষার পর দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারান সুমিত। মেদিনীপুরের কলাইকুণ্ডার প্রত্যন্ত গ্রামে থাকতেন প্রতিমা। বরাবরই তাঁর চারপাশ ঝাপসা। হুগলিতে দৃষ্টিহীনদের একটি স্কুলে মেয়েকে ভর্তি করেন কৃষিজীবী বিমল মাহাত।

সুমিতের সঙ্গে পরিচয়ের সেটাই ছিল অনুঘটক।

সুমিত জানান, ২০১৪ সালে মাধ্যমিকের আগে কলকাতায় একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রতিমার সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। ঝাপসা চোখেই প্রথম দেখায় প্রতিমাকে ভাল লেগেছিল তাঁর। হাবভাবে সে কথা বলতে সাড়া মিলেছিল। এক জন থাকতেন সিউড়িতে। অন্য জন হুগলিতে। কিন্তু আলাপচারিতায় ছেদ পড়েনি। ২০১৬ সালে দু’জনে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। ভাল ফলও করেন। মাধ্যমিকের পরে ‘বেহালা ব্লাইন্ড স্কুল’-এ ভর্তি হন প্রতিমা। বছরের দু’মাসের ছুটির অপেক্ষায় থাকতেন প্রতিমা। তখনই সামনে সাক্ষাতের সুযোগ মিলত তাঁদের।

একে অন্যকে প্রয়োজন সে কথা কয়েক মাস আগে তাঁরা জানান নিজের নিজের বাড়িতে। প্রশ্নের মুখেও পড়েন। কী ভাবে সংসার চালাবেন সুমিত? প্রতিমার দৃষ্টিশক্তিও যে ক্ষীণ। কী ভাবে চলবে জীবন? দুই পরিবারই অবশ্য শেষে সন্তানদের ইচ্ছাই মেনে নেয়। চার হাত এক করতে উদ্যোগী হন মদন ঘোষ, তুলসী দাস, নিতাই চক্রবর্তীর মতো আত্মীয়, প্রতিবেশীরা। তাঁরা বলছেন— ‘এমন বিয়ের সাক্ষী থাকতে পেরে ভাল লাগছে।’

এখন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন সুমিত। তিনি বলছেন, ‘‘সামনে যা আসবে তা মেনে নিতেই হবে। কলকাতা থেকে ধূপকাঠি নিয়ে এসে দোকানে দোকানে বিক্রি করে রোজগারের চেষ্টা করছি। কোনও ভাবে ঠিক চালিয়ে নেব। ওকে ছাড়তে পারব না।’’ প্রতিমার কথায়, ‘‘সামান্য হলেও এখনও কিছুটা আলো চোখে আসে। তা দিয়েই ওর পাশে দাঁড়াব। গোটা জীবন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন