রাতে নিরাশ্রয় কে, খুঁজে উষ্ণতা পৌঁছে দিলেন ওঁরা

 কেউ স্কুল পড়ুয়া, কেউ বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। দলে রয়েছেন বেকার থেকে সরকরি চাকুরে, ছাপোষা গৃহবধূও। কাজ ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য তাঁদের একটাই— আর্তের পাশে দাঁড়ানো। শুক্রবার কনকনে রাতে তাই তাঁরা দল বেঁধে মোটরবাইকে বিষ্ণুপুর শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা চষে খোলা আকাশের নীচে শুয়ে থাকা মানুষদের কাছে পৌঁছে দিলেন কম্বলের উষ্ণতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২৬
Share:

পথে-পথে: সংগঠনের সদস্যেরা, শুক্রবার রাতে। ছবি: শুভ্র মিত্র

কেউ স্কুল পড়ুয়া, কেউ বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। দলে রয়েছেন বেকার থেকে সরকরি চাকুরে, ছাপোষা গৃহবধূও। কাজ ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য তাঁদের একটাই— আর্তের পাশে দাঁড়ানো। শুক্রবার কনকনে রাতে তাই তাঁরা দল বেঁধে মোটরবাইকে বিষ্ণুপুর শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা চষে খোলা আকাশের নীচে শুয়ে থাকা মানুষদের কাছে পৌঁছে দিলেন কম্বলের উষ্ণতা।

Advertisement

অন্য কিছু করার ভাবনা নিয়েই এক বছর আগে বিষ্ণুপুর শহরের কিছু ছেলেমেয়ে তৈরি করেছেন ‘বিষ্ণুপুর প্রয়াস’ নামের একটি সংগঠন। বন্যাপীড়িতদের উত্তরবঙ্গের মানুষজনের কাছে খাবার, বেবিফুড, জামাকাপড় নিয়ে তাঁরা গিয়েছিলেন। দীপাবলিতে শব্দবাজি না ফাটিয়ে আলোর উৎসব করার ডাক দিয়ে তাঁরা পথে নেমেছিলেন। এ বার নিরাশ্রয় মানুষজনের পাশে দাঁড়ালেন তাঁরা।

সংগঠনের সম্পাদক প্রসেনজিৎ দত্তর কথায়, ‘‘কত মানুষ দোকানের ছাউনির নীচে, গাছতলায়, রেল স্টেশনের প্ল্যাটর্ফমে ঠান্ডায় কুঁকড়ে রাত কাটান। রাতে স্টেশন বা বাসস্ট্যান্ডে নেমে ঠান্ডায় যখন আমরা কী ভাবে বাড়ি ফিরব বলে দুর্ভাবনায় থাকি, সেই সময় কাঁপতে কাঁপতে রিকশাচালকেরা আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান। শীতের রাতে কষ্ট পাওয়া এই মানুষগুলোকে গরম পোশাক দেওয়ার জন্যই আমরা বেড়িয়ে পড়েছি।’’

Advertisement

বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী বর্ষা পরামানিক, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সৈকত চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁরা ৩৫ জন সদস্য প্রথমে নিজেদের টাকা জড়ো করেন। তারপরে চেনা-অচেনা লোকজনের কাছ থেকে তাঁরা আর্থিক সাহায্য নেন। কার্তিক দে, দিল মহম্মদ খান বলেন, ‘‘শুধু টাকাই নয়, অনেকে নিজেদের বাড়তি গরম পোশাকও আমাদের দিয়েছেন।’’ তাঁদের উদ্যোগের কথা শুনে বিষ্ণুপুর থানার এক তরুণ অফিসারও সস্ত্রীক শুক্রবার রাতে পথে বেরিয়ে পড়েছিলেন।

গভীর রাতে হাতে কম্বল পেয়ে অবাক চোখে কেঁদে ফেলেন বিষ্ণুপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শুয়ে থাকা এক ভবঘুরে। মৃদু স্বরে বলেন, ‘‘ঠান্ডা হাওয়া যেন হাড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ছে। কম্বলে শরীরটা গরম হয়ে গেল।’’ রসিকগঞ্জে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন রিকশাচালক জগন্নাথ গোস্বামী। কম্বল হাতে পেয়ে বলেন, ‘‘গরীব মানুষের কথা ভাবার লোক এখনও রয়েছে!’’

সংগঠনের এক সদস্য বলেন, ‘‘মাইক ফুঁকে, মঞ্চ বেঁধে, একে ওকে ডেকে বস্ত্র বিতরণ করলে, দেখেছি অনেক সময় সত্যি যাঁর প্রয়োজন, তার হাত পর্যন্ত তা পৌঁছয় না।’’ তাই রাতের অন্ধকারে স্টেশন, ঝাপড় মোড়, রসিকগঞ্জ, পোকাবাঁধ পাড়, রঘুনাথসায়ের ঘুরে লোক খুঁজে গরম পোশাক তুলে দিয়ে ওঁরা যখন বাড়িমুখো হলেন, পুব আকাশে তখন নতুন দিনের সূর্য উঠছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন