ছাত্রী আবাসের চার তলা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল এক ঠিকা শ্রমিকের। বাঁকুড়া মেডিক্যালের ছাত্রী আবাসের লিফটের কাজের সময় বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত শ্রমিক রবিউল হক (৩২) বারাসতের বাসিন্দা। এই দুর্ঘটনা শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
সম্প্রতি বাঁকুড়া মেডিক্যালের ওই ছাত্রী আবাসে লিফটের কাজ শুরু করেছে জেলা পূর্ত (সিভিল) দফতর। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে বাঁশের মাচার উপরে দাঁড়িয়ে রবিউল চার তলায় কাজ করছিলেন। হঠাৎই পা ফস্কে তিনি নীচে পড়ে যান। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে আনা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই। ঘটনা হল, জেলার বেসরকারি কলকারখানা গুলিতে প্রায়ই কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া উঁচুতে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় শ্রমিকদের। অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুও ঘটেছে। এই ধরনের ঘটনার পরে প্রায় প্রতিবারই প্রশাসনের তরফে কারখানাগুলিকে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক হতে বলা হয়। তবে এ বার একই ভুল দেখা গিয়েছে প্রশাসনের কাজেই। যা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে।
রবিউলের সহকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, ঘটনার সময় তাঁর মাথায় হেলমেট বা পা ফস্কে গিয়েও ঝুলে গিয়ে রক্ষা পাওয়ার জন্য শ্রমিকদের কোমরে যে দড়ি বাঁধা থাকে তার কিছুই ছিল না। রবিউল চার তলা উপর থেকে একেবারে লিফটের গর্তে আছড়ে পড়েন। তাঁর মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর চোট লাগে। তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের আক্ষেপ, নিরাপত্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া থাকলে হয়তো, দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।
শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কেন নজরদারি চালায়নি পূর্ত দফতর? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মেলেনি ওই দফতর থেকে। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘একটি ঠিকা সংস্থাকে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে ওই ঠিকা সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’ এ দিন বারবার চেষ্টা করেও ঠিকা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। দিনভর কাজও বন্ধ ছিল ওই ছাত্রী আবাসে।
ঘটনাটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। মৌমিতাদেবী বলেন, ‘‘উঁচু জায়গায় কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকদের ঠিক কী কী নিরাপত্তা নেওয়ার নিয়ম রয়েছে, তা নিয়ে শ্রম দফতরের সঙ্গে আলোচনা করব। ওই নিয়ম যাতে মানা হয়, তার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হবে।’’
ঘটনা হল, বাঁকুড়া মেডিক্যাল-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরেও নির্মাণ কাজ চলাকালীন উঁচুতে কাজ করতে গিয়েও শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। এই ঘটনা রুখতে পরিদর্শনে নামার কথাও জানিয়েছেন পূর্ত (সিভিল) দফতরের ওই কর্তা। পুলিশ জানিয়েছে, শ্রমিকের দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।